এন্ড্রোয়েড স্মার্টফোন কেনার সময় যে ভুলগুলো অবশ্যই করবেন না

Published on:

এন্ড্রোয়েড স্মার্টফোন কেনার সময় যে ভুলগুলো অবশ্যই করবেন না

Image Source: https://pixabay.com

প্রতিযোগিতাপূর্ণ মার্কেটে নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য বিশ্বের বড় নামী দামি ব্র্যান্ড গুলো রীতিমত মরিয়া হয়ে উঠেছে।

অত্যাধুনিক ডিজাইন এবং লেটেস্ট টেকনোলজির মোবাইল ফোন নিয়ে তারা প্রতিনিয়ত উপস্থিত হচ্ছে এবং ক্রেতাদের আকৃষ্ট করার সাধ্যমত চেষ্টা করে চলছে।

যার সুবাদে ক্রেতাও বুঝে না বুঝে ঝুকে পড়ছে এইসব নিত্য নতুন মোবাইলের প্রতি,এবং মেতে উঠেছে লোক দেখানোর এক উন্মত্ত নেশায়।

তা কি কেউ লক্ষ্য করেছেন? ভেবে দেখেছে তারা আসলেই কি করছে?

হয়তোবা সেই ভাবনার সময় যেন আমাদের নেই।

জেনে না জেনে, বুঝে না বুঝে, একের পর এক ভুলগুলো আমরা প্রতিনিয়ত করে বসছি।

হ্যা! আজ সেই ভুলগুলো একে একে চোখে আংগুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য আমার এই লেখা।

আশা করি এই লেখা আপনাদের উপকারের পাশাপাশি আপনাদের ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন করতে সাহায্য করবে।

যার ফলে আপনি দ্বিতীয়বার এই ভুলগুলো পুনরাবৃত্তি করবেন না।

চলুন শুরু করি।

বাজেটে অনুযায়ী মোবাইল পছন্দ করুন

মোবাইল কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত চেষ্টা করছে আপনার থেকে দুই-চারটি টাকা অতিরিক্ত আদায় করা যায়।

আপনি যখন একটি স্মার্ট ফোন কিনবেন, তখন আপনাকে কেউ আটকাতে পারবে না।

অর্থাৎ আপনার বাজেট যদি ১০ হাজার টাকা হয়, তাহলে কোম্পানি চেষ্টা করবে আপনার থেকে ১২ হাজার টাকা বের করে নেওয়ার।

আপনাকে রোজ লোভ দেখানো হচ্ছে, টিভিতে বা পত্র পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখানো হচ্ছে, পেইড প্রমোশনের সাথে সাথে ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং দ্বারা প্রভাবিত করে চলেছে প্রতিনিয়ত।

আপনাকে তারা প্রলুব্ধ করছে, দু চার পয়সা বেশি দিয়ে আপনাকে অবশ্যই ভালো স্মার্টফোন কিনতে হবে।

১০ হাজার টাকা দামের মোবাইল ফোন থেকে ১২ হাজার টাকা দামের মোবাইল আরেকটু বেশি ভালো।

আপনি চেষ্টা করবেন সামান্য  ২ হাজার টাকা সামান্য বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা দিয়ে স্মার্ট ফোনটি কিনে ফেলি।

ক্যামেরা, প্রসেসর, র‍্যাম, স্টোরেজ, ডিসপ্লে, গেমিং ফেসিলিটি এসব ফিচার সামান্য একটু মোডিফাই করে তারা মুলত ক্রেতার সামনে উপস্থাপন করেন।

কম দামে মোবাইল কিনুন

যে ব্যক্তির মাসিক ইনকাম মাত্র ২০ হাজার টাকা তিনি দেখা যাচ্ছে, ৪০-৫০ হাজার টাকা মূল্যের স্মার্ট ফোন কিনে বসে আছেন।

কিন্তু কেন?

কারণ, কোম্পানিগুলো প্রতিনিয়ত আমাদের ব্রেইন ওয়াশ করছে।

সত্যিই কি আমাদের প্রয়োজন আছে খুব দামি স্মার্ট ফোন কেনার?

প্রথমে আমরা যদি আজ  ৫০ হাজার টাকার দামের স্মার্ট ফোন কিনি, এক বছর বাদে বেচতে গেলে তা সর্বোচ্চ ২০ টাকা আমরা পাবো আর যদি ২৫ হাজার মূল্যের স্মার্টফোন কিনি ১ বছর পর বেচতে গেলে সর্ব সাকুল্যে ১০ হাজার টাকা পাবো।

তাহলে ৫০ হাজার টাকার মূল্যের স্মার্টফোন কিনতে গেলে আমাদের ক্ষতি হচ্ছে ৩০ হাজার টাকা আর ২৫ হাজার মুল্যের স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ ১৫ হাজার টাকা।

তাহলে ১ বছরে আমাদের কোন লস টা আসলে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে হচ্ছে?

