মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এলো অটোক্যাড ২০২০ !!
Published on:

একটি পরিবারে যখন কোন শিশু জন্ম নেয় তখন সেই পরিবারে সে নিয়ে আসে খুশির আবহ। ধীরে ধীরে সে বিভিন্ন নতুন নতুন জিনিসের সাথে পরিচিত হয়। বিভিন্ন খেলনা নিয়ে খেলাধুলা করেই তার শৈশব ধীরে ধীরে কেটে যায়।তবে কিছু কিছু শিশু তাদের যে খেলনা গাড়িগুলো থাকে সেগুলো ভেংগে আবার জোড়া লাগানো, খেলনা গাড়িগুলোর বিভিন্নধর্মী ইঞ্জিন নিয়ে গবেষণা এসব কাজের মাধ্যমে আস্তে আস্তে তাদের ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে আগ্রহ ফুটিয়ে তুলতে থাকে। নবম-দশম শ্রেণীতে পদার্থ বিজ্ঞানের ইঞ্জিন চ্যাপ্টার পড়ে তারা আগ্রহী হয়ে উঠে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বিভিন্ন বিষয়ে। বড় হয়ে এদের অনেকেই ভর্তি হয় দেশের বিভিন্ন নামকরা ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। অনেক দিন ধরে বোনা স্বপ্নের জাল বাস্তবে পরিণত হয়।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর বাঘা বাঘা সব থিওরি কোর্সগুলো করার সাথে সাথে ধীরে ধীরে হবু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা কর্মক্ষেত্রে ব্যবহৃত বিভিন্ন সফটওয়্যারের সাথে পরিচিত হতে থাকেন তাদের কম্পিউটার ল্যাব কোর্সগুলোতে। কম্পিউটার সফটওয়্যার ল্যাবে তারা প্রথমদিকে যে কোর্সটির সাথে পরিচিত হন তা হল অটোক্যাড।অটোক্যাড আর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং একে অপরের সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। একটি ছাড়া অপরটির অস্তিত্ব ভাবা কখনই অর্থবহ হয়ে ওঠে না। তাই অনেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীরা খুব সহজেই এর প্রেমে পড়ে যান। অটোক্যাডে মুগ্ধতা সৃষ্টি হওয়ার প্রধান কারণই হল এটি খুবই সহজে ব্যবহার করা যায়। এর সরল ব্যবহার পদ্ধতি মেকানিক্যাল ডিজাইনিং এর মত কঠিন একটি বিষয়কে সাধারণের কাতারে নিয়ে এসেছে। বিভিন্ন সিম্পল বা কমপ্লেক্স ২ ডি /৩ ডি মেকানিক্যাল ডিজাইনিং এর কাজ অটোক্যাডের মাধ্যমে খুব সহজেই করা যায়। তাই অনেক মেকানিক্যালের শিক্ষার্থীরাই স্বপ্ন দেখতে থাকেন বিভিন্ন ধরণের অটোমোবাইল, গাড়ি, মেশিন পার্টস প্রভৃতি ডিজাইনিং এর কাজের সাথে জড়িত হওয়ার।টেসলা, ফোর্ড, বিএমডব্লিউ, টাটা মোটরস সহ বিভিন্ন অটোমোবাইল কোম্পানীর ডিজাইনিং সেকশনে কাজ করার স্বপ্নও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে অনেকের। তাই তারা তাদের বিভিন্ন ধরণের নাকশার আঁকিবুকি শুরু করেন অটোক্যাডে। ধীরে ধীরে অনেক শ্রম ও সাধনার সাথে যারা একাগ্র চিত্তে অটোক্যাডে তাদের অনুশীলন ধরে রাখতে পারেন তারাই শেষ পর্যন্ত তাদের গন্তব্যে ঠিকই পৌঁছতে পারেন।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় টিউশনি করে টাকা অর্জনের চেয়ে ফ্রি ল্যান্সিং এ জড়িত থেকে টাকা অর্জন করাকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এর প্রধান কারণ হল আপওয়ার্ক, ফাইভার সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফ্রি ল্যান্সিং প্লাটফর্মে মেকানিক্যাল বিভিন্ন ডিজাইনিং এর কাজ করে একজন হবু মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করে ফেলতে পারেন আন্তর্জাতিক মানের একটি পোর্টফোলিও যা তাকে তার ক্যারিয়ারের পথে অন্যদের চেয়ে দেয় অনেকখানি এগিয়ে। Freelancing পেশায় ক্রিটিক্যাল রাইটিং, ইউটিউব কন্টেন্ট মেকিং প্রভ্রতির চেয়ে মেকানিক্যাল ডিজাইনিং এর পেমেন্ট সাধারণতঃ বেশি হয়ে থাকে। তাই ফ্রি ল্যান্সিং এ জড়িত থেকে ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড একটি পোর্টফোলিও তৈরি ও সাথে মাসে হাজার হাজার ডলারের হাতছানি পেতে চাইলে অটোক্যাডে পারদর্শিতার কোন বিকল্প নেই।
