যেকোনো শিক্ষার্থীকে আত্মবিশ্বাসী ও কর্মতৎপর হয়ে উঠতে প্রেজেন্টেশনের বিকল্প নেই। কলেজ কিংবা ইউনিভার্সিটির গন্ডি পেরোতে সকল শিক্ষার্থীকেই প্রেজেন্টেশন দিতে হয়। সাধারণতঃ প্রেজেন্টেশনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে যা সকল শিক্ষার্থীকেই মেনে চলতে হয়। সাধারণত এসব পর্যায়ে সুন্দর প্রেজেন্টেশনের চর্চা পরবর্তীকালে শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনে বেশ ভাল কাজে দেয়। সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদের পাশাপাশি একটা সুন্দর স্লাইড। আগের দিনে ব্ল্যাকবোর্ডে বা রঙিন পোস্টারে প্রেজেন্টেশনের কাজ শেষ করা গেলেও এখন তা স্লাইডে দিতে হয়।
প্রেজেন্টেশনের কন্টেন্টের পাশাপাশি যদি আনুসাঙ্গিক অন্যান্য বিষয়গুলোকে সমানভাবে প্রাধান্য দেয়া যাবে তবেই সেটা হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়। মনে রাখা উচিত, একটা সুন্দর ও আকর্ষণীয় প্রেজেন্টেশন অডিয়েন্সের মনে অনেকদিন পর্যন্ত রেশ রেখে যায়।
আজ আমি চমৎকার প্রেজেন্টেশন দেয়ার কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস নিয়ে কথা বলবো।
বিব্রতকর পরিস্থিতি যেকোনো প্রেজেন্টেশনের একটি বড় দুর্বলতা। কিন্তু, ভালো প্রেজেন্টারদের মতে, প্রাথমিকভাবে বিব্রত বা নার্ভাসনেস কাটানোর সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে অডিয়েন্সের সাথে কথা বলে নিজের জড়তা দূর করা। এতে করে অডিয়েন্সও মনে মনে একটা আন্দাজ করে নেয় যে প্রেজেন্টার নিশ্চয়ই তার প্রেজেন্টেশনের বিষয় নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। আর এভাবেই প্রেজেন্টারের উৎসাহ ও সততা অডিয়েন্সের মন কাড়বে। যা প্রেজেন্টারের নার্ভাসনেস কাটাতে সাহায্য করবে।
প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তু এমনভাবে সাজানো উচিত যাতে অডিয়েন্স বিরক্তবোধ না করে। তাই প্রেজেন্টারেরও মাথায় রাখা উচিত কি সে বলতে চায় আর অডিয়েন্স কি শুনতে চায়। আসলে এই বিষয়টি পুরোপুরিই একটা মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। তাই প্রেজেন্টারের উচিত সবসময় অডিয়েন্সের প্রতিক্রিয়ার দিকে নজর রাখা এবং সেগুলোর প্রতি সাড়া দেয়া। আসলে এই ব্যবস্থাগুলো প্রেজেন্টারের পক্ষ থেকেই নেয়া উচিত।
প্রেজেন্টেশনের পরিকল্পনা নেয়ার আগে নিজেকে মনে মনে একটা প্রশ্ন করে নেয়া উচিতঃ
“আমার প্রেজেন্টেশনের মূল বিষয় কি?”
আসলে প্রত্যেক প্রেজেন্টারকেই অডিয়েন্সের কাছে প্রেজেন্টেশনের মূল বিষয়টি বিস্তারিতভাবে কিন্তু সংক্ষিপ্ত আকারে উপস্থাপন করতে হয়। প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় হাতে একটা বিজনেস কার্ডে মূল বিষয়গুলো লিখে রাখা যেতে পারে। এতে কিছু সুবিধা পাওয়া যায়। প্রেজেন্টেশনের সময় প্রেজেন্টার খুব সহজেই মূল বিষয়গুলো ধরে ধরে ক্রমান্বয়ে আগাতে পারেন, অপরদিকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ও বাদ পড়ে যায় না। কিন্তু একটা বিষয় মাথায় রাখা উচিত, প্রেজেন্টেশনের সময় কোনো অযাচিত কথা বলা উচিত নয় যা আপনার প্রেজেন্টেশনকে দীর্ঘায়িত করবে না আবার অডিয়েন্সকেও বিরক্ত করবে না।
আই কন্ট্যাক্ট বা দৃষ্টি সংযোগ – এই শব্দদুটি শুনতে খুব সহজ লাগলেও অধিকাংশ প্রেজেন্টার এই কাজটি করতে ব্যর্থ হন। আসলে কোনো প্রেজেন্টেশনের সাফল্যের পেছনে অডিয়েন্সের প্রতি দৃষ্টি সংযোগের ব্যাপারটিকে খুব গুরুত্ব দেয়া উচিত। হাসিখুশি থেকে এবং আই কন্ট্যাক্ট করে অডিয়েন্সের নজর রাখা সহজ হয় যা প্রেজেন্টেশন প্রদানকালে খুব ভালোভাবে সাহায্য করে। এটা প্রেজেন্টারের নার্ভাসনেস কমাতেও বেশ সাহায্য করে।
