ফটোশপ সফটওয়্যারটি কমবেশি সবারই চেনা। ছবি সম্পাদনার জনপ্রিয় একটি সফটওয়্যার এটি। অ্যাডোবি সিস্টেমস এর একটি প্রোডাক্ট।
ফটোশপ সফটওয়্যারটির নির্মাতা থমাস নোল। থমাস নোল জানিয়েছেন, ফটোশপ শব্দটি ইংরেজি ভাষায় স্থান করে নিয়েছে, এতে আমি গর্বিত। আপনারা যখন টিভি দেখেন বা ছবি উপভোগ করেন, তখন ফটোশপ শব্দটিকে ভার্ব (ক্রিয়া) হিসেবে ব্যবহার করেন। অ্যাডোবি হয়তো ট্রেডমার্কের কারণে ফটোশপকে ক্রিয়াবাচক শব্দ হিসেবে শুনতে পছন্দ করে না, কিন্তু আমি যখনই এটা শুনি, আমার রোমাঞ্চ বোধ হয়।
নোল আরও বলেন, আলোকচিত্রের অনেক দিক আছে, যেখানে একই বিষয় অনেক সৃজনশীল ও কার্যকর উপায়ে তুলে আনা যায় এবং সৌন্দর্য বাড়ানো যায়। আবার খুব ভালোভাবে ব্যবহারও করা যায়। এটা নির্ভর করে ব্যক্তির নিজস্ব নৈতিকতার ওপর এবং তাকে নৈতিক ইচ্ছার প্রতিফলন দেখাতে হবে।
ফটোশপ তৈরির প্রথম পর্যায়টি ছিল কৌতূহল জাগানিয়া। মার্কিন প্রকৌশলী থমাস নোল ব্যক্তিগত একটি প্রকল্প হিসেবে ফটোশপ তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। সেটা ১৯৮৮ সাল। ফটোশপ তৈরির শুরুতেই থমাস নোল তার ভাই জন নোলকে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করেন। এ সময় এই প্রকল্পের নাম ছিল ডিসপ্লে। এরপর একে একে এই প্রকল্পটিতে অনেক ফিচার যুক্ত হতে থাকে। ১৯৮৯ সালে অ্যাডোবির কাছে এই সফটওয়্যারটি বিক্রি করে দেন তাঁরা। ১৯৯০ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ফটোশপ নাম দিয়ে ছবি সম্পাদনা করার সফটওয়্যারটি উন্মুক্ত করে অ্যাডোবি। ওই সময় অবশ্য ছবি ডিজিটাইজ করা খুব সহজ ছিল না। ছবি ডিজিটাইজ করা গেলেও তা বের করা ছিল আরও কঠিন কাজ। নোল বলেন, প্রথম প্রিন্ট করতে দুই হাজার ডলার খরচ হয়েছিল তাঁর। প্রথমদিকে এই সফটওয়্যারটির ক্রেতা আলোকচিত্রীদের পরিবর্তে গ্রাফিকস শিল্পী ও সংবাদপত্রের সঙ্গে জড়িত পেশাদার ব্যক্তিরা ছিলেন।
ছবি এমন আহামরি কিছু নয়। এটি যে পৃথিবী কাঁপানো কোনো ছবি হতে পারে, তা ছবি দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই। কিন্তু এই ছবিই তৈরি করেছে ইতিহাস। ১৯৮৭ সালে বোরা বোরা দ্বীপে বান্ধবী জেনিফারের (বর্তমান স্ত্রী) একটি টপলেস ছবি তুলেছিলেন প্রকৌশলী জন নোল। তাঁরা দুজন সে সময় কাজ করতেন লুকাস ফিল্মের স্পেশাল ইফেকটস কোম্পানি ইন্ডাস্ট্রিয়াল লাইট অ্যান্ড ম্যাজিক প্রকল্পে। ওই ছবি তোলার সময় দুজন ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন।
