তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে গ্রাফিক্স ডিজাইন হল শিল্পকলার অন্যতম একটি মাধ্যম। ডিজাইনার তার স্বকীয় শৈল্পিক চিন্তাচেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে পারে এই কাজের মাধ্যমে। সৃজনশীল কাজ হিসেবে নিজের অভিজ্ঞতা, রুচি, মননশীলতা আর ব্যক্তিত্বের অপূর্ব সমন্বয় ঘটানো সম্ভব একমাত্র গ্রাফিক্স ডিজাইনের মাধ্যমেই! সকল গ্রাফিক্স ডিজাইনারেরই কিছু মূলনীতি মেনে কাজ করতে হয়। এক্ষেত্রে তাদের ক্লায়েন্ট বা গ্রাহকের চাহিদা অনুসারে বিভিন্নরকম ডিজাইন তৈরি করতে হয়। বিভিন্ন ধরণের রং, লাইন, শেপ, ইমেজ, টেক্সার এবং এ্যানিমেশনের ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ডিজাইন পরিপূর্ণতা পায়। আর এটার আউটপুট প্রিন্ট, ডিজিটাল অথবা ইলেকট্রনিক্স মিডিয়া সহ বিভিন্ন মাধ্যমে হতে পারে।
যেকোনো প্রফেশনে সফল হওয়ার মূল চাবিকাঠি হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে অধ্যবসায় ও নিজের কাজকে ভালোবেসে প্রচুর পরিমাণে সেলফ স্টাডি করা। এদিক থেকে বিবেচনা করলে গ্রাফিক ডিজাইনাররাও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিভিন্ন টুলস এবং প্রযুক্তির সাথে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন। হয়তো শুরুর দিকে সকলকেই প্রচুর পরিমাণে সময় ব্যয় করতে হয় কাজ শেখার জন্য। কিন্তু সময়ের সাথে সাথে যখন নিজের কাজের প্রতি একটা আত্মবিশ্বাস চলে আসে তখন নিজ থেকেই কিছু টুলসের সাথে নিজেকে পরিচিত করিয়ে নিতে হয়।
আজ গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য অতি প্রয়োজনীয় কিছু অত্যাবশ্যকীয় টুলসের পরিচিতি দেয়ার চেষ্টা করবো।
যে টুলসগুলো নিয়ে কথা বলবো সেগুলো হচ্ছেঃ
১। Photoshop Lightroom CC:
গত অক্টোবর ২০১৭ তে রিলিজ পায় Photoshop Lightroom CC অ্যাপটি। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের উৎকর্ষতার ছোঁয়া পাওয়া এই অ্যাপটি গ্রাফিক ডিজাইনারদের জন্য বেশ চমৎকার কিছু ফিচার রেখেছে! এই অ্যাপটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে যেকোনো ছবিতে থাকা ইলিমেন্টসগুলোকে প্রয়োজনীয় কিওয়ার্ড দিয়ে ট্যাগ করতে সক্ষম। ফলে ম্যানুয়ালি এই একই কাজ করতে ডিজাইনারদের সময় করতে হতো সেটি লাঘব হবে। র’ ফাইলের জন্য আলাদা স্কেলেবল স্টোরেজ সিস্টেম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারের জন্য শেয়ার বাটন, অ্যাডোব পোর্টফোলিও ইন্টিগ্রেশন, আইওএস এবং অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমে সাপোর্টেবল এই অ্যাপটি গ্রাফিক ডিজাইনারদের কাজে আনবে আরও গতি!
২। Photoshop CC’s Curvature Pen tool:
Photoshop CC তে কার্ভড লাইন ড্রয়িংএর জন্য একটি অন্যতম টুলস এই Photoshop CC’s Curvature Pen tool। Bezier curves এর পরিবর্তে ড্রয়িং এবং পাথ মোডিফায়িং এর জন্য এই টুলসটি দিয়ে খুব সহজেই কাজ করা যায়। এই অ্যাপটির আকর্ষণীয় ফিচারটির মধ্যে রয়েছে ক্লিক করে পয়েন্টার অ্যাড করার সুযোগ, এর ফলে অ্যাড করা পয়েন্টারগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে কার্ভ তৈরি করে নেয়! এরপর শুধু পুশ এবং পুল সেগমেন্ট ব্যবহার করে কার্ভগুলো মোডিফাই করা যাবে। টুলস প্যানেলের পেন টুলসের নিচেই এই অসাধারণ Photoshop CC’s Curvature Pen টুলসটি পাওয়া যাবে।
৩। Illustrator CC’s Puppet Warp tool:
Adobe Photoshop CS5 ভার্সন থেকেই পাপেট টুলসটি পরিচিত। কিন্তু গত অক্টোবর ২০১৭ Adobe Illustrator CC ভার্সনে Puppet Warp টুলসটি এনেছে। তবে Adobe Illustrator CC তে থাকা টুলটির ভিন্নতা হচ্ছে এটি ভেক্টর ভার্সন। এই টুলসটি দিয়ে কোনো ইমেজের যেকোনো স্থানে চিহ্নিত করে র্যাপ, টুইস্ট, ডিসর্টের মতো অপারেশনগুলো করা যায় পিনগুলো নাড়াচাড়ার মাধ্যমে। মজার ব্যাপার হচ্ছে শুধু চিহ্নিত করা অংশগুলোই এসব অপারেশনের মাধ্যমে পরিবর্তন করা যাবে। আনসিলেক্টেড এরিয়াগুলো যথারীতি অপরিবর্তিত থাকবে! টুলস প্যানেলের ফ্রি ট্র্যান্সফর্ম টুলসের নিচে এই Illustrator CC’s Puppet Warp টুলসটি পাওয়া যাবে।
৪। Cineware for Illustrator:
টু-ডি গ্রাফিক্স ও ত্রি-ডি গ্রাফিক্সকে একত্র করতে এক অসাধারণ টুলস এই Cineware for Illustrator। এই অপারেশনটি পূর্বে Project Felix নামে পরিচিত ছিলো। অবাক করা ব্যাপার হচ্ছে, আপনার Cinema 4D এর লাইসেন্স না থাকলেও এই টুলস এর মাধ্যমে অনায়াসেই আপনি Cinema 4D এর অ্যাসেটগুলো ব্যবহার করতে পারবেন!
