দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে অধ্যয়নের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মেকানিক্যালে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের অটোক্যাডের পরপরই প্রথম যে থ্রিডি সফটওয়্যারটি আয়ত্ত্বে আনতে হয় তা হল সলিডওয়ার্কস। সলিডওয়ার্কস এর স্কিল ছাড়া এখন দেশে-বিদেশের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করা প্রায় অসম্ভব। এখন ডিজাইন ইঞ্জিনিয়াররাই যে শুধু মেকানিক্যাল ডিজাইন নিয়ে কাজ করেন তা কিন্তু না; সেই ডিজাইনারদের ডিজাইন বুঝে সে অনুযায়ী মেশিন মেইনটেইনেন্সের কাজ করা ও মেশিন অপারেশনের জন্যও ভাল ডিজাইনিং সেন্স থাকা জরুরী। তাই মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীরা এখন ধীরে ধীরে ঝুঁকে পড়ছেন সলিডওয়ার্কস এর দিকে।
মেকানিক্যালের শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবনের প্রথমদিকে ক্যাড ডিজাইনের সাথে পরিচিত হন অটোক্যাড দিয়ে।পরবর্তীতে তাদের হাতেখড়ি হয় থ্রিডি ডিজাইনের আসল হাতিয়ার সলিডওয়ার্কস এর সাথে। আসলে সলিডওয়ার্কস বিশ্বব্যপী এত জনপ্রিয় হওয়ার প্রধান কারণ হল এর ব্যবহারে সহজতর হওয়া। এর ইউজার ইন্টারফেস খুবই সাধারণ কিন্তু আকর্ষণীয়। এর প্রতিটি ভার্শনেই থাকে অনেক নিত্য নতুন চমক। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীরা অনেকে সলিডওয়ার্কস ২০১৪ ভার্শন দিয়ে কাজ শেখা শুরু করলেও এখন বেশির ভাগ ই সলিডওয়ার্কস ২০১৬ ব্যবহার করেন। সলিডওয়ার্কস ২০১৬ এর জন্য ৮ জিবি র্যাম এবং গ্রাফিক্স কার্ড দরকার হয়। এর পরের ভার্শনগুলোয় আরো ভাল কনফিগারেশনের কম্পিউটার দরকার হয় বলে এই ভার্শনগুলো আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত খুব কম ইঞ্জিনিয়াররা ব্যবহার করে থাকেন।
অনেক শিক্ষার্থী শিক্ষাজীবনের প্রথম বর্ষ থেকেই জড়িয়ে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের রোবোটিক্স ক্লাবে।রোবোটিক্স নিয়ে কাজ করে কেউ সলিডওয়ার্কস এর নাম শোনেনি এটা প্রায় অসম্ভব। আসলে সলিডওয়ার্কস ও রোবোটিক্স যেন একে অন্যের পরিপূরক। রোবোটের বিভিন্ন জটিল ডিজাইন, ম্যাটেরিয়াল, বিভিন্ন জটিল এসেম্বলি সবই খুব সহজেই তৈরি করে নেয়া যায় সলিডওয়ার্কস সফটওয়্যারের সাহায্যে। এর ম্যাস ক্যালকুলেশন করে এপ্লিকেশনের উপর নির্ভর করে হালকা বা ভারী ম্যাটেরিয়াল সিলেক্ট করে খুব সহজেই ধারণা নেয়া যায় সলিডওয়ার্কস এর সাহায্যে।এছাড়াও, একটি রোবোটের প্রোটোটাইপ তৈরি করে তার সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো প্রথমেই সলিডওয়ার্কস এর মাধ্যমে জেনে নেয়া রোবোটিক্সের মত জটিল কাজকেও অনেক নিখুঁত করে তোলে।
অনেক মেকানিক্যালের শিক্ষার্থীই শিক্ষাজীবনে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেইনিং এ যান এবং অনেকেই বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে ইন্টার্নশিপ করেন। স্টিল ইন্ডাস্ট্রি, শিট মেটাল ইন্ডাস্ট্রিসহ বিভিন্ন ধরণের ইন্ডাস্ট্রিতে করা এ ধরণের ট্রেইনিং বা ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে এতদিন সলিডওয়ার্কসে করা বিভিন্ন ধরণের কাজ বাস্তবে দেখার সৌভাগ্য হয় তখন এই শিক্ষার্থীদের। সলিডওয়ার্কসে সারফেস, ওয়েল্ডমেন্ট ও শিট মেটাল ট্যাবের মাধ্যমে করা বিভিন্ন ডিজাইন ফেইলিউরের কারণ বাস্তব জীবনে না দেখলে কেউ বুঝতে পারবে না। তাই এ ধরণের বাস্তবমুখী অভিজ্ঞতা নিশ্চিতভাবেই সলিডওয়ার্কস ডিজাইনারদের জন্য খুবি উপকারী। এসব দিক বিবেচনা করে, সলিডওয়ার্কসে শুধু বিভিন্ন নান্দনিক ডিজাইন করলেই হবে না, তা বাস্তব জীবনে কতটা প্রয়োগযোগ্য ও সাশ্রয়ী তাও মাথায় রাখতে হবে।
