আপনি স্ট্রিট ফটোগ্রাফি চর্চা করলে এই ১১টি টিপস জানেন তো?
Published on:

আমাদের দেশে এখন স্ট্রিট ফটোগ্রাফি বেশ জনপ্রিয়। দিন দিন এই জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে। স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে কিছু টেকনিক অনুসরণ করলে ফটোগ্রাফি হয়ে উঠবে আরো বেশি জীবন্ত এবং চিত্রগ্রাহী। চলুন জেনে নেয়া যাক এমন কিছু টিপস এবং ট্রিকস।
০১. বেশি বেশি শট
খুব কমন একটি ভুল নতুন স্ট্রিট ফটোগ্রাফাররা করে সেটা হচ্ছে একটা দৃশ্যের ১-২ দুইটা ছবি তুলে চলে যায় অন্য জায়গায়। যেটা আসলে ঠিক নয়। আপনি যে দৃশ্য থেকে ছবি তুলতে চাচ্ছেন সেখানে নিম্মে ১০-১৫ টি বিভিন্ন অ্যাংগেলে ছবি তুলুন। যত বেশি তুলবেন তত ভাল।
কারণ? যত বেশি ছবি তুলবেন তত বেশি ভাল শট পাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। কারণ অনেক শটের ভিতর যে কোন একটি হয়তো পারফেক্ট আই কন্টাক্ট কিংবা হাতের ব্যবহার চলে আসবে। অনেকটা ক্রিকেট খেলায় ব্যাট চালানোর মত; অনেকগুলো শটের ভিতর একটি শট হয় ছক্কা!
০২. ফ্ল্যাশের যথাযত ব্যবহার
সবসময় দিনের আলো কিংবা যথাযত আলো নাও থাকতে পারে। তখন ক্যামেরার ফ্ল্যাশ লাইট ব্যবহার করা যেতে পারে কিংবা এক্সটার্নাল ফ্ল্যাশ লাইট ব্যবহার করতে পারেন। কিংবা আপনার সাবজেক্ট যখন সূর্যের বিপরিতে অবস্থান করে তখন ফ্ল্যাশের ব্যবহার করতে পারেন।
এমনকি অনেক সময় দিনের আলোতেও ফ্ল্যাশ ব্যবহার করতে পারেন এটা অনেক সময়ই কাজে দেয়। যত বেশি এক্সপেরিমেন্ট করবেন তত বেশি ভাল ছবি পাবেন।
০৩. সঠিক আই কন্ট্যাক্ট
বলা হয়ে থাকে “চোখ হলো আত্মার জানালা”। ছবিতে সাবজেক্টের আই কন্ট্যাক্ট যদি ক্যাচি হয় তাহলে সেই ছবির মাত্রা অন্যরকম পর্যায়ে চলে যায়। এতে মনে হয় আপনার ছবির ফ্রেমের সাবজেক্ট দর্শকের সাথে সরাসরি যোগাযোগ করছে!
কিন্তু কিভাবে স্ট্রিট ফটোগ্রাফিতে পারফেক্ট আই কন্ট্যাক্ট পাবেন? আপনি সাবজেক্টের কাছ থেকে ছবি তুলতে থাকুন। যতক্ষন পর্যন্ত তারা আপনার দিকে না তাকায় ততক্ষন পর্যন্ত এবং তাকানো মাত্র পারফেক্ট ক্লিক করুন!
০৪. নিচ থেকে তুলুন
বেশিরভাগ ফটোগ্রাফার আই লেভেল থেকে ছবি তুলে থাকেন যা অনেকটাই বোরিং পারস্পেক্টিভ। আমরা সবাই এই ভিউ দেখেই অভ্যস্থ তা নিচ থেকে তুলে ইউনিক গভিরতা তুলে ধরতে পারেন।
নিচ থেকে তুলে আপনি আপনার সাবজেক্টকে স্বাভাবিক লাইফ থেকে আরো বেশি বড় করে তুলছেন। এটাই হলো এমন কিছু যা আপনার স্ট্রিট ফটোগ্রাফি করে তুলে অনন্য।
০৫. ‘অসতর্কমূলক মোমেন্ট’ টাই ক্যাপচার করুন
আমরা সাধারণত সেরা কিছু মুহূর্ত এর ছবি তুলতে পছন্দ করি। কিন্তু এমন কিছু ছবিও স্পেশাল হতে পারে যখন সাবজেক্ট ক্যামেরা ম্যানের কথা ভুলে গেছে এবং সে স্বাভাবিক কার্যক্রম করছে। এটাকে এখন অনেকে ক্যান্ডিড ছবি বলে আর সেলেব্রেটিদের ক্ষেত্রে নাম হয় “পাপারাজ্জি”।
কিভাবে তুলবেন অসতর্কমূলক মুহূর্ত?
