সৌন্দর্যের প্রতি আকর্ষণবোধ, রুচিশীলতা, সারাবিশ্বের নতুন নতুন ডিজাইন ট্রেন্ড নিয়ে চিন্তাভাবনা করা কিংবা ফ্রি-হ্যান্ড ড্রয়িং এ বিশেষ দক্ষতা অর্জন করা শিক্ষার্থীরাই গ্রাফিক ডিজাইনকে তাদের ক্যারিয়ার গোল দিসেবে সেট করে নেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গ্রাফিক ডিজাইনের কোর্সটি চালু রয়েছে। সার্বিকভাবে চিন্তা করলে একজন ডিজাইনের শিক্ষার্থীকে তার পাঠ্যক্রম অনুসরণ করেই বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হয়। কিন্তু একজন ডিজাইনের শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন অবস্থাতেই সে যদি কিছু টিপস অনুসরণ করে তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ করাটা অনেক সহজ হয়। তাছাড়াও এসব টিপস তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের পাশাপাশি পুরো ক্যারিয়ারে একটি প্লাস পয়েন্ট হিসেবে আবির্ভূত হয়।
আজ আমি এরকম কিছু টিপস নিয়ে কথা বলবো যা একজন ডিজাইনের শিক্ষার্থীকে না জানলেই নয়!
একজন গ্রাফিক ডিজাইনারের শিক্ষার্থী হিসেবে আপনাকে প্রথমেই যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি মেনে চলতে হবে সেটি হচ্ছে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে বেশি প্রাধান্য দেয়া। দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন কাজের চাপে এই অভ্যাসটি হয়তো সবারই প্রথমে গড়ে উঠে না। আর এজন্যই ক্যারিয়ার রেসে অনেকে পিছিয়ে পড়ে। এজন্য একটি ক্যালেন্ডার বা সুনির্দিষ্ট ক্যালেন্ডার কিংবা টু-ডু লিস্ট তৈরি করা যেতে পারে। আর এই ক্যালেন্ডারে বিশেষ বিশেষ প্রাধান্য পাওয়া কাজগুলো গুছিয়ে রাখা উচিত। আর এতে করে আপনি অন্য অনেকের থেকে এগিয়ে থাকবেন। বিশ্ববিদ্যালয়য়ের গৎবাঁধা কোর্সগুলো শেষ করে, অ্যাসাইমেন্ট, স্কিল ডেভেলপমেন্ট ও অন্যান্য সকল বিষয়গুলোকে সমান প্রাধান্য দিতে হবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ দিনগুলো ক্যালেন্ডারে চিহ্নিত করে রেখে হবে যাতে কোনো বিষয়ই কোনোমতে বাদ না যায়। অসম্পূর্ণ কাজগুলো বেশি করে চিহ্নিত করে রাখতে হবে যাতে আপনি বুঝতে পারেন সেগুলো সম্পন্ন করতে আপনাকে কতটুকু সময় প্রদান করতে হবে।
যেহেতু আপনি একজন ডিজাইনের শিক্ষার্থী – তাই এক্ষেত্রে আপনাকে দেশবিদেশের বিভিন্ন ডিজাইন সংক্রান্ত ব্লগ, টিউটোরিয়াল, ডিজাইনের সাথে সংশ্লিষ্ট সফটওয়্যারসমূহ, অতি প্রয়োজনীয় টুলস, ফ্রি হ্যান্ড ড্রয়িং এর জন্য যাবতীয় সামগ্রী প্রভৃতি জিনিসগুলো গুছিয়ে রাখতে হবে।
সব কাজকে সমান গুরুত্ব দেয়া যাবে না। যেসকল কাজ আপনার ডিজাইনের ক্যারিয়ারের ভিত্তি শক্ত ও মজবুত করে তুলবে শুধুমাত্র সেগুলোকেই প্রাধান্য দিতে এমনটা না। আসলে কিছু তুচ্ছ বিষয়বস্তু আছে যা আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোকে তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে সাহায্য করে। যেমন একটানা কাজ করার পর সবাই-ই চায় কিছুক্ষণের জন্য বিরতির। আবার অনেকেই অবসর সময়ে বন্ধুবান্ধবদের সাথে আড্ডা দিতে পছন্দ করে। কিন্তু আপনি যা-ই করেন না কেন আপনাকে আপনার ক্যারিয়ার অবজেক্টিভের সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে অত্যাধিক প্রাধান্য দিতেই হবে। এতে করে আপনি একদিক থেকে যেমন হয়ে উঠবেন প্রাণবন্ত তেমন স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ!
