গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ার জন্য ৪টি বিষয়ে নজর দিন (১ম পর্ব)

প্রকাশিতঃ 22 September, 2021, দেখা হয়েছেঃ 8,594 বার

গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করবেন, স্বপ্ন অনলাইনে ভাল ক্যারিয়ার গড়বেন। অনেক আয় করবেন। যেহেতু ইনকাম হবে অনেক, সেজন্য শিখতে গিয়ে ইনভেস্টও করলেন প্রচুর। কারন ভাল কোন প্রতিষ্ঠানে কাজ শিখতে হলে খরচটাও বড় পরিমানে করতে হয়। কাজ শিখলেই কি আপনার জন্য আয় নিশ্চিত হয়ে গেল? আসলে যখন কাজ শিখেছেন, তখন শুধু সফটওয়্যারের টুলস ব্যবহার শিখেছেন কিন্তু ডিজাইন শিখেননি।

 

Graphic-Designer2

গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে সফল ক্যারিয়ার গড়ার জন্য নিচের ৪টি বিষয়ে নজর দিতে হবে।

১। অভিজ্ঞ কোন ব্যাক্তি কিংবা অভিজ্ঞ কোন প্রতিষ্ঠান হতে গ্রাফিকস প্রশিক্ষণ নিতে হবে।

২। আপনার কাজের মানের (ক্রিয়েটিভিটি) উন্নতি

৩। নিজের ডিজাইনের কাজসহ ভাল মানের পোর্টফলিও তৈরি।

৪। ডিজাইনার হিসেবে নিজের পরিচিতি (ব্রান্ড) তৈরি।

এ ৪টি বিষয়ে সফল হলেই গড়তে পারবেন একটি সফল ক্যারিয়ার।

১নং বিষয়টি আমার আজকের পোস্টে আলোচনা করবনা। কাজ শিখতে পারেন অনলাইন থেকে। ইউটিউবে প্রচুর টিউটোরিয়াল পাওয়া যায় এছাড়া বাংলাতেও টিউটোরিয়াল পাওয়া যায়। কারও কাছ থেকে ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি কিংবা কোন ভাল প্রতিষ্ঠান হতে কাজ শিখতে পারেন। সেইক্ষেত্রে যার কাছ থেকে শিখবেন, তার নিজের করা ডিজাইনগুলো আগে দেখে নিবেন এবং অবশ্যই কাজের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জেনে নিবেন।

আমার আজকের পোস্টের আলোচনার বিষয় ২, ৩, ৪ নং বিষয়টি।

 

কাজের মানের (ক্রিয়েটিভিটি) উন্নতির পদ্ধতিঃ

গ্রাফিকসে কাজে ক্রিয়েটিভিটি সবচাইতে বড় বিষয়। খুব কম মানুষই আছে, যারা জন্মগতভাবে অনেক ক্রিয়েটিভ। বেশিরভাগকেই সাধনা করে ডিজাইন সেন্স বৃদ্ধি করতে হয়। এ সাধনা হচ্ছে, বেশি বেশি করে ভাল ডিজাইন দেখা। হুম, এটা ঠিক যে, ভাল ভাল ডিজাইন দেখলে ক্রিয়েটিভিটি বাড়ে। কিন্তু এটাও বাস্তব সত্য, শুধু দেখলেই ভাল কনসেপ্ট তৈরি হয়ে যায়না। কোন প্রজেক্টে কাজ করলে, সেই প্রজেক্টটি সম্পন্ন করার জন্য যদি ডিজাইন দেখা হয়, আর সাথে সাথে সেগুলো থেকে পাওয়া কনসেপ্ট দিয়েই ডিজাইন প্রজেক্টটি সম্পন্ন করা হয়, তাহলে কনসেপ্ট বৃদ্ধি পাবে খুব দ্রুত। আর সেজন্য ডিজাইন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আয় সম্পর্কিত মার্কেটপ্লেসগুলোতে কাজ করতে পারেন। এরকম দুটি মার্কেটপ্লেসের নাম হচ্ছেঃ 99designs.com, freelancer.com/contest/