ওই ছবি তোলার ঘটনা স্মরণ করে জেনিফার বলেন, ‘সত্যিই আমাদের জন্য জাদুকরি সময় ছিল তখন। ওই দিন ছবি তোলার পরে কোনো একসময় আমার স্বামী আমাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিল। সম্ভবত ওই ছবি তোলার পরপরই। আর আশ্চর্যের বিষয় নোল ওই ছবির নাম দিল জেনিফার ইন প্যারাডাইস।’
কিন্তু ছবি তোলার পর সমস্যায় পড়ে গেলেন নোল। ছবিটি ডিজিটাইজ করতে গিয়ে তিনি মুখোমুখি হলেন কারিগরি সমস্যায়। ওই সময়ের সর্বাধুনিক প্রযুক্তির হার্ডওয়্যার পিক্সার ইমেজ কম্পিউটারে ছবিটি সম্পাদনা করতে গিয়ে তিনি বের করলেন ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যারটির জটিলতার বিষয়টি। তিনি সেই সময় সাক্ষাৎ করলেন তাঁর বড় ভাই থমাস নোলের সঙ্গে। থমাস ওই সময় (১৯৮৭) মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার ভিশন নিয়ে ডক্টরেট করছিলেন এবং অ্যাপলের সাশ্রয়ী ম্যাকিনটোশ কম্পিউটারে ব্যবহার উপযোগী ইমেজ প্রসেসিং সফটওয়্যার তৈরিতে কাজ করছিলেন। থমাসের ওই সফটওয়্যারে তখন ছবি সম্পাদনা করার নানা ফিচার যুক্ত করতে উৎসাহ দিলেন তিনি।
নোল বলেন, ‘প্রথমদিকে শখের বসে শুরু হলেও আমি পরে আরও নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করার পরামর্শ দিতে থাকি। একসময় মনে হতে থাকে, এই সফটওয়্যারটি আমরা বিক্রি করতে পারব। কিন্তু সমস্যা হলো ওই সময় ডিজিটাল ছবি ছিল অপ্রতুল। তাই আমাদের সফটওয়্যারের কারিকুরি বোঝানো অসম্ভব ছিল। তখন অ্যাপলের অ্যাডভান্সড টেকনোলজি গ্রুপ ল্যাবে কাজ করতেন আমার এক বন্ধু। তখন ফ্ল্যাটবেড স্ক্যানার ছিল দুর্লভ জিনিস। অ্যাপলের ওই গবেষণাগারে ছিল একটি স্ক্যানার। সেটিই ব্যবহার করলেন তিনি। তখন তাঁর হাতে ছিল তাঁর স্ত্রী ৬ ইঞ্চি বাই ৪ ইঞ্চি মাপের প্রিন্ট করা একটি ছবি আর এভাবেই ফটোশপের কল্যাণে জেনিফার ইন দ্য প্যারাডাইজ হয়ে উঠল প্রথম রঙিন ছবি।’
নোল বলেন, ‘জেনিফারের ছবিটিকে ডেমো হিসেবে ব্যবহার করার জন্য উপযুক্ত ছিল। এটা দেখে খুব ভালো লাগল যে এই সফটওয়্যরাটি দিয়ে ছবি নিয়ে নানা কাজ করা যায়। এ ছাড়া ফটোশপ নিয়ে নিখুঁত ছবি পাওয়ার বিষয়টিও মাথায় গেথে গেল। এরপর নোল যখন কোনো প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে যেতেন, তখন এই সফটওয়্যারটির একটি প্যাকেজ জেনিফারের ছবিসহ রেখে আসতে হতো। ফিরে এসেই নোল দেখতে পেতেন যে প্রোগ্রামাররা তাঁর স্ত্রীর আরেকটি ক্লোন তৈরি করে ফেলেছে!
