ওয়েব ডিজাইন মানে হচ্ছে একটি ওয়েবসাইটের আউটলুক বা সাধারণ রূপ। ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে আপনার কাজ হবে একটি পূর্ণাঙ্গ ওয়েবসাইটের টেম্পলেট বানানো। যেমন ধরুন একটি ওয়েবসাইটের লে-আউট কেমন হবে। হিডারে কোথায় মেনু থাকবে, সাইডবার হবে কিনা, ইমেজগুলো কীভাবে প্রদর্শন করবে ইত্যাদি। ভিন্নভাবে বলতে গেলে ওয়েবসাইটের তথ্য কী হবে এবং কোথায় জমা থাকবে এগুলো চিন্তা না করে, তথ্যগুলো কীভাবে দেখানো হবে সেটা নির্ধারণ করাই হচ্ছে Web designer এরর কাজ। আর এ ডিজাইন নির্ধারণ করতে ব্যবহার করতে হবে কিছু প্রোগ্রামিং, স্ক্রিপ্টিং ল্যাঙ্গুয়েজ এবং মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ। অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে আয়ের যেসব পদ্ধতি রয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি কাজের সুযোগ রয়েছে ওয়েব ডিজাইনারদের জন্য। এর একটি প্রধান কারণ হচ্ছে ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ওয়েব এর ওপর নির্ভরশীলতা। একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠান একদিকে যেভাবে তার গ্রাহকদের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম, অপরদিকে বিভিন্ন শহরে বা বিভিন্ন দেশে অবস্থিত নিজস্ব শাখার সাথে আন্তঃযোগাযোগও সহজে এবং কম খরচে করতে পারে। অনেকেই মনে করে থাকেন কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশুনা না করলে ওয়েব ডিজাইন শেখা কষ্টকর, এটা অনেক ভুল ধারণার মধ্যে একটি। কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে যারা পড়াশোনা করে তাদের ক্যারিয়ার পাথ টা আসলে হওয়া উচিত একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। কিন্তু, খুব কম সংখ্যক’ই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হবার সুযোগটি পায়, কারন আমাদের দেশে কাজের সুযোগ সীমিত। গুগল, মাইক্রোসফট এর মত বড় বড় কোম্পানিতে বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের সেরা মেধাবীরা অনায়াসেই চাকরি পেয়ে যায়।
কিন্তু এ দেশে বাকিরা ওয়েব ডেভেলপার হিসেবে কোম্পানি গুলোতে জয়েন করে ওয়েব অ্যাপ্লিকেশন, সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট, ডেক্সটপ এপ্লিকেশন অথবা কোন টিম লিড হিসেবে কাজ করে। অনেকে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে গড়েন নিজের স্বপ্নের ক্যারিয়ার। বর্তমানে বাংলাদেশে ফ্রিলান্সিং একটি বিরাট সম্ভাবনাময় পেশা হিসেবে দাঁড়িয়েছে এবং বর্তমানে আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মরা এর ব্যাপক সফলতা অব্যাহত রেখেছে।