এ টাইপ মার্কেটপ্লেসগুলোর সুবিধা হচ্ছে,

–      এখানে আপনার প্রোফাইল নতুন কিংবা পুরানো, এভাবে কোন মানদন্ড নেই। নতুন কিংবা পুরানো যে কেউ প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহন করতে পারে, এবং সবারই জিতার সমান সম্ভাবনা থাকে।

–      প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহনকারী অন্যদের ডিজাইনও দেখার সুযোগ থাকার কারনে নিজের ভিতর ডিজাইন কনসেপ্ট তৈরি হবে।

–      যদি এখানে কোন ডিজাইনে জিততে পারেন, তাহলে অন্য যেকোন মার্কেটপ্লেসগুলো থেকে বেশি আয় করা যায়। যেমন, ওডেস্কে একটি লোগো ডিজাইনের কাজ করলে পাওয়া যায় ২৫-৫০ ডলার, অন্যদিকে 99designs.com এ একটি লোগো ডিজাইন প্রতিযোগিতাতে জিতলে পাওয়া যায় ৩০০ ডলার।

ডিজাইন প্রতিযোগীতার সাইটগুলোতে আয় বেশি হলেও সেটাকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেওয়া সম্ভবনা। কারন আপনি অনেকগুলো প্রতিযোগিতা জিতলেও প্রতিটি প্রতিযোগিতাতে আপনাকে নতুন হিসেবেই ধরা হবে। এসব প্রতিযোগিতার সাইটগুলোতে কাজ করলে ডিজাইন কনসেপ্ট অনেক বাড়ে, সাথে ব্যাংক ব্যালেন্সটাও স্মার্ট হয়। কিন্তু সবসময় জিতবেন কিংবা বহুদিন যাবৎ কাজ করতে পারবেন, এরকম নিশ্চয়তা দেওয়া যাবেনা। ডিজাইন কনসেপ্ট তৈরির জন্য এ ধাপটির ভাল বিকল্প আর কিছু হতে পারেনা। ডিজাইন কনসেপ্টটি তৈরি যেহেতু এ ধাপের মূল উদ্দেশ্য, সেজন্য এ ধাপে পিএসডি টেমপ্লেট ডিজাইন প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহন করলে সবচাইতে ভাল উপকৃত হবেন। এখানে কমপক্ষে ১৫টা প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহনের পর নিজেকে ডিজাইনার হিসেবে আবিস্কার করতে পারবেন। এর আগ পযন্ত ছিলেন গ্রাফিকস সফটওয়ারের টুলসের ব্যবহারকারী। মনে রাখবেন টুলস ব্যবহার জানলেই ডিজাইনার হওয়া যায়না। ডিজাইনার হতে হলে অবশ্যই সাধনা করতে হবে।

 

ডিজাইনার হিসেবে ভাল মানের পোর্টফলিও প্রস্তুত

প্রযুক্তি টিম

১ম ধাপঃ

কমপক্ষে ১০ টি প্রতিযোগিতাতে অংশগ্রহন ছাড়া এ পর্বে প্রবেশ না করার পরামর্শ দিব। চাইলে ক্রিয়েটিভিটি তৈরি এবং পোর্টফলিও তৈরির কাজ একই সাথে চালাতে পারবেন। এ ধাপে কাজ করবেন Graphicriver.net এ। এ সাইটটি আপনার পোর্টফলিও হিসেবে বিভিন্ন জায়গাতে গ্রাফিকসের কাজ পেতে সাহায্য করবে। এ সাইটটিতে আন্তজার্তিক স্ট্যান্ডার্ডের ডিজাইন তৈরি করে সেখানে সাবমিট করতে হয়। যদি অ্যাডমিন আপনার ডিজাইনটি অ্যাপ্লুভ করে, তাহলে সেই সাইট হতে যতবার আবার ডিজাইন বিক্রি হবে ততই আপনার আয়। সারাজীবন ধরে বিক্রি থেকে আয় করতে পারবেন। বিক্রি বৃদ্ধির জন্য সোশ্যাল মিডিয়া সাইট গুলোতে ক্যাম্পেইন চালান। বিশেষ করে ফেসবুক, টুইটার, লিংকডিন, রেডিট, স্টাম্বলআপন সাইটকে ব্যবহার করুন। আরও বেশি বিক্রি বৃদ্ধি করতে চাইলে বিভিন্ন ফোরাম, বিশেষ করে (warriorforum), বিভিন্ন ইন্টারন্যাশনাল ব্লগ এবং ইউটিউবকে ব্যবহার করতে পারেন সঠিকভাবে।