খুব সোজা, আপনি যখন ছবি তুলবেন তখন বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করে সাবজেক্টকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে পারেন অর্থাৎ ক্যামেরার কথা সে যেন ভুলে যায়। যেমন, আজকের জন্য আপনার পরিকল্পনা কি? কোথায় থাকেন? কিভাবে নিজেকে প্রকাশ করবেন? আপনার জীবনের স্টোরি কি? আর যখন সাবজেক্ট কথা বলতে শুরু করবে অর্থাৎ “গল্প বলার মুড” এ যখন সাবজেক্ট চলে যাবে তখনই এমন কিছু ছবি তুলতে পারবেন যা কিনা পোজ দেয়া ছবির চেয়েও হাজারগুন শক্তিশালী।
০৬. সরাসরি সাবজেক্ট কে ফোকাস
যদি আপনি সাবজেক্টের কাছে পারমিশন চেয়ে ছবি তুলতে চান তাহলে সাবজেক্টকে ব্যাকগ্রাউন্ড পছন্দ করে দিন এবং ছবি তুলুন।
০৭. আমার জন্য আরেকবার করবেন প্লিজ?
আপনি যখন ছবি তুলছেন তখন হঠাৎ করে সাবজেক্ট এমন কোন ইন্টারেস্টিং কিছু করলো যা হয়তো বেশ ভাল ছিল। তখন আপনি বলতে পারেন, আমার জন্য আরেকবার করবেন প্লিজ?
০৮. পূর্ব সেট টেকনিক
এটা বেশ চমৎকার একটি টেকনিক স্ট্রিট ফটোগ্রাফি এর জন্য। ক্লাসিক কোন ব্যকগ্রাউন্ড সিলেক্ট করে দাঁড়িয়ে থাকুন এবং আপনার পছন্দ মত সাবজেক্ট প্রবেশ করার জন্য অপেক্ষা করুন।
ইন্টারেস্টিং ব্যকগ্রাউন্ড, বিলবোর্ড কিংবা কোন দিক নির্দেশক সিলেক্ট করে সাবজেক্ট এর জন্য অপেক্ষা করতে পারেন।
এই টেকনিককে ফিশিং টেকনিকও বলা হয়ে থাকে। কারণ আপনি ফ্রেম সিলেক্ট করে ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করছেন কিন্তু কোন সাবজেক্ট ধরা পরছে না আবার হতে পারে অনেকগুলো ভাল সাবজেক্ট পেয়ে গেছেন মুহূর্তেই। এই জন্যই ভাল ফটোগ্রাফারের অপর নাম “ধৈয্য”।
০৯. মুখোমুখি শ্যুট করুন
সাধারনত নতুন ফটোগ্রাফাররা সরাসরি মুখোমুখি ছবি তুলে না, সাইড থেকে তুলে থাকে। কিন্তু আপনি যদি ফটোগ্রাফ কে অনেক বেশি আকর্ষণীয় এবং ডাইনামিক করতে চান তাহলে সরাসরি মুখোমুখি ছবি তুলুন। ওয়াইড লেন্স দিয়ে ছবি তুললে এই ক্ষেত্রে বেশি কাজে দেয় , কারণ তখন মনে হয় দর্শকের সামনেই হয়তো সাবজেক্টটি রয়েছে।
এই রকম ছবি তুলতে ক্রাউডেট প্লেসে হাটতে হাটতে কোথাও থেমে যান। তারপর কেউ যখন আপনার দিকে হেটে আসবে তখন কিছু ছবি তুলে সরে যান আর এভাবেই কিছু ইন্টারেস্টিং ছবি তুলে ফেলুন।
১০. লাইন, প্যাটার্ন এবং টেক্সারের ব্যবহার
যদি আপনি মানুষ নিয়ে ফটোগ্রাফি করতে পছন্দ না করেন তাহলে আপনি কুনসেপ্টুয়াল স্ট্রিট ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করতে পারেন যেখানে লাইন, প্যাটার্ন এবং টেক্সার নিয়ে কাজ করা যায়।
১১. নেগেটিভ স্পেসের যথাযত ব্যবহার
নেগেটিভ স্পেস বেশ ক্রিয়েটিভ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা যায়। নেগেটিভ স্পেসের কারণে আপনার ছবিতে ব্রেথ নেয়ার জায়গা থাকে যাতে করে সিংগেল সাবজেক্টে আরো বেশি ফোকাস করা যায়।
শ্যাডো ব্যবহার করে নেগেটিভ স্পেস ব্যবহার করতে পারেন। মাইনাস ১ অথবা ২ এক্সপোজার করে ছবি তুলুন তারপর পোস্ট প্রসেসিং এ কালো রঙের কন্ট্রাস্ট বৃদ্ধি করুন। তাহলে হয়ে যাবে নেগেটিভ স্পেস ফটোগ্রাফি।
এই ছিল এবারের মত ফটোগ্রাফি নিয়ে টিপস। সামনে আরো দেয়া হবে যদি আপনাদের এই বিষয়ে আগ্রহ থাকে।
পেটাপিক্সেল অবলম্ভনে।
Other Blog
Related Posts
Author

Jubair Hasan
Joined 2 years ago
📬 Let's keep in touch
Join our mailing list for the latest updates
Something went wrong!
Please try again.