যাইহোক, অ্যাডোবি ফটোশপে জ্ঞান ও দক্ষতা একজন অনেকের জন্যেই অর্থ উপার্জন এবং গৌরবের কারন। অ্যাডোবি ফটোশপ শিখার অনেক করান রয়েছে তার মধ্যে ১০ টি কারণ তালিকাভুক্ত করেছি। আসুন দেখে নেই।
ডিজাইন জগত মানেই সৃজনশীলতা। আর এই সৃজনশীল জগতে আপনি যত সৃজনশীল কাজ দেখবেন আপনার সৃজনশীল চিন্তা ভাবনা তত বারবে। অন্যের সৃজনশীল কাজ গুলো আপনার অনুপ্রেরণা যোগাবে। এগুলো দেখে আপনি নিজেই অনুপ্রানিত হবেন সৃজনশীল সব ডিজাইন করতে।
গ্রাফিক্স ডিজাইন জগতে রয়েছে বহু সৃজনশীল ডিজাইনার। যাদের ডিজাইন দেখে আপনি, আমি, আমরা থমকে যাবো। এদের ডিজাইন গুলো আপনার মাঝে বিশাল অনুপ্রেরণা যোগাবে, যা আপনাকে সৃজনশীল ডিজাইন করতে হাতিয়ার এর মত সাহায্য করবে। ফটোশপে দক্ষতা আপনার সৃজনশীলতাকে দিবে ভিন্ন মাত্রা।
ফটো এডিটিং থেকে শুরু করে, আপনি নিমন্ত্রণ কার্ড, বিজনেস কার্ড, পোস্টার, এবং আরো অন্যান্য গ্রাফিক্স ডিজাইন প্রযেক্ট তৈরী করতে পারেন ফটোশপে। ফটোশপে বিভিন্ন ক্রিয়েটিভ টুলস্ ব্যবহার করে নিশ্চিতভাবে আপনি অসাধারণ জিজাইন করতে পারেন যা শুধু আপনার ক্লায়েন্টকেই ইমপ্রেস করবে না এতে আপনি আপনার ক্রিয়েটিভিটির স্বাধীন প্রয়োগ ও করতে পারবেন।
পারিবারিক পুরাতন ছবি জীর্ণ এবং একসময়ে তা বিলুপ্ত হয়ে যেত ফটোশপ আসার আগে। কিন্তু এখন আপনি চাইলে সেই পুরাতন ছবি গুলোকে আবারো পুনরুদ্ধার করতে পারেন এবং আপনার পুরনো স্মৃতি ফিরে পেতে পারেন। ফটোশপের হিলিং ব্রাশ, ক্লোন ষ্ট্যাম্প, প্যাচ টুল এবং অন্যান্য টুলস্ ব্যবহার করে আপনি আপনার পুরাতন ছবিকে আবার নতুন বানাতে পারেন। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন যে আপনার অনেক ক্লায়েন্ট কে খুশি করতে পারবেন যদি আপনি এ কাজটি করতে জানেন।
একটি ভাল মানের গ্রাফিক্স এর কাজের আউটপুটের জন্য ইমেজ এবং লেখা একসঙ্গে সামাঞ্জস্যপূর্ণ এবং মানানসই সম্পাদনা প্রয়োজন। ফটোশপে আপনি শুধু ছবি এবং লেখা একত্রিত করাই নয় বরং কাজটি শিল্পসম্মত এবং আকর্শনীয় করতে পারেন। স্ট্রোক, ড্রপ শ্যাডো, বেভেল এবং এমবুশ এবং অন্যান্য ইফেক্ট ব্যবহার করে লেখাকে ফোকাস করতে পারেন পেশাদারিত্বের সাথে। ইমেজের ক্ষেত্রেও যদি আপনি ব্রাইট, কন্ট্রাস্ট, এক্সপোজার এবং অন্যান্য এডজাস্টমেন্ট গুলো এডজাস্ট করে প্রফেশনাল লুক দিতে পারেন।