এ সাইটটি আপনাকে ভবিষ্যতের গ্রাফিকস ডিজাইনার হিসেবে চাকুরী পেতে, ওডেস্কে-ইল্যান্স মার্কেটপ্লেসগুলোতে বিড করে কাজ পেতে, পিপলপারআওয়ার, ফাইবারে কাজ পেতে সাহায্য করবে।

সেই সাথে মার্কেটপ্লেসগুলোর থেকে বাইরে সরাসরি কাজ পেতেও এটি পোর্টফলিও হিসেবে কাজ করবে। লোকালটি যদি গ্রাফিকস ডিজাইনার হিসেবে চাকুরী পেতে চান, সেক্ষেত্রেও সিভিতে এখানের পোর্টফলিওর লিংকটি দিতে পারেন।

 

তবে মনে রাখা দরকার, ডিজাইনার হিসেবে পোর্টফলিও তৈরির জন্য এমন ক্যাটাগরির কাজ ডিজাইন করুন, যাতে লেখা, ব্যাকগ্রাউন্ড, ইমেজ ডিজাইনের প্রয়োজন হয়।

যেমনঃ ১। পিএসডি টেমপ্লেট ডিজাইন-২ টি

২। ব্রুশিয়ার ডিজাইন -১টি

৩। ফ্লাইয়ার ডিজাইন- ৩টি

৪। ওয়েব ব্যানার – ৩টি

৫। বিজনেস কার্ড ডিজাইন – ৩টি

99designs.com এর জন্য করা আপনার নিজের ডিজাইনগুলো, যেগুলো প্রতিযোগিতাতে জিততে পারেনি, সেগুলোকেও গ্রাফিকসরিভারে আপলোড করতে পারেন।

গ্রাফিকসরিভার মার্কেটপ্লেসের কাজ শিখার জন্য একটি ভিডিও লিংক দিচ্ছি।

 

২য় ধাপঃ

personal-branding-advancing

ডিজাইনার নির্ভর নেটওয়ার্কিং সাইটগুলোতে খুব ভালভাবে অ্যাক্টিভ থাকুন। এ ধরনের সাইটগুলোর মধ্যে সবচাইতে বিখ্যাত দুটি সাইটের নাম হচ্ছেঃ বিহেন্স (https://www.behance.net/) এবংড্রিবল (https://dribbble.com/)। এ দুটি সাইটকে শুধু নেটওয়ার্কিং সাইট বললে ভুল হবে, এ সাইটগুলোকে মার্কেটপ্লেস বা চাকুরী সার্চের একটি ক্ষেত্র বলতে পারেন।

কয়েকটি কারনে এ সাইটগুলো ব্যবহারের পরামর্শ দিবঃ

–      বিশ্বের সেরা সেরা ডিজাইনাররা তাদের প্রজেক্ট স্যাম্পল আপলোড করে রাখেন এ সাইটে। সেসব ডিজাইনগুলো দেখে নতুন নতুন ডিজাইন আইডিয়া তৈরি হবে। যেসব ডিজাইন পছন্দ হবে সেগুলোকে সবসময় দেখতে চাইলে সেগুলো বাকেট করে রাখতে পারবেন।