একজন গ্রাফিক ডিজাইনার হিসেবে আপনাকে অবশ্যই যথেষ্ট সময়ানুবর্তী হতে হবে। প্রত্যেকটা প্রজেক্ট হাতে নেয়ার আগে আগাম ধারণা করে নিতে হবে যে, এই কাজটি করতে আপনি কত সময় নিতে পারেন। আর এরপরে একটা লক্ষ্য নির্ধারণ করে এগুতে পারলে সেই কাজটি অবশ্যই সময়ের আগে বা সময়মতো শেষ হয়ে যাওয়ার মতো সক্ষমতা রাখে। আর কেউ যদি পূর্বনির্ধারিত সময়ের আগেই কোনো কাজ করে ফেলতে সক্ষম হয় তবে সে বাড়তি আরও অন্য কাজ করার মতো সময় পাবে। সেটা হতে পারে পরের কোনো প্রজেক্ট নিয়ে চিন্তাভাবনা করার জন্য কিংবা কিছুটা বিশ্রাম নেয়ার জন্যও! এতে করে একদিক থেকে দুই সুবিধা পাওয়া যায়। এক, আপনি আপনার কাজ সময়মতো করতে পারছেন। দুই, দ্বিতীয় কোনো কাজ করার আগে সেটা সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করতে পারছেন। কিংবা কোনো ডিজাইন ব্লগ থেকে ডিজাইন ইন্সপায়রেশন নিতে পারছেন!
সারাবিশ্বের প্রফেশনাল ডিজাইনাররাও এরকম প্রি-শিডিউলড সময় মেনে চলার চেষ্টা করেন। মূলতঃ একারণেই তারা সারাবিশ্বে পরিচিত এবং সমাদৃত।
একটি শক্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করার ভেতর কর্মজীবনের অনেকখানি সাফল্য নির্ভর করে। কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়েই সেখানকার ডিজাইনের সাথে সম্পৃক্ত আছেন কিংবা ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দিয়েছেন – এমন কারো সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। কারণ এদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে তাদের নতুন স্টার্টআপ কিংবা ডিজাইন কোম্পানির সাথে জড়িত থাকেন। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায় থেকে যদি তাদের সাথে ভাল সম্পর্ক বজায় রাখা যায় তবে তিনি আপনার প্রফেশনাল লেভেলের বিভিন্ন সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে সাহায্য করতে প্রস্তুত থাকবেন।
অনেকেই তাদের গ্র্যাজুয়েশন লেভেলে থাকাকালীন সময়ে নিজের কাজের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এটা হতে পারে কোনো ভালো গাইডলাইনের অভাব কিংবা কাজে নিজের সৃজনশীলতার পূর্ণ বিকাশ সম্পন্ন হতে বা দেখে হতাশ হয়ে যাওয়া। এক্ষেত্রে প্রত্যেক ডিজাইনের শিক্ষার্থীর প্রতি উপদেশ থাকবে, নিজের কাজকে ভালবাসুন। কোনোমতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেললে চলবে না। অনেকেই মনে করেন, এই সেক্টরের ভবিষ্যৎ কি হবে? এক্ষেত্রে আপনি বিখ্যাত ওয়ার্কপ্লেসগুলোতে টপ প্রফেশনালদের প্রোফাইল দেখতে পারেন, তাদের থেকে নিজেকে অনুপ্রাণিত করতে পারেন। আসলে যে যেই সেক্টরেই থাকুক না কেন – নিজের কাজের প্রতি যতক্ষণ না পর্যন্ত ভালোবাসা না জন্মাবে ততক্ষণ পর্যন্ত সে সেই সেক্টরে আশানুরূপ ফলাফল পাবেন না।
তাই নিজের কাজকে ভালবাসুন। কাজে পর্যাপ্ত পরিমাণে অধ্যবসায় ও শ্রদ্ধা আপনাকে সেই কাজের সেক্টরের সর্বোচ্চ শিখরে নিয়ে যেতে সক্ষম!
ডিজাইনারদের সার্কেলে ইংরেজিতে বেশ জনপ্রিয় প্রবাদ হচ্ছে, “Creativity is at the heart of great design”! সত্যিই সৃজনশীলতাকে যেকোনো ভালো ডিজাইনের প্রাণস্বরূপ! আপনি যদি সৃজনশীল না হন তবে আপনার কাজই তার স্বাক্ষর বহন করবে। বিভিন্ন ধরণের সৃজনশীল কাজের ধারণা পেতে দেশবিদেশের বিখ্যাত ডিজাইনারদের ব্লগগুলো ফলো করুন, তাদের কাজ দেখে ধারণা নিন। বিভিন্ন ঘরনার ডিজাইন ও কাজ থেকে আপনি আপনার কাজের ভেতর সেসব কাজের রিফ্লেকশন ফেলতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে, সঠিকভাবে অনুকরণ করে নিজের কাজে তার প্রতিফলন রাখতে পারাটাও একধরণের সৃজনশীলতা!
একজন ডিজাইনের শিক্ষার্থী হিসেবে উপরের টিপসগুলো অনুসরণ করে আপনিও হতে৪ পারেন একজন সুদক্ষ সৃজনশীল গ্রাফিক ডিজাইনার!
তথ্যসূত্রঃ
http://justcreative.com/2012/07/03/tips-for-design-students/
http://justcreative.com/category/design-for-students/
মন্তব্য করুন
ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য