আমাদের দেশে বাংলা ফন্ট নিয়ে খুব বেশি কাজ হয়না বললেই চলে। ফলে ডিজাইনারদের ঘুরে ফিরে কিছু নির্দিষ্ট ফন্টের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে হয়। কিন্তু আমরা যদি ফন্ট তৈরি করা শুরু করি তাহলে হয়তো এক সময় ইংলিশ ফন্টের মত আমাদেরও ফন্ট লাইব্রেরি থাকবে এবং সেখান থেকে পছন্দের ফন্ট নিয়ে যে কোন ডিজাইন করতে পারবো।
ফন্ট মানে অক্ষর । ফন্ট উইন্ডোজ এক্সপি, সেভেন, এইট এবং উইন্ডোজ টেন সহ অন্যান্য সকল প্লাটফর্মেই সমর্থনযোগ্য। কম্পিউটার এ লেখার জন্য আমরা অনেক রকম ফন্ট ব্যাবহার করে থাকি।
ফন্ট বানানো খুব সহজ কাজ নয়। ফন্ট বানাতে বেশ কিছু জিনিস লাগে। যথা-
১। টাইপোগ্রাফী সম্পর্কে ধারণা।
২। প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার (ফন্টল্যাব স্টুডিও, ফন্টর্ফোজ, ফন্ট ক্রিয়েটর, ভোল্ট ইত্যাদি)।
৩। ভেক্টর গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা (এ্যাডোবি ইলাস্ট্রেটর, ইঙ্কস্কেপ ইত্যাদি)।
৪। বাংলা যুক্তাক্ষর নিয়ে ভালো ধারণা।
৫। অসীম ইচ্ছাশক্তি ও অপার্থিব ধৈর্য।
এবার ফন্ট বানানো শুরুর আগে যেসব ব্যাপার জানা থাকা জরুরী সেগুলোর দিকে আলোকপাত করছি।
টাইপোগ্রাফি সম্পর্কে ব্যাসিক আইডিয়া থাকলে ফন্ট তৈরিতে অনেক সাহায্য হবে। হতে পারে সেটা ক্যালিওগ্রাফি, ইংরেজি টাইপোগ্রাফি কিংবা বাংলা অক্ষর। হাতে স্কেচ থেকে শুরু করে পুরো ফন্ট ডিজাইনে টাইপোগ্রাফি বিষয়টা আসবেই।
ফন্ট ডেভেলপমেন্টে ভেক্টর গ্রাফিক্স জানাটা বাধ্যতামূলক। একটা ব্যাপার আপনারা সবাই লক্ষ্য করেছেন যে লেখার সময় ফন্টের সাইজ যত বড়ই করা হোক না কেন তার কোয়ালিটি একই(একদম মসৃণ) থাকে। অর্থাৎ ফেটে যায় না। এছাড়া শুরুতে হাতে স্কেচ করে পরে সেটা ইলাস্ট্রেটর দিয়ে ট্রেস করেও কাজ করা হয়ে থাকে।
আপনারা যারা ভেক্টর গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেছেন তারা হয়তো ব্যাপারটা ইতোমধ্যেই আন্দাজ করে ফেলেছেন যে কেন ভেক্টর গ্রাফিক্স বাধ্যতামূলক? ঠিক ধরেছেন, ফন্টের অক্ষরগুলো তৈরী হয় ভেক্টর গ্রাফিক্সে।
যারা ভেক্টর গ্রাফিক্স নিয়ে কাজ করেননি তাদের জন্য কাজটা একটু কঠিন হবে, তবে ভয় পাবার কিছু নেই। ভেক্টর গ্রাফিক্স আর বিটম্যাপের পার্থক্যটুকু জেনে নিয়ে এডোব ইলাস্ট্রেটর অথবা ইঙ্কস্কেপে হাত পাকিয়ে নিন।
ভেক্টরে কি করে আঁকতে হয় সেটা বুঝতে পারলেই চলবে।
হিন্টিং:
হিন্টিং ফন্ট তৈরির অন্যতম একটি অংশ। একটি সুন্দর ফন্ট বানানোর পর সেটা যে স্ক্রিনেও দেখতে ভালো হবে, এ ব্যপারে আপনি নিশ্চিত হতে পারবেন না। কারণ, ফন্টটি ব্যবহারের সময় এর সাইজ যত ছোট করবেন সেটা তত readability হারাবে অর্থাৎ পড়তে কষ্ট হবে। আপনার ফন্টটা যদি স্ক্রিনে পড়াই না গেল তাহলে আপনার শ্রম অনেকাংশেই বৃথা। ফন্টের readability বাড়াতেই হিন্ট করতে হয়।
হিন্ট করা মানে হল ছোট সাইজে অক্ষরগুলো দেখতে কেমন হবে সেটা পিক্সেল ধরে ধরে ঠিক করে দেয়া। কাজটা যথেষ্ট শ্রম, ধৈর্য ও সময় সাপেক্ষ। প্রিন্টের জন্য কিন্তু হিন্টিং এর প্রয়োজন নেই।
হাতে স্কেচ করার পর সেই স্কেচ অনুসরণ করে ইলাস্ট্রেটরে ভেক্টরে রুপান্তর করতে হয়। তারপর সেটা ফন্টল্যাবে নিয়ে ইউনিকোড চার্টে বসিয়ে ফন্টে রুপান্তর করতে হয়। ফন্টল্যাব ছাড়াও বেশ কিছু সফটওয়্যার রয়েছে। তবে তুলনামূলক ফন্টল্যাব বেশি জনপ্রিয়।
আপনি বাংলার জন্য ইউনিকোডের একটি ফন্ট বানাতে চাইলে আপনাকে ৪০০-৫০০ অক্ষর (এর বিরাট অংশ যুক্তাক্ষর) নিয়ে কাজ করতে হবে। অক্ষর তৈরীর পর যদি ফন্ট হিন্টিং করতে চান তবে সেগুলোকে ধরে ধরে ৪-৬টি সাইজের জন্য হিন্ট করতে হবে।