–      এ সাইটের প্রোফাইলকে পোর্টফলিও হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন যেকোন জায়গাতে। এখানের প্রোফাইল সবজায়গাতেই সবচাইতে বেশি গ্রহনযোগ্য। অন্যান্য মার্কেটপ্লেসগুলোতে (odesk, elance, fiverr, peopleperhour)ও এখানের লিংক ব্যবহার করলে কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা ৯০% বেড়ে যায়।

–      এধরনের সাইটগুলো নিজেকে ডিজাইনার হিসেবে প্রমোশনাল করার জায়গা। আপনার ভাল ভাল ডিজাইনকে এখানে সুন্দর প্রেজেন্টেশন সহ উপস্থাপন করে রাখলে এখান থেকেই প্রচুর কাজ পাওয়া সম্ভব। প্রচুর ক্লায়েন্ট আছেন যারা তাদের কোম্পানীর জন্য ডিজাইনার হিসেবে হায়ার করার পূর্বে এ সাইটগুলোতে ভিজিট করেন। সুতরাং তাদের নজরে আপনার ডিজাইনগুলো পড়লে এখান থেকেই পেয়ে যাবেন ভালমানে ক্লায়েন্ট। আমার পরিচিত যারাই এ সাইটে অ্যাক্টিভ থেকেছেন, সবাই ফিক্সড ক্লায়েন্ট পেয়েছেন এসব সাইট থেকে। তারা ওডেস্ক-ইল্যান্স থেকে হতাশ হলেও এখানে এসে হতাশ হননি।

–      যারা ইনভেটোতে (গ্রাফিকরিভারে)কাজ করেন, তারা তাদের বিক্রি বৃদ্ধির জন্য এই সাইটের ইনভেটোর ডিজাইনের লিংকটি দিয়ে দিতে পারেন।

এ দুটি সাইটের মধ্যে বিহেন্সে প্রজেক্ট আপলোডের টিউটোরিয়ালটি দেখে নিতে পারেন।

ভিডিও লিংকঃ https://www.youtube.com/watch?v=gqeG0jvN3iQ

ড্রিবলে ডিজাইন আপলোড চাইলেই করা যাবেনা। সেখানে প্রোফাইল আছে, এমন কাউকে আগে ইনভাইট করতে হবে।

ইনভাইট পাওয়ার জন্য দুটি টিপস দিচ্ছি।

* মেথড১: ড্রিবলে একাউন্ট করে বাংলাদেশি ডিবলারদের ফলো করুন, উনাদেরকে আপনার ডিজাইন দেখান যাতে উনারা ইম্প্রেস হয়, একজন ভালো  ডিজাইনার হিসেবে ভাবে। তাদের সাথে ভালো সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন, কাউকে কাউকে অনুরোধ করুন তারা ইনভাইটেশন পেলে যাতে আপনাকে ইনভাইট করে। এটাই কার্যকরি প্রক্রিয়া।

* মেথড২: ড্রিবলে Invitation লিখে সার্চ দিলে যাদের হাতে ইনভাইটেশন আছে তাদের shot পাবেন এবং তাদের কথা অনুসরন করেন তাহলেও invitation পেতে পারেন।

 

আজ শেষ করছি এখানেই। পরের পর্বটি নিয়ে আসব খুব দ্রুতই। সেই পর্বে নিজেকে ডিজাইনার হিসেবে ব্রান্ডিং করার টিপস এবং সেই সাথে কাজ পাওয়ার একটি এক্সক্লুসিভ টিপস সবার সাথে শেয়ার করব। পোস্টটি ভাল লাগলে ফেসবুক ওয়্যালে শেয়ার করবেন, কেমন হয়েছে জানাবেন, আশা করি।

সকল মন্তব্য (1)

MD Abdullah

24 September, 2016 at11:52:29 PM, Reply

গুরুত্তপুন্য তথ্য দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ

মন্তব্য করুন

ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য