আমরা ফোন নিয়ে অনেক ক্ষতির সম্মুখীন হই।

বিক্রয় ডট কম এর মত অনেক মার্কেটপ্লেস আছে যেখান থেকে আপনি কম দামে ভালো স্মার্টফোন কিনতে পারেন হোক সেটা ব্র্যান্ড নিউ অথবা ব্যবহৃত স্মার্টফোন যদি আপনার নির্দিষ্ট কোন মডেল বা ব্র্যান্ড প্রেফারেন্স থেকে থাকে।

আর যদি দর কষাকষির মাধ্যমে আপনি কোন শো-রুম থেকে কিনতে চান তবুও তা আপনি পারেন তা আপনার উপর নির্ভর করবে।  

গুণগত মান এবং দাম যাচাই করুন

তবে এখানে একটি সংশয় থেকে যায়, কম দামে ভালো স্মার্টফোন কিনলে আমরা সেই সব ফিচার বা এক্সপেরিয়েন্স পাবো না যা একটি দামি ফোনে থাকে।

হয়তোবা দারুণ পিকচার কোয়ালিটির ক্যামেরা পাবো না, উন্নত মানের প্রসেসর বা র‍্যাম পাবো না বা ব্যাটারি ব্যাকআপ কম থাকবে।  

কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন তো, ২০-৩০ হাজার টাকার মোবাইলে যে ফিচারগুলো পাওয়া যায় এবং ৬০-৮০ হাজার মূল্যের মোবাইলে যে ফিচার গুলো থাকে তাদের মধ্যে তফাৎ কিন্তু খুব বেশি নেই।

আমি বলছি না, কোন পার্থক্য নেই। অবশ্যই কিছু না কিছু পার্থক্য আছে, কিন্তু খুব বেশি নেই। 

অতএব, আমরা দ্বিগুন পয়সা খরচ করে দ্বিগুন এক্সপেরিয়েন্স পেতে পারি না। 

মোবাইল কোম্পানির প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকুন

আজকে আপনি যেই স্মার্ট ফোনটা ব্যবহার করছেন কোম্পানি চাইছে কালকেই আপনি সেটা বদলিয়ে নিন। 

আপনাকে রোজ রোজ নতুন স্মার্ট ফোন লঞ্চ করে দেখাচ্ছে বরং তফাৎ কিন্তু খুব বেশি নেই।

২০১৯ সালে যে ফোনগুলো লঞ্চ করা হয়েছিলো, ২০২১ সালে এসে যে ফোন লঞ্চ করা হচ্ছে তা ২০১৯ সাল থেকে তুলনামুলক খারাপ কোয়ালিটির, তুলনামূলক কম পারফরমেন্স দিচ্ছে। 

রিয়াল মি এক্স-২ মডেলের ফোনটি আজ ও রিয়াল মি এক্স-৭ ম্যাক্স থেকে আজ ও বেটার ফোন।  

এক্সেসরিজ প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করুন

আজকের দিনে দাড়িয়ে এতটুকু বলা যায়, স্মার্ট ফোনের খরচ আগের থেকে অনেক টুকু বেড়ে গেছে।

আপনি যে ফোন কিনছেন সেটার দামের কথা কিছু বলছি না। 

তার বাইরে এক্সেসরিজ এর দাম তুলনামূলকভাবে বেড়েই চলেছে।

যেমন ধরুন, আগে আপনি একটি স্মার্ট ফোন কিনলে ২০০ টাকা দিয়ে হেডফোন কিনতেন

কিন্তু আজকের দিনে আপনি ব্লুটুথ হেড সেট কিনেন।   

মোবাইলের সাথে আপনি যে এক্সেসরিজ কিনেন তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি দামি।

দু বছর আগে আমরা যে মোবাইলে যে গেম গুলো খেলতাম সেই সময় আমাদের কোন গেমিং এক্সেসরিজ এর প্রয়োজন ছিলো না।

কিন্তু আজকের দিনে দাঁড়িয়ে আমাদের এসব গেমিং এক্সেসরিজের প্রয়োজনীয়তা হয়ে দাড়িয়েছে।  

কারণ কোম্পানি এই ডিভাইস এবং গেজেট আমাদের সামনে নিয়ে আসছে আর বলছে এই গেমিং এর জন্য এই এক্সেসরিজ গুলো ভালো।

আর আপনি আমি বুঝে না বুঝে সেই ফাদে পা দিচ্ছি নিজের অজান্তেই।

তাই আজকের দিনে যে এক্সেসরিজ কিনছেন তা কেনার আগে দশবার ভাবুন আদৌ এসব এক্সেসরিজ আপনার প্রয়োজন আছে কিনা?

শো-অফ পরিহার করুন

অনেকেই পকেট থেকে দামি স্মার্ট ফোন বের করে মানুষকে দেখান আমি কতটা বড়লোক?

লোক দেখানো বা শো অফের উদ্দ্যেশে অনেকেই মোবাইল ঘন ঘন পরিবর্তন করতে থাকেন।

কিন্তু এটা করে আসলে বড় কি অর্জন হয় বা লোককে কি বুঝাতে চান তা আসলেই বোধগম্য নয়।

লোকের কাছে কি ইম্প্রেশন বাড়ে বা কি সুবিধা হয় আপনার?

নকল বড়লোক সেজে আসলেই কি লাভ আপনার?

তাই আপনার সাধ্য অনুযায়ী মোবাইল ফোন ব্যবহার করুন।

আপনার যদি সাধ্য থাকে ১০ হাজার টাকার স্মার্ট ফোন কেনার তাহলে ১০ হাজার টাকার স্মার্ট ফোন কিনুন আর আপনার যদি সাধ্য থাকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকার স্মার্ট ফোন কেনার তাহলে তাই কিনুন।

আমি নিশ্চিত বলতে পারি আপনি এই দামে সবচেয়ে ভালো স্মার্টফোন টি পাবেন।  

এতে আপনি অনেকটা নিশ্চিন্তে ব্যবহার করতে পারবেন।

আশা করি এই আর্টিকেলে আপনাকে আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।

Share:
Other Blog
Related Posts

Author

হাসান যোবায়ের

Joined 11 years ago

📬 Let's keep in touch

Join our mailing list for the latest updates

Resend verification link

Something went wrong!
Please try again.

Please enter your name.

Please enter a valid email address.