ডিজাইন সেক্টর ক্রমশ পরিবর্তনশীল। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ডিজাইনাররাও তাদের মেধা, শ্রম এবং চিন্তাশীলতাকে আধুনিক করে যাচ্ছেন। ফ্যাশন, টেকনোলজি, আর্কিটেকচার থেকে ম্যানুফ্যাকচারিং পর্যন্ত প্রত্যেকটি সেক্টরে “ডিজাইন” শব্দটি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। তাই এই প্রত্যেকটি সেক্টরেই একজন সুদক্ষ ডিজাইনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হয়তো সবার সাথে ডিজাইনার শব্দটি জড়িত, কিন্তু সেক্টরের ভিন্নতায় একেকজনের উপর একেকধরনের দায়িত্ব বর্তায়।
আজ আমি বিভিন্ন সেক্টরের ডিজাইনারদের পরিচিতি, দায়িত্ব ও দক্ষতা নিয়ে আলোচনা করবো। প্রায় সবগুলো সেক্টর বিবেচনা করলে সাধারণভাবে আমরা বেশ কয়েকধরণের ডিজাইনার দেখতে পাই।
ভিজ্যুয়াল কমিউনিকেশনের জন্য গ্রাফিক ডিজাইন একটি অন্যতম মাধ্যম। লোগো থেকে বিলবোর্ড পর্যন্ত সকল ধরণের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার ও প্রসারণের জন্য কনসেপ্ট, আইডিয়া ও ডিজাইনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো পালন করেন একজন গ্রাফিক ডিজাইনার। টাইপোগ্রাফি, শেইপ, কালার কিংবা ইমেজ – এই সকল কিছু নিয়ে একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের জগত। তারা গ্রাহক বা কনজিউমারদের কোনো একটি নির্দিষ্ট পণ্য কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করানোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাটি পালন করে থাকেন। স্ট্যাটিক ইমেজ থেকে শুরু করে কোনো ওয়েব পেইজের লেআউট ডিজাইনের কাজগুলো তারা Adobe Photoshop, Adobe Illustrator, InDesign সফটওয়্যারের মাধ্যমে করে থাকেন। প্রিন্টেড ম্যাটেরিয়ালস (যেমনঃ ম্যাগাজিন, ব্রশিউর প্রভৃতি) ডিজাইনের সাথে যারা জড়িত থাকেন তাদের প্রিন্ট ডিজাইন বলে।
গ্রাফিক ডিজাইনারদের কাজের ক্ষেত্রঃ
দক্ষতাঃ Photoshop, Illustrator, InDesign
ল্যান্ডিং পেইজ, ব্লগ টেম্পলেট, ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে মোবাইল অ্যাপস পর্যন্ত -এই সকল কিছুর ডিজাইনের সাথে একজন ওয়েব ডিজাইনার ওতপ্রোতভাবে জড়িত। ডিজাইনের পাশাপাশি একজন ওয়েব ডিজাইনারকে একটা ওয়েবসাইট বা মোবাইল অ্যাপসের গঠনের পেছনের টেকনোলজি বুঝতে প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোর উপরও বিশেষ দখল রাখতে হয়। এজন্য তাকে Front-End Web Development এর দক্ষতাগুলোর পাশাপাশি Javascript এর মতো প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজগুলোও জানা থাকতে হয়। যদিও WordPress ও Drupal এর মতো কিছু CMS(Content Management System) থাকার কারণে তারা আগেই তৈরি টেম্পলেট বা থিম নিয়ে ডিজাইনের কাজগুলো করতে পারেন। যে কারণে তাদের প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ না জানা থাকলেও চলবে।
ওয়েবের এই বিশাল জগতে আমরা আরও কিছু দক্ষ কিন্তু ভিন্ন ক্যাটাগরির ডিজাইনার দেখতে পাই।
User Experience(UX): কোনো সাইট, অ্যাপস বা টুল ব্যবহার করতে গিয়ে মানুষ জটিলতার সৃষ্টি করছে কিনা বা সমস্যা হচ্ছে কিনা সেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে।
User Interface(UI): সাইট, অ্যাপস বা টুলসের মূল উপাদান যেমন বাটন, মেনু, কালার, ইমেজ প্রভৃতি ব্যবহারকারীদের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে সেই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করে।
অনেক ওয়েব ডিজাইনাররাই এই বিষয়গুলো ভালোভাবে রপ্ত করেন।
ওয়েব ডিজাইনারদের কাজের ক্ষেত্রঃ
দক্ষতাঃ Photoshop, Illustrator, Dreamweaver, CSS, HTML, Wireframing, Prototyping
