বিজনেস কার্ড ডিজাইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

প্রকাশিতঃ 18 মার্চ, 2021, দেখা হয়েছেঃ

বিজনেস কার্ড যেকোনো প্রফেশনাল মানুষের ধারক ও বাহক। একটি আকর্ষণীয় বিজনেস কার্ডের মাধ্যমে যে কেউ তার সার্কেল বা ক্লায়েন্টদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে সক্ষম হন। বিজনেস কার্ড ডিজাইনের জন্য অনেক জনপ্রিয় সফটওয়ার সারাবিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। এর ভেতর অ্যাডোব ফটোশপ এবং অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বে ব্যাপক প্রচলিত ও জনপ্রিয়। ডিজাইনাররা সাধারণত এই দুই ধরণের সফটওয়্যার দিয়েই বিজনেস কার্ড সংক্রান্ত সকল কাজ করে থাকেন।

তবে ইলাস্ট্রেটর ও ফটোশপ এই দুইয়ের কম্বিনেশনে একটি প্রফেশনাল মানের বিজনেস কার্ড তৈরি করা সম্ভব। অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর দিয়ে বিজনেস কার্ডের মূল ফরম্যাট আর লেখার ডিজাইন তৈরি করে অ্যাডোব ফটোশপে যেকোনো ছবি মডিফাই করে একটি মানসম্পন্ন বিজনেস কার্ড তৈরি করা যায়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ফাইলটি ইলাস্ট্রেটরে সেইভ করে নিতে হবে।

একটি মানসম্পন্ন বিজনেস কার্ড ডিজাইনের পূর্ববর্তী ও পরবর্তীকালীন কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। যেমনঃ

  • বিজনেস কার্ড তৈরির মূল উদ্দেশ্য নির্ধারণ
  • কার্ডের জন্য একটি উপযুক্ত লোগো নির্বাচন
  • কার্ডের সঠিক মাপ নির্ধারণ
  • কালার মোড, রেজুলেশন
  • প্রফেশনাল মূল তথ্য উপস্থাপন
  • সঠিক ফন্ট নির্বাচন
  • প্রিন্ট

১। বিজনেস কার্ড তৈরির মূল উদ্দেশ্য নির্ধারণঃ

বিজনেস কার্ড ডিজাইন ও তৈরির প্রথম দিকেই খেয়াল রাখতে হবে এটি কি উদ্দেশ্যে তৈরি করা হচ্ছে। মূলতঃ যেকোনো স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির ক্ষেত্রে নাম, ঠিকানা, মেইল অ্যাড্রেস, কন্ট্যাক্ট নাম্বার, পদবি, প্রতিষ্ঠানের লোগো প্রভৃতি বিষয় বিশেষ গুরুত্ব পাবে। অন্যদিকে নতুন চাকুরি প্রত্যাশী না ফ্রেশারদের ক্ষেত্রে তাদের ব্যক্তিগত দক্ষতা, নাম, ঠিকানা, ফোন নাম্বার প্রভৃতি বিষয় গুরুত্ব পাবে। তাই বিজনেস কার্ড তৈরির প্রথমেই এই বিষয়গুলো মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

maxresdefault

 

২। কার্ডের জন্য একটি উপযুক্ত লোগো নির্বাচনঃ

কার্ডের জন্য প্রথমেই একটি উপযুক্ত লোগো ডিজাইন করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে অনেকেই প্রফেশনাল গ্রাফিক ডিজাইনারদের দিয়ে এই কাজটি করিয়ে নেন। তবে Freelogoservices সহ আরও অনেক ফ্রি সাইট আছে যেখান থেকে যে কেউ তার প্রতিষ্ঠানের জন্য লোগো ডিজাইন করে নিতে পারেন।

547982-2pXlDq1506289993

 

৩। কার্ডের সঠিক মাপ নির্ধারণঃ

একটি আদর্শ বিজনেস কার্ড দু’রকম হতে পারে। ল্যান্ডস্কেপ ও পোট্রেট। ল্যান্ডস্কেপের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড মাপ হচ্ছে দৈর্ঘ্যে ৩.২৫ থেকে ৩.৫০ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ২ ইঞ্চি। পোট্রেটের ক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড মাপ হচ্ছে ল্যন্ডস্কেপের ঠিক উল্টো। অর্থাৎ দৈর্ঘ্যে ২ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ৩.২৫ থেকে ৩.৫০ ইঞ্চি।

এবার অনেকের মন প্রশ্ন জাগতে পারে প্রিন্টিং এর জন্য বিজনেস কার্ডের সঠিক মাপ কত নেয়া লাগবে! আসলে বিজনেস কার্ডের স্ট্যান্ডার্ড মাপের চেয়েও কিছু অতিরিক্ত মাপ নিয়ে রাখা হয়। একে ব্লিড সাইজ বলে।  বিজনেস কার্ডটির স্ট্যান্ডার্ড সাইজ যদি দৈর্ঘ্যে ৩.৫ ইঞ্চি এবং প্রস্থে ২ ইঞ্চি হলে এক্ষেত্রে ব্লিড সাইজ ০.৫ ইঞ্চি উভয় দিকে নেয়া যেতে পারে।

সম্পূর্ন ডিজাইনটি করা থাকে একটি আলাদা বক্সের ভিতরে এবং সেই বক্সটি থাকে Bleed Size এর ভিতরে, ঐ বক্সটিকে বলে সেইফ এরিয়া। প্রিন্ট করার পর কার্ডটি নিরাপদে কেটে নিতে হবে এবং সেইফ এরিয়ার বাইরের অংশ ফেলে দিতে হবে।

redlogo-business-card-design-with-DesignContest2

 

