ডিজাইনার হিসেবে সুস্থ থাকতে চাইলে অবশ্যই মেনে চলুন এই নিয়মগুলো
Published on:

কর্পোরেট লেভেলের অফিস থেকে শুরু করে সাধারণ একটি গার্মেন্টসে অসংখ্য পেশাজীবী প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছেন। তাদের অক্লান্ত শ্রমে সমৃদ্ধ হচ্ছে এদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিমণ্ডল। কিন্তু এই সব সেক্টরেই এই সকল কর্মজীবীদের মধ্যে কিছু সাধারণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা যায়। এই স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো এসব পেশাজীবীদের কর্মক্ষেত্রে উৎপাদনশীলতার উপর খারাপ প্রভাব ফেলে। এছাড়াও এই খারাপ প্রভাব তার পরিবার, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সহকর্মীদের উপরেও পড়তে পারে।
ডিজাইন সেক্টরের মানুষজনও এরকম বিভিন্ন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে পড়তে পারেন। অনেকে হয়তো বংশগত কিংবা দুর্ঘটনাজনিত কারণে এরকম খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েন। কিন্তু কর্মস্থলের পরিবেশও অনেক সময় ডিজাইনারদের স্বাস্থ্যগত সমস্যার ঝুঁকির মুখে ফেলে দিতে পারে।
আজ আমি ডিজাইনারদের কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা ও প্রতিকারের উপায় নিয়ে কথা বলবো।
- চোখের সমস্যা
- মাথাব্যথা
- আসনবিন্যাস জনিত সমস্যা
- অবসাদগ্রস্ততা
- স্থূলতা
- স্ট্রেস ডিসঅর্ডার
১। চোখের সমস্যাঃ
দক্ষ ও সৃজনশীল ডিজাইনারদের সমসময়ই খুব সূক্ষ্ম ও নিখুঁতভাবে কাজ করতে হয়। একটা ভালো ডিজাইন দাঁড় করানোর জন্য তারা সবসময়ই তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে থাকেন। সাধারণত দেখা যায়, তারা তাদের ক্লায়েন্টদের একটা নির্দিষ্ট ডেডলাইনের ভেতর কাজ সম্পন্ন করেন। আর অনেকক্ষেত্রেই এই ডেডলাইন অনেক সীমিত হয়ে থাকে। একারণে তাদের দিনরাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে সেই কাজটি শেষ করতে হয়। আর এর ফলে তাদের চোখের উপরেও প্রচুর চাপ পড়ে। চোখের ্সাথে সাথে মস্তিষ্ককেও এই সমস্যা খারাপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে। কোনো বিরতি ছাড়া কম্পিউটার স্ক্রিনে কাজ করলে চোখের এই সমস্যা হতে পারে। যা কাজপাগল মানুষদের জন্য অত্যন্ত স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির লক্ষণ। এজন্য অফিস শেষে কিংবা বাসায় ফিরে বেশ কিছু সময় স্মার্টফোন, টেলিভিশন প্রভৃতি এড়িয়ে চলে অন্যান্য স্বাভাবিক কাজকর্ম করা উচিত।
প্রতিকারঃ
- ঠান্ডা পানি দিয়ে ঘন ঘন ঘন মুখ এবং চোখে ঝাপটা দিন
- চোখ বন্ধ করে হাতের তালু দিয়ে আলতো করে হালকা ব্যায়াম করুন
- ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং বিপরীত দিকে চোখ ঘুরিয়ে ব্যায়াম করুন
- চোখের পূর্ণ বিশ্রামের জন্য ঘুমের ভূমিকা অপরিহার্য
- স্বাস্থ্যকর খাবার যেমন সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, ডিম ইত্যাদি পুষ্টিকর খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন
- অত্যধিক মসলাযুক্ত খাবার, ফাস্টফুড, কোমল পানীয় এবং প্রিজারভেটিভ খাবার এড়িয়ে চলুন
২। মাথাব্যথাঃ
সাধারণত প্রচুর পরিমাণে চিন্তাভাবনা করার কারণে মাথাব্যথা হয়। ডিজাইন সেক্টরের প্রায় ৮০ শতাংশ পেশাজীবী এই মাথাব্যথাজনিত রোগে আক্রান্ত। কিন্তু গ্রাফিক ডিজাইনারদের এই পরিসংখ্যানটি আরো বেশি। কম্পিউটারের সামনে দীর্ঘক্ষণ ধরে বসে কাজ করলে শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা কিংবা উদ্বিগ্নতার মতো সমস্যা হতে পারে, যা মাথাব্যাথার প্রধান লক্ষণ। তাই কাজে ভালো ফলাফল আনতে একটানা কাজ করা উচিত নয়। কাজের ফাঁকে কিছু সময় বিশ্রাম নিলে মাথাব্যথাজনিত রোগের শঙ্কা থাকে না। একসপ্তাহের বেশি মাথাব্যথা থাকলে সেটা পরবর্তীকালে ক্রনিকে রুপান্তরিত হয়।
প্রতিকারঃ
- কর্মক্ষেত্রে চাপ এড়িয়ে চলুন
- প্রচুর পানি পান করে শরীর আর্দ্র রাখুন
- আগে আগে ঘুমাতে যাওয়ার চেষ্টা করুন এবং কমপক্ষে আট ঘন্টা ঘুমানোর অভ্যাস করুন
- প্রতিবেলা খাবারের জন্য একটি নির্দিষ্ট সময় ঠিক করে নিন
৩। আসনবিন্যাস জনিত সমস্যাঃ