ওয়েব ডিজাইন হচ্ছে একটা ওয়েবসাইটের বাহ্যিক গঠন। ওয়েব ডিজাইনারের মুল কাজ সাইটের জন্য টেমপ্লেট (ওয়েবপেজ) বানানো। অর্থাৎ এপ্লিকেশন ছাড়া বাকি অংশ তৈরী করা। যেমন লগিন সিস্টেম, নিউজলেটার সাইনআপ, জিনেশন, ফাইল আপলোড করে ডেটাবেসে সেভ করা, ইমেজ ম্যানিপুলেশন, যদি সাইটে বিজ্ঞাপন থাকে তাহলে প্রতিবার পেজ লোড হওয়ার সময় বিজ্ঞাপনের পরিবর্তন এগুলি এপ্লিকেশন, ওয়েব এপ্লিকেশন । এসব তৈরী করতে হয় প্রোগ্রামিং ল্যাংগুয়েজ দিয়ে । কোন প্রকার এপ্লিকেশন ছাড়া একটা সাইট তৈরী করাই হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন, এধরনের ডিজাইনকে বলতে পারেন স্টাটিক ডিজাইন।
আমরা প্রথমেই যে ভুলটি করি, সেটি হল ওয়েব ডিজাইন আর ডেভেলপমেন্ট কে একই মনে করি । ওয়েব ডিজাইন আর ওয়েব ডেভেলপমেন্ট দুইটি সম্পূর্ণ ভিন্ন। আসলে আমরা ডিজাইন বলতে কি বুঝি? কোন কিছু তৈরি করাই ডিজাইন, আর একটি ওয়েবপেজ এর দৃশ্যমান অংশ তৈরি করা হচ্ছে ওয়েব ডিজাইন । আর ওয়েব ডেভেলপ হচ্ছে ওয়েবসাইট এর প্রান।
প্রথমেই আপনাকে কাজ শিখতে হবে । অনেক সময় আর পরিশ্রম দিতে হবে । পরিশ্রম এর কোন বিকল্প নেই । যেকোনো কাজেই আপনাকে সফল হতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে । ওয়েব ডিজাইন নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন । ওয়েব ডিজাইন নিয়ে যত পারবেন জানার চেষ্টা করুন । নিজের মনকে স্থির করুন । লক্ষ স্থির করুন । আপনার লক্ষ একটাই আপনাকে একজন ভালো এবং সফল ওয়েব ডিজাইনার হতে হবে । ধীরে ধীরে মনোযোগ সহকারে কাজ শিখতে থাকুন । শেখার পাশাপাশি যা শিখেছেন তা নিয়েই কাজ করুন । নিজে নিজে এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন । বিভিন্ন ব্লগ পড়ুন, বই পড়ুন । ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন না । ধৈর্য যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ধৈর্য সহকারে কাজ শিখতে থাকুন আর করতে থাকুন । প্রকৃতপক্ষে বাহ্যিকভাবে দেখলে কম্পিউটার সায়েন্স থেকে পাস করা ছাত্রদেরই বেশি সফল হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বেশিরভাগ ওয়েডেভেলপমেন্ট সম্পর্কিত অফিসগুলোতে গেলেই যে তথ্য পাওয়া যায়, সেখানে দেখা যায় ৯০ ভাগ ওয়েবডেভেলপারের এডুকেশন ব্যাকগ্রাউন্ড ভিন্ন। এ চিত্রটি মোটেই ব্যতিক্রম কিছু নয়, সব জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে একই ঘটনা ঘটছে। আশা করি ওপরের ঘটনাটি দিয়ে বোঝাতে পেরেছি, ওয়েব ডিজাইনার হতে হলে কম্পিউটার সায়েন্স ব্যাকগ্রাউন্ড থাকার প্রয়োজন নেই। এখন আসল কথায় আসি ওয়েব ডিজাইন শিখতে হলে মূলত যা যা লাগবে-
১। এইচটিএমএল : এইচটিএমএল বা হাইপা টেক্সট মার্কআপ ল্যাঙ্গুয়েজ জানতে হবে। এটার কাজ মূলত কিছু ট্যাগ ব্যবহার করে ওয়েব পেজ গঠন করা। এগুলো মানুষ পড়তে পারে। প্রোগ্রামিং ভাষা এর মতো হাবিজাবি ‘হযবরল’ ভাষা না। এগুলোতে কিছু পরিচিত শব্দ ব্যবহার করা হয়। এইচটিএমএলকে ওয়েব পেজের কংকাল বলা হয়। এটি ওয়েব পেজের গঠন তৈরি করে।