অনেক প্রেজেন্টেশনে দেখা যায় পুরো রুমের লাইট বন্ধ করে দেয়া হয়। যার ফলে শুধু প্রেজেন্টেশনের স্লাইড ছাড়া অন্য কিছুই দেখা যায় না। কিন্তু অডিয়েন্স স্লাইড দেখার পাশাপাশি প্রেজেন্টারকেও দেখতে চায়। তাই আলোকবিন্যাসের দিকেও বিশেষ নজর রাখা উচিত।
প্রেজেন্টেশনের শুরুর দিকটাই একটা প্রেজেন্টেশনের ভালো খারাপ সব কিছু নির্ধারণ করে দেয়। তাই আপনাকে অবশ্যই অডিয়েন্সের নজর কাড়ার ব্যাপারটি এই সময়েই করতে হবে। শুরুতে গৎবাঁধা নিয়মে শুরু না করে ভিন্নধর্মী কিছু করা উচিত যাতে সকলেই আলাদা একটি আকর্ষণবোধ করে। এই ভিন্নধর্মী কিছু করার অনেক উপায় আছে। ইউটিউব সার্চ করলেই এরকম চমৎকার অনেক প্রেজেন্টেশনের ভিডিও পাওয়া যাবে।
এটা মূলতঃ Apple এর একজন কর্মকর্তা Guy Kawasaki এর টিপস। তার মতে স্লাইড শো হওয়া উচিতঃ
অপরদিকে একটা স্লাইডে কিছু পয়েন্ট আকারে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা উচিত। অনেকেই দেখা যায়, প্যারাগ্রাফ আকারে অনেক কিছু একটা স্লাইডে উপস্থাপন করে। এতে করে একদিক দিয়ে যেমন অডিয়েন্স বিরক্ত হন অপরদিকে প্রেজেন্টারও তার উদ্দিষ্ট বিষয় উপস্থাপন করতে পারেন না। এই বিষয়টিকে “Death by PowerPoint” বলা হয়।
মানুষ বরাবরই গল্প শুনতে ভালোবাসে। প্রেজেন্টেশনের বিষয়বস্তুগুলো যদি গল্পের আকারে অডিয়েন্সের সামনে উপস্থাপন করা যায় তবেই একটা প্রেজেন্টেশন সার্থক হয়ে উঠবে। গল্প দিয়ে যদি প্রেজেন্টেশন শুরু করা যায় তাহলে তো কথাই নেই। অনেক বিষয় থাকে যেখানে বিভিন্ন ধরণের পরিসংখ্যান থাকে। এই বিষয়গুলো যদি সুন্দরভাবে উপস্থাপন করা যায় তাহলে উপস্থিত শ্রোতারাও বিরক্ত হবেন না। এতে করে প্রেজেন্টেশনও হয়ে উঠবে আকর্ষণীয়!
যথাযথভাবে উচ্চারণ করার মাধ্যমে প্রেজেন্টেশনের প্রত্যেকটা কথা অডিয়েন্সের কানে পৌঁছায়। প্রকৃতপক্ষে ভালোভাবে উচ্চারণ না করে অস্পষ্টতার সাথে কথা বললে অডিয়েন্স কিছুই বুঝতে পারবেন না। এছাড়া এক শব্দ থেকে আরেক শব্দের মাঝে স্ট্যান্ডার্ড গ্যাপ রাখা উচিত। এই বিষয়গুলো অডিয়েন্সের মন জয় করার জন্য যথেষ্ট।
এক হিসেবে দেখা গেছে যোগাযোগের তিন-চতুর্থাংশ বিষয়ই ননভার্বাল। তাই বলা চলে, স্বরের প্রখরতা, বডি ল্যাঙ্গুয়েজ এই বিষয়গুলো আপনার প্রেজেন্টেশনের অলংকার স্বরূপ বলা চলে। অনেকেই শুধু কন্টেন্ট বাছাই করে শুধু সেটার উপরই পর্যাপ্ত পরিমাণে গুরুত্ব প্রদান করে। কিন্তু বডি ল্যাঙ্গুয়েজ যথাযথ না হওয়ার কারণে এদের সম্পূর্ণ চেষ্টাই ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। তাই সকল বিষয়ের পাশাপাশি বডি ল্যাঙ্গুয়েজের দিকটিকেও সমান গুরুত্ব দেয়া উচিত।
কোনো ধরণের জড়তা না রেখে নিজের সৃজনশীলতার সবটুকু দেয়ার স্থান প্রেজেন্টেশন। অনেকেই প্রেজেন্টেশন দেয়ার সময় অডিয়েন্সের সামনে দিয়ে ঘাবড়ে যান। আড়ষ্টতার কারণে ভয়ে কথা আটকে যায়। ফলে পূর্বে প্রস্তুতি নেয়া সকল কিছু ব্যর্থ হয়ে যায়। ফলে প্রচুর প্রস্তুতি নেয়া একজন প্রেজেন্টারও তার এই ভয়ের কারণে সকল তথ্য সমানতালে অডিয়েন্সের সামনে উপস্থাপন করতে পারেন না। তাই সকল ভয় ও জড়তা কাটিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে অডিয়েন্সের সামনে নিজেকে উপস্থিত করা উচিত।
প্রেজেন্টেশনে সফল হওয়ার চাবিকাঠি মূলতঃ একজন প্রেজেন্টারের হাতেই থাকে। উপর্যুক্ত নিয়মগুলো মেনে চললে একটা আকর্ষণীয় ও চমৎকার প্রেজেন্টেশন দেয়া সম্ভব!
তথ্যসূত্রঃ
https://www.skillsyouneed.com
মন্তব্য করুন
ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য