৫। InVision Studio:
অনেকে এই টুলসটিকে “পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী স্ক্রিন ডিজাইন টুলস” হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। গত এক বছর যাবত এই সফটওয়্যারটি ওয়েব ও অ্যাপ প্রোটোটাইপিং টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইনভিশন স্টুডিওর ডেভেলপাররা সামনে আরেকটি নতুন ভার্সন আনতে যাচ্ছেন যেখানে ইউআই ডিজাইন ইম্পোর্ট করার জন্য একের অধিক অ্যাপ ব্যবহার করার দরকার পড়বে না।
৬। Lightwell:
কোডিং এর জ্ঞান না থাকা সত্ত্বেও অনেক টুলস আছে যা আপনাকে যেকোনো অ্যাপসের প্রোটোটাইপ তৈরি করতে সহায়তা করে! Lightwell হচ্ছে এমন একটি টুলস যা আপনাকে কোডিং এর দক্ষতা না থাকলেও মোবাইল অ্যাপস তৈরি করতে সাহায্য করবে! এটি এখন আপাততঃ iPhone, iPad and OS X ডিভাইসে ব্যবহার করা যাচ্ছে। এই টুলসের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এতে আপনি যেকোনো টু-ডি ডিজাইন আপলোড করে সুন্দর সুন্দর ইন্টারএকটিভ অ্যাপস তৈরি করতে পারবেন। ডিজাইনার, আর্টিস্ট, ছাত্র ও ক্রিয়েটিভ এজেন্সিগুলোর দিকে নজর রেখে এই টুলসটি কাজে অনেক গতিশীলতা আনবে আশা করা যায়!
৭। Wake (free version):
এটি ডিজাইনারদের মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগ রক্ষা এবং কাজ করার জন্য একটি অত্যাবশ্যক টুলস। গত বছর এর নির্মাতারা ফ্রিল্যান্সার ও ছোট ছোট স্টার্টআপগুলোর জন্য একটি ফ্রি ভার্সন রিলিজ করেছে। এই টুলসটির মাধ্যমে একজন ডিজাইনার খুব সহজেই স্কেচ, ফটোশপ কিংবা ইলাস্ট্রেটরে করা কাজ সরাসরি অপর একজন ডিজাইনারের সাথে শেয়ার করতে পারবেন। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সকল অ্যাসেট খুঁজে পেতে কিংবা অফিসে না থেকেও অফিসের সকল খবরাখবর পেতেও সাহায্য করবে এই অসাধারণ টুলসটি!
৮। Photoshop CC’s Select Subject:
এক ক্লিকেই যেকোনো ইমেজের মূল বস্তুটি খুঁজে পেতে Photoshop CC’s Select Subject টুলসটির জুড়ি নেই! অ্যাডোবের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ফিচার সমৃদ্ধ এই টুলসটি দিয়ে অনেক জটিলতর ছবিরও মূল অংশটুকু খুঁজে আলাদা করা যায়।
৯। Easle:
এই টুলসটি দিয়ে হয়তো ডিজাইনে কোনো সাহায্য আসবে না, কিন্তু এই টুলসটিকেই আপনি সবার উপরে রাখতে চাইবেন যদি আপনি একজন প্রতিশ্রুতিশীল দক্ষ ডিজাইনার হন। Easle সব বড় বড় ইন্ডাস্ট্রির লিডারদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত একটা প্ল্যাটফর্ম যেখানে আপনি আপনার কাজের নমুনা দিয়ে ভালো ভালো সব প্রতিষ্ঠানে জবের জন্য অ্যাপ্লাই করতে পারবেন। সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে, এখানে আপনি কোনো থার্ড পার্টির এজেন্টের ঝামেলা থাকবে না! কাজের সুনিপুণতাই আপনাকে কাজ এনে দিবে!
উপরে বর্ণিত টুলসগুলো সকল প্রতিষ্ঠিত গ্রাফিক ডিজাইনারেরই কাজে আনবে গতিময়তা, স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ ও ঝামেলাহীন!
তথ্যসূত্রঃ
https://www.creativebloq.com/inspiration/9-tools-to-make-graphic-design-easier-in-2018
https://www.youtube.com/
Khurshida
31 January, 2024 at07:32:02 AM,
আমি শিখতে চাই
Hasan Jubair
31 January, 2024 at08:42:49 PM,
আমাদের বাংলা টিউটোরিয়াল আছে। সেগুলো দেখে শিখতে পারেন।