২। সিএসএস : সিএসএস বা কেসক্যাডিং স্টাইল শিট জানতে হবে। এটি দিয়ে মূলত ওয়েব পেজগুলো ডিজাইন করা হয়। শুধু এইচটিএমএল দিয়ে ওয়েবপেজ বানালে তা শুধু কিছু লেখা মাত্র দেখা যাবে। কিন্তু সেই ওয়েব পেজকে সুন্দর রূপ দিতে হলে আপনার দরকার হবে সিএসএস। এইচটিএমএল হচ্ছে ওয়েব পেজের কংকাল আর সিএসএস হচ্ছে তার ওপরে মাংস, চামড়া ইত্যাদি। বুঝতেই পারছেন, সিএসএস ছাড়া এইচটিএমএল একটি কংকাল এর মতোই দেখাবে। সিএসএস এইচটিএমএল এর গঠনে রূপ দেয়।
৩। জাভাস্ক্রিপ্ট অথবা জেকুয়েরি : এই দুটোকে মূলত প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজের কিছুটা কাছাকাছি ধরা যায়। মূলত দুটি জিনিসের কাজ একই তবে জেকুয়েরি হচ্ছে জাভাস্ক্রিপ্টেরই একটা রূপ যা সাইটে জাভাস্ক্রিপ্ট ব্যবহারকে অনেকটাই সহজ করে। আর এগুলোর কাজ হচ্ছে সাইটটা ইন্টারেক্টিভ করা। অর্থাৎ ভিজিটর একটা বাটনে ক্লিক করলে মেনু ওপেন হবে। অথবা একটা ফর্ম সাবমিট করলে কনফার্মেশন মেসেজ দেখাবে ইত্যাদি।
৪। ফটোশপ : ওয়েব ডিজাইনের জন্য ফটোশপ এ জ্ঞান থাকা জরুরি। ছোটখাটো কাজের জন্য আপনাকে ফটোশপ জানতে হবে। তবে খুব ভালো জানা লাগবে এমন কোনো কথা নয়।
৫। ইলাস্ট্রেটর: ওয়েব ডিজাইনের জন্য অবশ্যই আপনাকে ইলাস্ট্রের শিখতে হবে। ওয়েব ডিজাইন সাথে ইলাস্ট্রেটরের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। ব্যানার, আইকন, লগো সহ অনেক ইলিমেন্টসই ইলাস্ট্রেটরে তৈরী করা হয়।
৬। আপডেট : এইচটিএমএল ৫ ও সিএসএস ৩ জানতে হবে। এগুলো মূলত যথাক্রমে এইচটিএমএল ও সিএসএস এর নতুন ভার্সন। এগুলো শিখতে হলে অবশ্যই প্রথমে এইচটিএমএল ও সিএসএস সম্বন্ধে জানতে হবে। এছাড়া সিএসএস ফ্রেমওয়ার্ক, রেস্পন্সিভ ডিজাইন ইত্যাদি শিখতে হবে।
একজন ওয়েবে ডিজাইনার ওয়েব ডিজাইন করে সাধারণত আয় করে থাকেন । কিন্তু একজন ওয়েব ডিজাইনারের রযেছে অনেক প্রকার অনলাইনে আয়ের সুযোগ। আসুন জেনে নেই একজন ওয়েব ডিজাইনার ওয়েব ডিজাইন ব্যাতীত আর কি কি উপায়ে আয় করতে পারে ? ওয়েব ডিজাইন কে যারা পেশা হিসাবে নিয়েছেন তাদের এই মুহুর্তে অনলাইনে আয়ের সুযোগ সবচেয়ে বেশী। বর্তমানে অধিকাংশ ব্যবসা হয় সম্পুর্ণ অনলাইন ভিত্তিক অথবা অনলাইনে শক্তিশালী উপস্থিতি আছে । অনলাইনে ব্যবসার এই উপস্থিতি একজন ওয়েব ডিজাইনার বা ডেভেলপারের আয়ের সুযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
কেমন হতে পারে আয়ঃ
একজন ওয়েব ডিজাইনার এর গড় বেতন ৭৭,০০০ ডলার । সর্বনিম্ন বেতন ৪০,০০০ডলার এবং সর্বোচ্চ বেতন ৮৫,০০০ ডলার ।
কিছু উচ্চ বেতন প্রদানকারী দেশঃ
কিছু নিম্ন বেতন প্রদানকারী দেশঃ
বাংলাদেশ একজন ওয়েব ডিজাইনার এর বেতন প্রায় ১৫০০০ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫০০০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে।
রয়েছে ফ্রীল্যান্স মার্কেট প্লেস এ কাজ করার সুযোগ । ফ্রীল্যান্স মার্কেট প্লেস এ আপনি কাজ করতে পারেন একজন ফ্রীল্যান্সার হিসেবে । ফ্রীল্যান্স মার্কেট প্লেস এ একজন ওয়েব ডিজাইনার এর ঘন্টায় রেট সর্বোচ্চ ৫০ ডলার পর্যন্ত (প্রায়) এর বেশি ও হতে পারে! মোটামোটি নতুনদের ঘন্টায় রেট ৪-৫ ডলার (ভালো মানের ওয়েব ডিজাইনার)। অর্থাৎ প্রতিদিন ৫ ঘন্টা কাজ করলে আপনার প্রতিদিন ২৫ ডলার এবং মাসে ৬০০ ডলার অর্থাৎ প্রায় ৪৮০০০ টাকা ।