বাংলাদেশের বেশিরভাগ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা তাদের শিক্ষাজীবন শেষ করে দেশের বিভিন্ন নামকরা ইন্ডাস্ট্রি ও ফ্যাক্টরিগুলোতে যোগদানের মাধ্যমে তাদের ক্যারিয়ার শুরু করেন। ফ্যাক্টরিতে কাজ করা প্রথমদিকে অনেকের জন্য শুরুতে বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে ওঠে। কারণ, নতুন নতুন সব বিশাল মেশিনের সাথে পরিচিত হওয়া, মেশিনগুলোর ম্যানুয়েল,সার্কিট ডায়াগ্রাম প্রভৃতি সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন করা তো সহজ কথা নয়। কিন্তু যাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকেই মেশিন ডিজাইনিং এর সাথে পরিচয় থাকে তাদের জন্য এরকম পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নেয়া খুব একটা কঠিন বিষয় নয়। আর যারা অটোক্যাডে কাজ করেন তাদের জন্য মেশিন এর বিভিন্ন ম্যানুয়েলস অনেকটা কাছের বন্ধুতেই পরিণত হয় খুব সহজেই। অটোক্যাডের সবচেয়ে মজার বিষয়টা হল এর অপারেশনের পদ্ধতি অনেক সহজ। তাই,মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা সহজেই এর সাহায্যে বিভিন্ন ধরণের ডিজাইনিং এর সাথে পরিচিত হতে পারেন। ফ্যাক্টরির এই ধরণের চ্যালেঞ্জকে যারা সহজেই আপন করে নিতে পারেন কর্মক্ষেত্রে তারা সহজেই সবার চোখে পরেন ও তারা থাকেন অন্যদের সাথে অনেক এগিয়ে। ফ্যাক্টরি থেকে হেড অফিস পর্যন্ত তাদের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরণের একটি ক্যারিয়ার প্রোফাইল গড়ে তোলা আসলে সৌভাগ্যের বিষয়।
অনেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা শিক্ষাজীবন শেষে বিভিন্ন সরকারী চাকরিতে যোগদান করেন। যেহেতু, সরকার এখন ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য কাজ করছে, তাই বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড(বিপিডিবি), রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী সহ বিভিন্ন সরকারি কোম্পানীতে প্রচুর মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দিচ্ছে। সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন অফিস সফটওয়্যারের পাশাপাশি অটোক্যাডের মত এডভান্সড সফটওয়্যারগুলো ও সমান গুরুত্ব পাচ্ছে। এমনকি সরকারি বিভিন্ন প্রজেক্ট যেমনঃ মেট্রোরেলের কাজে প্রফেশনাল অটোক্যাড ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এই ধরণের চাকরিতে আবেদনের জন্য সিভির পাশাপাশি অটোক্যাডে আঁকা ড্রয়িং এর পোর্টফোলিও চাওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও, এখন বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে যোগদানের পর ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য বিভিন্ন সফটওয়্যারে পারদর্শিতা অর্জনের জন্য সরকারি প্রশিক্ষণ নেয়াও অনেক ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করে দেয়া হচ্ছে। এমনকি এখন সরকারি বিভিন্ন সার্কুলারের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার পর সফটওয়্যারে পারদর্শিতার উপর কম্পিউটার ভিত্তিক পরীক্ষা দেয়াও নিয়োগ পদ্ধতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে দাঁড়িয়েছে। এই আলোচনা থেকে এ বিষয়টি সহজেই বোধগম্য হচ্ছে যে, সরকারি বিভিন্ন লোভনীয় চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে অটোক্যাডের মত একটি এডভান্সড সফটওয়্যারে পারদর্শিতা আপনাকে ভিড় থেকে করে দেবে অনেকখানি আলাদা।
অনেক মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারই আবার কিছুদিন চাকরি করে পরে নিজেরাই বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। অনেকে পছন্দ করেন মেকানিক্যাল বিভিন্ন প্রডাক্ট ডিজাইনের কাজ। প্রডাক্ট ডিজাইনিং এর ব্যবসায় অটোক্যাডের ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। কাস্টোমারের কাছে বিভিন্ন ধরণের প্রোডাক্টের যে ডাইমেনশনসহ স্পেসিফিকেশন নেয়া হয় তা থাকে প্রধাণতঃ অটোক্যাডের ডিডব্লিউজি ফাইল ফরমেটে করা অটোক্যাডের ড্রয়িং। এছাড়াও অনেক বায়ার তার প্রোডাক্ট ডিজাইন করানোর আগে অটোক্যাড এ করা কাজের পোর্টফোলিও দেখতে চান।তাই, ব্যবসা- বাণিজ্যের ক্ষেত্রেও অটোক্যাডে পারদর্শিতা আপনাদেরকে রাখবে অন্য সবার চেয়ে অনেক এগিয়ে।
সবশেষে, এ ব্যপারটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, মেকানিক্যালের শিক্ষার্থীদের উচিত শিক্ষাজীবনেই অটোক্যাডে পারদর্শিতা অর্জনে সচেতন হয়ে নিজের পোর্টফোলিওকে সমৃদ্ধ করা। কারণ, অটোক্যাডে পারদর্শিতা ব্যতীত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং লাইফ চিন্তা করাই আসলে দুষ্কর।
Author

Ali Kaiser
Joined 6 years ago
📬 Let's keep in touch
Join our mailing list for the latest updates
Something went wrong!
Please try again.