ফ্রেমের পর ফ্রেম নিয়েই মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের কাজ। এক্সপ্লেইনার ভিডিও, কোনো মুভির ওপেনিং টাইটেল সিকুয়েন্স প্রভৃতির মধ্যে স্ট্যাটিক ইমেজ, ইলাস্ট্রেশন, টেক্সট, ইমেজ প্রভৃতির মুভমেন্ট নিয়ে কাজ করেন এই ডিজাইনাররা। কাজের ধাপ হিসেবে তারা প্রথমে একটা স্টোরিবোর্ড তৈরি করেন যেখানে প্রত্যেকটা দৃশ্যের জন্য আলাদা আলাদা স্ক্রিপ্ট লেখা হয়। এরপর সেই ইমেজ ও দৃশ্যগুলো একত্রিত করে ফ্রেমের মধ্যে ক্রমান্বয়তা বজায় রেখে এতে মোশন ও গ্রাফিক্যাল ইলিমেন্টস যুক্ত করেন। এছাড়াও এসব দৃশ্যে আলাদা করে মিউজিকেরও সমন্বয় ঘটান তারা।
মোশন গ্রাফিক্স ডিজাইনারদের কাজের ক্ষেত্রঃ
দক্ষতাঃ Illustrator, Photoshop, After Effects, Final Cut Pro, Cinema 4D, Maya
অ্যানিমেশন ছাড়া আমরা Moana, Elsa in Frozen কিংবা Hooked on Halo এর মতো বিখ্যাত সব অ্যানিমেশন মুভিগুলো উপভোগ করতে পারতাম না! অ্যানিমেটররা গল্প, চরিত্র কিংবা পুরো পৃথিবীকেই টু-ডি কিংবা থ্রি-ডি’তে রুপায়িত করে বিভিন্ন সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেগুলোকে জীবন্ত ও উপভোগ্য করে তোলেন।
অ্যানিমেটরদের কাজের ক্ষেত্রঃ
দক্ষতাঃ 3ds Max, Maya, Cinema 4D, Blender, After Effects, Flash, Photoshop
যেকোনো ধরণের আবাস থেকে শুরু করে আউটডোর স্পেসের ডিজাইনের কাজটি করে থাকে আর্কিটেকচারাল ডিজাইনাররা। বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ার, আর্কিটেক্ট ও ক্লায়েন্টের কাছ থেকে ডিজাইনের মূল বিষয়টি বুঝে নিয়ে তারা ড্রয়িংকে তারা থ্রি-ডি মডেলে রুপদান করেন।
আর্কিটেকচারাল ডিজাইনারদের কাজের ক্ষেত্রঃ
দক্ষতাঃ AutoCAD, 3ds Max Design, Rhino, Grasshopper, V-Ray, SketchUp, Revit, ArchiCAD, Photoshop, Illustrator
কালার সোয়াচ, ফার্নিচার, ফিকচার – এই সবকিছু নিয়ে ইন্টেরিয়র। গ্রাহকের চাহিদা ও রুচি অনুযায়ী ফার্নিচার, অ্যাকসেসরিস, পেইন্ট, লাইটিং, ফেব্রিক্স ও অন্যান্য আনুসাঙ্গিক বিষয়গুলো ঠিক করে স্পেসের ডিজাইন করেন তারা। অনেক ডিজাইনার লেআউট ও ফ্লোর প্ল্যানের ডায়াগ্রাম ও ডিজাইনের কাজটিও করে থাকেন।
ইন্টেরিয়র ডিজাইনারদের কাজের ক্ষেত্রঃ
দক্ষতাঃ AutoCAD, Revit, SketchUp, Photoshop
ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডিজাইনাররা প্রোডাক্ট ডিজাইনার হিসেবেও সমধিক পরিচিত। কোনো একটি ইন্ডাস্ট্রির জন্য প্রয়োজনীয় সকল ধরণের সাম্ভাব্য প্রোডাক্ট ডেভেলপার কাজটি করে থাকেন। প্রোটোটাইপিং, টেস্টিং ও ইটারেটিং এর মাধ্যমে তারা এসকল প্রোডাক্টগুলোকে বাস্তব রুপ দিতে কাজ করে থাকেন।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বা প্রোডাক্ট ডিজাইনারদের কাজের ক্ষেত্রঃ
দক্ষতাঃ 3ds Max Design, AutoCAD, SolidWorks, AcceliCAD, MathCAD, Catia, Ansys
ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইনাররা কোনো একটি প্রতিষ্ঠানের প্রোডাক্ট টিউটোরিয়াল, লিগ্যাল অ্যান্ড কমপ্লিয়েন্স প্রোটোকল, ম্যানেজমেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রভৃতি বিষয় নিয়ে কাজ করেন।
ইন্সট্রাকশনাল ডিজাইনারদের কাজের ক্ষেত্রঃ
উপর্যুক্ত বিভিন্ন সেক্টরের ডিজাইনাররা তাদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে দক্ষতার সাথে কাজ করে প্রত্যেকটা সেক্টরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তো আপনি কোন বিষয়ে ডিজাইনার হতে চান?
তথ্যসূত্রঃ
https://www.upwork.com/hiring/design/what-type-of-designer-do-you-need/
মন্তব্য করুন
ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য