এছাড়া আপনি ওয়েব ডিজাইন এর উপর ব্লগিং করে অর্থাৎ লেখালেখি করে আয় করতে পারেন মাসে ৫০০০০ হাজার টাকার বেশি । এক্ষেত্রে আর্টিকেল লিখে বিক্রি করে বা নিজের ব্লগ এ পোস্ট করে আয় করতে পারেন । নিজের ব্লগ হলে গুগল এডসেন্স থেকে ভালো আয় করতে পারবেন ।
এছাড়াও আরো অনেক সুযোগ সুবিধা রয়েছে ওয়েব ডিজাইনার হিসেবে কাজ করার । আপনি একটি ব্যবসা শুরু করতে পারেন । আপনি বিভিন্য থীম বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন । বিভিন্ন ইফেক্ট বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন । ওয়েবসাইট লেয়াউট বানিয়ে বিক্রি করতে পারেন । কোন ফরেইন অফিস এ অনলাইন এই চাকরী করতে পারেন । আপনার একটি মুক্ত স্বাধীন ক্যারিয়ার হবে । একটি উন্নত ক্যারিয়ার হবে । ভার্চুয়াল জগতে একটি অন্য রকম পরিচয় সৃষ্টি হবে । পাবেন প্রচুর সম্মান ।
ওয়েব ডিজাইনার হতে হলে আগে আপনাকে ওয়েব ডিজাইন সম্পর্কে জানতে হবে । ওয়েব ডিজাইন সম্বন্ধে ভাল মত বুঝতে হবে । আমি আশা করছি এই টিউন এ আমি মোটামোটি বোঝাতে পেরেছি । এবার আপনি ভেবে দেখুন, ওয়েব ডিজাইন কি আপনার ভালো লাগে? এর প্রতি কি আপনার সত্যিকার অর্থে আগ্রহ আছে? এই ভাল লাগা বা আগ্রহের কারণ যদি হয় শুধু আয় করা বা টাকার লোভ তাহলে ওয়েব ডিজাইন শেখার বা ওয়েব ডিজাইনার হবার কথা ভুলে যান । আর যদি সত্যি সত্যি মন থেকে আপনার ওয়েব ডিজাইন ভাল লাগে এবং আগ্রহ আছে । তাহলে আপনি ওয়েব ডিজাইনার হতে পারবেন । ওয়েব ডিজাইনার হতে হলে আপনাকে সবার আগে নিজেকে প্রস্তুত করে নিতে হবে । নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করবেন সেটা নিয়ে আমি পরের পর্বের একটি টিউনে আলোচনা করেছি । প্রথমেই আপনাকে কাজ শিখতে হবে । অনেক সময় আর পরিশ্রম দিতে হবে । পরিশ্রম এর কোন বিকল্প নেই । যেকোনো কাজেই আপনাকে সফল হতে হলে অনেক পরিশ্রম করতে হবে । ওয়েব ডিজাইন নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন । ওয়েব ডিজাইন নিয়ে যত পারবেন জানার চেষ্টা করুন । নিজের মনকে স্থির করুন । লক্ষ স্থির করুন । আপনার লক্ষ একটাই আপনাকে একজন ভালো এবং সফল ওয়েব ডিজাইনার হতে হবে । ধীরে ধীরে মনোযোগ সহকারে কাজ শিখতে থাকুন । শেখার পাশাপাশি যা শিখেছেন তা নিয়েই কাজ করুন । নিজে নিজে এসব নিয়ে ঘাটাঘাটি করুন । বিভিন্ন ব্লগ পড়ুন, বই পড়ুন ।ধৈর্য হারিয়ে ফেলবেন না । ধৈর্য যেকোনো কাজের ক্ষেত্রে অনেক গুরুত্বপূর্ণ । ধৈর্য সহকারে কাজ শিখতে থাকুন আর করতে থাকুন ।
ariful
1 May, 2017 at12:10:49 AM,
i agree
ariful
1 May, 2017 at12:11:16 AM,
yes
Abdul Mannan Bissas
12 October, 2017 at11:19:41 AM,
অসাধারন লেখা ।