পরে ফন্টটিতে ওপেনটাইপ টেবল যোগ করতে হতে পারে যাতে করে সে যুক্তাক্ষরগুলো তৈরী করতে পারে। এই তিন লাইন দিয়ে ফন্ট বানানোর পুরো প্রক্রিয়াটা বলে দেয়া হলো। তিন লাইন হলেও খাটুনিটা ঠিকই টের পাচ্ছেন নিশ্চয়ই।
তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া।
ফন্ট ডিজাইন নিয়ে কি কি ধাপ অনুসরণ করতে হয় সেই বিষয়ে জানলাম। এবার বাংলা ফন্ট নিয়ে কাজ করছে এমন একটি টিমের সাথে পরিচিত হই। বাংলা ফন্ট নিয়ে অনেকদিন আগে আমি টেকটিউন্স এ পোস্ট দেই। সেই আবির্ভাব ফন্টটি এখন পর্যন্ত ১৫০০০+ ডাউনলোড হয়েছে। শুধু তাই নয় এই ফন্ট দিয়ে তৈরি হয়েছে দেশে-বিদেশে বিভিন্ন পোস্টার। চলুন দেখে নেয়া যাক এমন কিছু ডিজাইন যেখানে আবির্ভাব ফন্টের ব্যবহার রয়েছে।
এই রকম আরো অনেক জানা অজানা স্থানে ফন্টটি ব্যবহার হচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও হবে। এই ধারাবাহিকতায় আরো নতুন নতুন ফন্ট “বেঙ্গল ফন্টস” ব্যানারে রিলিজ দেয়া হবে। এখানে আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য একটি ফন্ট লাইব্রেরি তৈরি করা যেখান থেকে সবাই ফন্ট ডাউনলোড করতে পারবে এবং প্রফেশনাল বাংলা ফন্ট পাবে।
আমাদের প্রাণের ভাষা বাংলা। এই ভাষায় আমরা কথা বলি, গান গাই, খোশগল্পে মেতে উঠে মনের ভাব প্রকাশ করি। আর এই ভাষায় মনের ভাব লিখিত রূপে প্রকাশ করতে আমরা ব্যবহার করি আমাদের বর্ণমালা। বই থেকে শুরু করে সিনেমার পোস্টার সব জায়গায় নানা রঙে আমারা সাজাই আমাদের বর্ণমালা কে। আর সেসব কাজে ব্যবহৃত বর্ণ গুলো দেখতে যাতে একঘেয়ে না লাগে তার জন্য ডিজাইনাররা বাংলা লিপির মূল বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ন রেখে নানাভাবে ডিজাইন করে উপস্থাপন করেন আমাদের প্রিয় এই বর্ণমালাকে। এই রকমের এক সেট ফন্ট ডিজাইন কে ইংরেজিতে বলে ফন্ট ফ্যামিলি। বাংলায় আমরা সহজভাবে বলতে পারি ‘বর্ণ পরিবার’। দুঃখজনকভাবে পৃথিবীর অন্যান্য বহুল প্রচলিত ভাষার তুলনায় আমাদের বাংলা ভাষার জন্য এই রকম পরিপূর্ণ ফন্ট ফ্যামিলি তৈরি খুব একটা হয়নি। আবার কেউ কেউ হয়তো একক উদ্যোগে কিছু ফন্ট ডিজাইন করেছে কিন্তু সেগুলো উপযুক্ত প্রচার প্রসারের অভাবে মানুষের কাছে তেমনভাবে পৌঁছাতে পারছেনা। তো এসব সমস্যার থেকে উত্তরণের উদ্দশ্যেই মূলত ‘বেঙ্গল ফন্টস’ নামে অবাণিজ্যিক ফন্ট ডিরেক্টরি বা সংগ্রহশালার এই উদ্যোগটি নেয়া। মাতৃভাষা বাংলার বৈচিত্রময় ফন্টের অভাব পূরণের লক্ষ্য নিয়ে “বেঙ্গল ফন্টস” এর যাত্রা শুরু। নিয়মিত বিভিন্ন ডিজাইনের নতুন বাংলা ফন্ট তৈরির পাশাপাশি মানুষকে ফন্ট ডিজাইনের প্রতি আগ্রহী করে তুলাই শুধু নয়, বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বাংলা ফন্টগুলোকে একজায়গায় একত্রিত করে সবার কাছে সহজেই পৌছে দেয়াও আমাদের এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য।
এছাড়াও সামনে আসছে ফন্ট “হেমন্ত”। চলুন দেখে নেই সেই ফন্টটি কেমন হতে পারে।
আশা করি বাংলা ফন্ট নিয়ে এই আয়োজন সবার কাজে আসবে। কোন ধরণের সাজেশন কিংবা আইডিয়া আমাদের সাথে যে কোন সময়ে শেয়ার করতে পারেন। বাংলা ফন্ট নিয়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এখানে।
ইউসুফ
31 December, 2021 at08:59:04 PM,
আমি একজন ডিজাইনার, আমি বাংলা ফন্ট নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী। আমাকে কি কি অক্ষর ডিজাইন করতে হবে জানালে উপকৃত হবো।