ফটোশপের অনেক অনেক ব্রাশ রয়েছে যা আপনি ফ্রিতে পাবেন ওয়েবে। সেখান থেকে আপনার পছন্দের ব্রাশ বেছে নিতে পারেন। এসব ব্রাশগুলো আপনার ছবি এবং লে আউটকে দিবে স্পেশাল ইফেক্ট। ব্রাশ ব্যবহার করার ফলে আপনার কাজের আউটপুট হয়ে উঠবে আরো প্রফেশনাল।
ফটোশপের একটি আশ্চার্যজনক ব্যাপার হল ছবির রং পরিবর্তন করা। আপনি ইচ্ছে করলে খুব সহজেই যে কোন ছবির রং পরিবর্তন করতে পারেন। আপনি চাইলে ছবির নির্দিষ্ট কোন অংশের রং ও পরিবর্তন করতে পারেন।
আপনার তোলা ছবি কি সত্যিই ভাল দেখাচ্ছে না? বা সামান্য কিছু ভুল হয়েছে, আপনি চাইলে তা এডাজাস্ট এবং কারেকশান করতে করতে পারেন ফটোশপে। আপনি আলো স্বল্পতা, ডার্ক ফটোস এবং রেড আই সহ আরো অন্যান্য এডজাস্ট করতে পারেন। আপনি চাইলে ছবির নির্দিষ্ট কোন অংশ কেটে দিতে পারেন ক্রোপ টুল ব্যবহার করে। ব্রাশ ব্যবহার করে ছবির নির্দিষ্ট অংশের এডজাস্ট করতে পারেন।
আপনি হয়ত একটি ভাল মানের টি-শার্ট ডিজাইন করতে গিয়ে সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছেন? তাহলে আপনার সমস্যার সমাধান হতে পারে ফটোশপ। ফটোশপই দিতে পারে আপনার কঙ্খিত আউটপুট। ফটোশপে দেয়া ইফেক্টগুলোর কারনে টি-শার্টটিকে আরো সুন্দর দেখাবে।
ফটোশপে ইচ্ছে করলে আপনি একটি ছবি কে কাঠ কয়লা, জল রং এবং আরো অন্যান্য ইফেক্ট এ রুপান্তর করতে পারেন। আপনি সত্যিই সত্যিই অনেক কিছুই করতে পারেন ফটোশপে। আপনি ইচ্ছে করলে একটি ছবিকে ফটোকপি করা কাগজে, স্টেইন্ড গ্লাস আর্ট এ রুপান্তর করতে পারেন ফিল্টার ব্যবহার করে। ফটোশপ ব্যবহার আপনার কাজে যোগ করবে ভিন্ন মাত্রা। আপনি চাইলে ফটোশপে এমন কিছু একশন ব্যবহার করতে পারেন যা আগে থেকেই ডিজাইনাররা তৈরী করে রেখেছে। এ রকম একশন আপনার কাজকে করে তুলবে আরো আকর্শনীয়।
ওয়েব ডিজাইনে ফটোশপ কেন? ইমেজ বা ছবি ছাড়া ওয়েবসাইট নেই বললেই চলে। ওয়েব সাইটে ইমেজ ব্যবহার করার আগে এডিট করার জন্য দরকার ফটোশপ। এছাড়াও বর্তমানে ওয়েবসাইটের মূল ডিজাইন ও লে-আউট ফটোশপ এ তৈরি করা হয়। যা পিএসডি টেমপ্লেট হিসেবে পরিচিত। ওয়েবসাইটে আকর্ষনীয় গ্রাফিক্স ব্যবহার করার জন্য ফটোশপের ব্যবহার জানা অবশ্যই জরুরী।
Md:Rabbe Nur
10 মার্চ, 2017 at02:32:53 পূর্বাহ্ন,
gd
প্রযুক্তি টিম
11 মার্চ, 2017 at03:16:20 পূর্বাহ্ন,
ধন্যবাদ প্রযুক্তি টিমের সাথে থাকার জন্য।