কোনো ডিজাইনকে পরিপূর্ণতা দানের জন্য গ্রাফিক ডিজাইনারদের একটি বড় সময় কম্পিউতারের সামনে ব্যয় করতে হয়। অপরদিকে ডিজাইনের প্রায় ৯৯ শতাংশ কাজও কম্পিউটারে সম্পন্ন হয়। আর এক্ষেত্রে আসনবিন্যাসের ত্রুটির কারণে ডিজাইনারদের ঘাড়, কাঁধ বা মেরুদণ্ডে ব্যথা পুনরাবৃত্তিমূলক চাপ ও ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
প্রতিকারঃ
- ঘন ঘন বসার ভঙ্গি পরিবর্তন করুন
- বসার আসনটি নিজের সুবিধামতো সেট করে নিন
- কম্পিউটারের সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রেখে বসুন
- ফিটনেস এবং নমনীয়তা বজায় রাখুন
- স্পাইনাল মিসাইলমেন্ট সুস্থ রাখার জন্য চিওপ্রেটিকিক কেয়ার নিতে পারেন
- স্বাভাবিক পরিস্থিতি আনার জন্য ম্যাসেজ থেরাপির সাহায্য নিন
- এর্গোনোমিক চেয়ার ব্যবহার করুন
৪। অবসাদগ্রস্থতাঃ
ক্রনিক ফ্যাটিগ সিন্ড্রোম (সিএফএস) বা অবসাদগ্রস্ততা একটি জটিল রোগ। এই রোগের প্রকৃত কারণ ব্যাখ্যা করা সম্ভব হয় নি। কিন্তু শারীরিক বা মানসিক ক্লান্তি যখন বিশ্রাম নেয়া সত্ত্বেও দূর হয় না তখন এটি খারাপ পরিস্থিতে রুপ নেয়। অবসাদগ্রস্ত ব্যক্তির পেশী ব্যথা, বিষণ্ণতা বা মেজাজের সমস্যা, খাবার, রাসায়নিক পদার্থ, ঔষধে এলার্জিগত সমস্যা এবং আরও অনেক জটিল সমস্যা হতে পারে। এছাড়াও মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা যেমনঃ চাপ এবং মানসিক আঘাতজনিত সমস্যা হতে পারে।
প্রতিকারঃ
- সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত খাবার
- Cognitive behavioral therapy (CBT)
৫। স্থুলতাঃ
দীর্ঘসময় কম্পিউটার ব্যবহার স্থূলতার প্রধান কারণ। কাজের চাপের কারণে অধিকাংশ ডিজাইনারকেই কর্মক্ষেত্রে বসে খাওয়াদাওয়া করতে হয়। যা স্থূলতার প্রধান কারণ। এছাড়াও জাঙ্ক ফুড এবং কোমল পানীয়ের অভ্যাস থাকলে ওবেসিটি ডিসঅর্ডার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
প্রতিকারঃ
- ঘনঘন খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে
- সকালে হাঁটাহাঁটির অভ্যাস ও ব্যায়াম করতে হবে
- জাঙ্ক ও ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে
৬। স্ট্রেস ডিসঅর্ডারঃ
প্রযুক্তি আমাদের আচার-আচরণ এবং আবেগের উপর একটি বড় প্রভাব ফেলছে। স্বাস্থ্যহীনতা, কাজের চাপ এবং কাজের পরিবেশের মতো বিষয়গুলি ডিজাইনারদের প্রচুর চাপের সম্মুখীন করে। সারাবিশ্বব্যাপী গ্রাফিক ডিজাইনের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার প্রেক্ষিতে ডিজাইনারদেরও কাজের চাপ বেড়েছে। এতে করে স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের মতো স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মুখে তারা পড়তে পারে। স্ট্রেস ডিসঅর্ডারের প্রধান কারণ মাথা ব্যথা ও ক্লান্তিবোধ। ৯৫ শতাংশ রোগের কো-ফ্যাক্টর হওয়ার জন্য স্ট্রেসকে দায়ী করা হয়।
প্রতিকারঃ
- পুষ্টিকর ও সুষম খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে
- কাজের ফাঁকে গান শুনতে পারেন
- দৈনিক ব্যায়াম ও হাঁটাহাঁটির অভ্যাস রুটিনে পরিণত করুন
- সীমিত অ্যালকোহল এবং ক্যাফিন গ্রহণ করুন
- পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানোর অভ্যাস করুন
- আপনি যা চান তা-ই করতে পারেন এমন মনোভাব বজায় রাখুন
একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে শারীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সুস্থ থাকার গুরুত্ব অপরিসীম। স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেতে উপর্যুক্ত প্রতিকারের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম, পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যতালিকা মেনে চলা, জাঙ্ক কিংবা ফাস্টফুড জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা, কোমল জাতীয় পানীয় ত্যাগ করা এবং সার্বিকভাবে একটা নিয়মশৃঙ্খলা রক্ষা করতে পারলে খুব সহজেই সুস্থ থাকা সম্ভব। এতে যেমন বাড়বে কর্মদক্ষতা তেমন পেশাদারিত্ব!
তথ্যসূত্রঃ
https://www.eyecandyinfographic.com
Author

Jubair Hasan
Joined 2 years ago
📬 Let's keep in touch
Join our mailing list for the latest updates
Something went wrong!
Please try again.