শিক্ষা জীবন শেষ করেই দেশের বেশির ভাগ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার যোগদান করেন দেশের বিভিন্ন সনামধন্য ইন্ডাস্ট্রিতে। ইন্ডাস্ট্রিয়াল অভিজ্ঞতা আসলেই অনেক বর্ণিল। এতদিন পড়ে আসা ভারী ভারী সব থিওরি এখন বাস্তব জীবনে মিলিয়ে দেখার অভিজ্ঞতা আসলেই অসাধারণ। তবে, যেসব মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ক্যাড ডিজাইনে পারদর্শী, তাদের জন্য এসব বড় বড় মেশিনের ডিজাইন দেখে তার এসেম্বলি করা কোন ব্যপারই না। সলিডওয়ার্কস ডিজাইন যে শুধু ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ারদেরই কাজে লাগে তা না, যেকোন ইঞ্জিনিয়ারই যেকোন কমপ্লেক্স ড্রয়িং খুব সহজে ধরে ফেলতে পারবেন তার যদি সলিডওয়ার্কসে ডিজাইনিং এর অভিজ্ঞতা থাকে। এ থেকেই আমরা সহজেই বুঝতে পারছি যে, সলিডওয়ার্কসে ডিজাইনিং এর অভিজ্ঞতা একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারকে করে তোলে অন্য সবার চেয়ে আলাদা।
অনেকে আবার শিক্ষাজীবন শেষে সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ইঞ্জিনিয়ার পোস্টে পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন।লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার বাঁধা টপকে যারা শেষ পর্যন্ত সরকারী চাকুরির সোনার হরিণকে ধরতে পারেন তারা রূপপূর পারমাণবিক বিদ্যুত প্রকল্প, পিজিসিবি, পিডিবি এরকম বিভিন্ন সরকারী চাকুরিতে যোগদান করেন। এখন যেহেতু বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে এগুচ্ছে, তাই সরকারী কর্মকর্তাদের জন্যও এখন সফটওয়্যারে পারদর্শিতা অতীব প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে। মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের ক্ষেত্রে সলিডওয়ার্কসে পারদর্শিতার যে কোন বিকল্প নেই তা বলাই বাহুল্য।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল প্রোডাক্ট ডিজাইন। যেকোন প্রোডাক্ট ডিজাইনিং এর ক্ষেত্রে অনেক বিষয় একজন মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের মাথায় রাখতে হয়। প্রথমতঃ কি ম্যাটেরিয়াল দিয়ে প্রোডাক্ট তৈরি করতে হবে ও তা কোথায় ব্যবহৃত হবে ? কারণ, প্লাস্টিক দিয়ে একটি প্রোডাক্ট বানালে তা হয়ত কক্ষ তাপমাত্রায় ব্যবহার করা যায় এমন ক্ষেত্রেই শুধু কাজ করবে; কিন্তু এই প্রোডাক্ট উচ্চ তাপমাত্রায় ব্যবহার করা যাবে না যেহেতু প্লাস্টিক উচুঁ তাপমাত্রায় গলে যায়। এজন্য মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা ম্যাটেরিয়ালস সিলেকশন ডায়াগ্রাম ব্যবহার করে থাকেন; যার মাধ্যমে খুব সহজেই অপটিমাম প্রোপার্টিসহ ম্যাটেরিয়াল খুঁজে পাওয়া যায়। দ্বিতীয়তঃ পণ্যের মূল্য কীভাবে সাধ্যের মাঝে রাখা যাবে? ধরুন, একজন ইঞ্জিনিয়ার একটি পণ্য সঠিক কিন্তু দামি ম্যাটেরিয়াল দিয়ে বানালেন; যে পণ্যটি আরো কম দামি ও তুলনামূলক টেকসই ম্যাটেরিয়াল দিয়ে বানান যেত। আর ধরুন প্রোডাক্টি ব্যবহারও করা হবে দৈনন্দিন কাজে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করা হবে এমন কোন ক্ষেত্রে। তাহলে, কি সাধারণ মানুষজন এরকম কোন প্রোডাক্ট এত দাম দিয়ে কিনতে পারবেন? এর উত্তর অবশ্যই হবে, “না”। তাই সহজেই বলা যায় যে, ইঞ্জিনিয়ার তার প্রোডাক্ট সিলেকশনের সময় দামের ব্যপারটা পুরোপুরি ভুলে গিয়েছিলেন। ইঞ্জিনিয়ারিং কস্ট ম্যানেজমেন্টের এই বিষয়টি অন্য ইঞ্জিনিয়ারদের মত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্যও খুবি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আর এই কাজগুলি একজন ইঞ্জিনিয়ার সলিডওয়ার্কস সিমুলেশন টেকনিক ব্যবহার করে সফটওয়্যারের মাধ্যমে সেন্টার অফ গ্র্যাভিটি, ম্যাস ক্যালকুলেশন, ক্রিটিক্যাল এরিয়া সিলেকশন প্রভৃতির মাধ্যমে খুব সহজেই করে ফেলতে পারেন।
তাই, এখন যারা মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়াশুনা করছেন বা যারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করছেন তাদের জন্য সলিডওয়ার্কসের এই থ্রিডি জগতে তাড়াতাড়ি প্রবেশ করে এর স্বাদ আস্বাদন করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
সলিডওয়ার্কসের অফিসিয়াল ওয়েবসাই্টের লিংকঃ https://www.solidworks.com
Mish
23 July, 2019 at03:23:46 AM,
I read carefully, help me a lots simple
Eng. Ali Kaiser
23 July, 2019 at08:32:48 AM,
Thank you very much. Your reply means a lot to us.We will try to help you as much as we can.