৪। কালার মোড, রেজুলেশনঃ

বিজনেস কার্ড তৈরির ক্ষেত্রে কালার মোড অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কন্সেপ্ট। ওয়েবের জন্য  সাধারণত RGB(Red, Green, Blue) এবং প্রিন্টিং এর জন্য CMYK (Cyan, Magenta, Yellow, Black) কালার মোডটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। বিজনেস কার্ড যেহেতু প্রিন্টিং করা হয়ে থাকে সেহেতু এটি CMYK মোডে ডিজাইন করতে হবে।

অপরদিকে কার্ডটি প্রিন্ট করার পর এর মান অনেকটাই রেজ্যুলেশানের উপরেও নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে রেজুলেশন অবশ্যই ৩০০ পিপিআই দিতে হবে।

5a2359c7266436e7424da261afa59128

 

৫। প্রফেশনাল মূল তথ্য উপস্থাপনঃ

বিজনেস কার্ডে সাধারণতঃ মূল তথ্যগুলোই উপস্থাপন করা বাঞ্ছনীয়। অযৌক্তিক কথাবার্তা না লিখে বরং গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রাসঙ্গিক তথ্যগুলোই এখানে উপস্থাপন করা উচিত। ধরা যাক, একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা তার নিজস্ব বিজনেস কার্ড তৈরি করতে চাচ্ছেন। এক্ষেত্রে তাকে অবশ্যই তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের লোগো, নাম, পদবি, মেইল অ্যাড্রেস, ফোন নাম্বার প্রভৃতি তথ্য প্রদান করতে হবে।

large__original_bullet-proof-business-card-sample

 

৬। সঠিক ফন্ট নির্বাচনঃ

বিজনেস কার্ডে সঠিক ফন্ট নির্বাচন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ একটি ভালো ফন্ট ক্লায়েন্ট বা গ্রাহকদের কাছে ভালো ইম্প্রেশন পাওয়ার জন্য গুরুদায়িত্ব পালন করে। তবে একেক ধরণের প্রফেশনের জন্য একেক ধরণের ফন্ট নির্বাচন করা জরুরি। ডিজাইনারদের কাছে ভিনাইল, ব্র্যান্ডন গ্রোটেস্ক, ফোকো, প্রক্সিমা নোভা, রেলয়ে, স্যালসবারি, রেশিও প্রভৃতি ফন্ট বেশ জনপ্রিয়। নিচে একেক প্রফেশনের জন্য কিছু ফন্টের তালিকা দেয়া হলোঃ

  • গ্রাফিক ডিজাইনারঃ Century Gothic Pro, VAG Rounded, Arnhem Pro প্রভৃতি।
  • ইন্টেরিয়র ডিজাইনারঃ Lado, Meta, Bembo Book প্রভৃতি।
  • ফটোগ্রাফারঃ Dido LT Pro, Odile, Aptifer Slab Light প্রভৃতি।
  • মেকাপ আর্টিস্টঃ MS PMincho, Actna JY Newstyle, Humanist 521 প্রভৃতি।
  • মার্কেটিং সেক্টরঃ Avant Garde Gothic, Officina Serif ITC Pro, Klint Medium প্রভৃতি।
  • ইঞ্জিনিয়ারঃ Elido, Frutiger, Baskerville প্রভৃতি।
  • ল’ ফার্মঃ Odile Initials, Georgia,DIN Next Rounded প্রভৃতি।
  • মিউজিশিয়ানঃ CabernetJF, Calligraphic 421 প্রভৃতি।
  • ম্যানেজমেন্টঃ Elido, Meta, Aptifer Slab Light প্রভৃতি।

mega_imports_logo_and_business_card_version_4_by_webhancher-d6b2idt

 

৭। প্রিন্টঃ

বিজনেস কার্ড ডিজাইন, লোগো ডিজাইন এবং অন্যান্য যাবতীয় কাজ শেষ হয়ে গেলে চলে আসে বিজনেস কার্ড প্রিন্ট এর প্রসঙ্গ। মূলতঃ প্রিন্টিং এর জন্য মূল ফাইলটিকে পিডিএফ ফরম্যাটে প্রিন্ট করা যেতে পারে। কিন্তু ইলাস্ট্রেটরের প্রিন্টিং অপশন থেকে বিজনেস কার্ডটি সরাসরি প্রিন্ট করা যায়। এক্ষেত্রে কোয়ালিটি অনেক ভালো থাকে। তবে অনেকে এটাকে জেপিজি ফরম্যাটে প্রিন্ট করে থাকেন। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রিন্টিং এর কোয়ালিটি ভালো আসে না। তাই এক্ষেত্রে ইলাস্ট্রেটর থেকে সরাসরি প্রিন্ট করাটাই সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।

BML-Properties-–-BML-Logo-Design-BML-Business-Card-3

 

সবশেষে বলা যায়, একটি বিজনেস কার্ড তৈরির সফলতা নির্ভর করে এর ডিজাইন থেকে শুরু করে প্রিন্টিং এর আগপর্যন্ত। লোগো ডিজাইন, সুন্দর ফন্ট নির্বাচন, প্রফেশনাল মূল তথ্য উপস্থাপন এবং প্রিন্ট এই সবগুলো ধাপ সুষ্ঠুভাবে অনুসরণ করতে পারলে অনেকাংশেই একটি সুন্দর বিজনেস কার্ড তৈরি করা সম্ভব যা যেকোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির একটি সুন্দর ইম্প্রেশন তৈরি করতে সাহায্য করে।

 

তথ্যসূত্রঃ

http://www.printaholic.com/top-45-best-font-for-business-cards-by-industry/

https://www.psprint.com/resources/powerful-business-card-fonts/

 

 

 

 

 

সকল মন্তব্য (0)

মন্তব্য করুন

ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য