কম্পিউটারে যোগ্য প্রকৌশলী হতে হলে যেসব বিষয় অবশ্যই জানা উচিত

প্রকাশিতঃ 9 May, 2021, দেখা হয়েছেঃ

এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে সকল শিক্ষার্থীই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ হতে প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। সকলের মনেই তখন স্বপ্ন জাগে একটি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পাশাপাশি একটি ভালো বিষয়ে অধ্যয়ন করার। অনেকেই আবার উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশায় মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। কিন্তু হতাশার ব্যাপার হচ্ছে, এদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থী পাশ করে বের হয় সে পরিমাণ আসন এদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এই সীমিত সংখ্যক আসনের কারণে এসব শিক্ষার্থীর একটি বিশাল অংশ অবশেষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়।

cse

প্রযুক্তির ক্রমান্বয় উন্নতি সাধনের ফলে এদেশে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টিও ইদানিং খুব ভালো জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তাই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাশাপাশি বেসরকারি প্রায় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়টি চালু রয়েছে। কিন্তু অনেকেই কম্পিউটারের “ক” না জেনেই এই বিষয়ে পড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে এবং পরিশেষে ভর্তিও হয়ে যায়। আসলে প্রোগ্রামিং এর সাধারণ বিষয়গুলো সম্পর্কে হালকা ধারণার পাশাপাশি গাণিতিক খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করার দক্ষতা না থাকলে এই বিষয়ে পড়ার জন্য আগ্রহ না দেখানোই ভালো। আমি এক পরিচিত ছোটভাইকে চিনতাম যে কিছুদিন আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিষয়ে ভর্তি হয়েছে। সে কেন এই বিষয়ে পড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলো এই প্রশ্ন করায় সে উত্তর দেয়, “আসলে আমি ইউটিউবে গান শুনতে ভালবাসি। আর অনেক গেম খেলতে পছন্দ করি। সেজন্যই এই বিষয়ে আসা!” কিন্তু সে ঠিকমতো জানেই না CTRL+C এবং CTRL+V করে কপি পেস্ট করতে হয়।

cse

আসলে অনেক শিক্ষার্থীই আছে যারা তার কোনো বন্ধুর প্ররোচনায়, পারিবারিক চাপে কিংবা ভুল ধারণা নিয়ে এই বিষয়ে ভর্তি হয়ে যায়। কিন্তু অনেকেই জানে না এই বিষয়ে কি পড়ানো হয় বা এই সেক্টরে চাকরির বাজারে টিকে থাকতে হলে কি রকম দক্ষতাসম্পন্ন হতে হয়। কাজেই পরবর্তীতে অনেকেই হতাশায় নিমগ্ন হয়ে হাল ছেড়ে দেয় এবং অন্য কোনো বিষয়ে ভর্তি হয়ে যায়। এতে করে আদতে কোনো লাভ হয় না। মাঝখান দিয়ে মূল্যবান সময়গুলো নষ্ট হয় এবং ক্যারিয়ার থেকে নিজেকে বেশ ভালো সময় গুটিয়ে রাখতে হয়।

কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়টি বেশ অদ্ভুত বটে! অনেকেই গ্র্যাজুয়েশন শেষে বা পড়াকালীন সময়েই ৫০-৬০ হাজার টাকার বেতনের চাকুরি পেয়ে যায়। কিংবা গুগল, মাইক্রোসফট, ফেসবুকের মতো বড় বড় প্রতিষ্ঠানে চাকুরির জন্য অফার পায়। অনেকে উচ্চশিক্ষার জন্য বৃত্তি নিয়ে বিদেশে চলে যায়। আবার অনেকে ১০-১৫ হাজার টাকার চাকুরি জোগাড় করতেই হিমশিম খেয়ে যায়। এখানে তাহলে এতো বৈষম্য কেন এই ব্যাপারে অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন। আসলে যুক্তি, বুদ্ধি এবং গাণিতিক খুঁটিনাটি বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করার পাশাপাশি প্রোগ্রামিং ও অ্যালগরিদমে দক্ষতা অর্জন করতে না থাকলে এই বিষয়ে টিকে থাকা খুব কষ্টকর।

অনেকেই হয়তো বলতে পারেন, প্রোগ্রামিং অ্যালগরিদম বিষয়গুলো তো একজন উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন। তাহলে তারা এই বিষয়গুলো তারা কিভাবে জানবে। আসলে শেখার আগ্রহ থাকলে প্রোগ্রামিং ও অ্যালগরিদম বিষয়গুলো শেখা খুব বেশি কঠিন কাজ না। প্রচুর অধ্যবসায় ও অনুশীলনের মাধ্যমে এই বিষয়গুলো নিজের আয়ত্ত্বে আনা সম্ভব। তাই এই বিষয়ে ভর্তি হওয়ার আগে প্রোগ্রামিং এর খুঁটিনাটি বিষয়গুলো সম্পর্কে হালকা ধারণা নিয়ে রাখতে হবে। এছাড়া আমাদের দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠিত কম্পিউটার সায়েন্সে কোর্সগুলো বিশ্বমানের। যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে ইন্টারনেটে সার্চ করলে প্রচুর পরিমাণে ফ্রি রিসোর্স ও টিউটোরিয়াল পাওয়া যাবে।

cse

কম্পিউটার সায়েন্সে টিকে থাকতে হলে বেশ কিছু বিষয়ে দখল রাখতে হয়। আসলে এখন সারাবিশ্বের সাথে আমাদের দেশেও এই সেক্টরে যে পরিমাণে প্রতিযোগিতা বেড়ে গেছে তাতে কিছু বিষয় নিজের মধ্যে রাখতে না পারলে পরবর্তীতে কর্মজীবনে বেশ ভোগান্তিতে পড়তে হবে। নিচের এই বিষয়গুলোর মধ্যে অবশ্যই চর্চা রাখতে হবেঃ

  • প্রোগ্রামিং
  • অ্যালগরিদম
  • ডাটা স্ট্রাকচার
  • নেটওয়ার্কিং
  • Graphic design
  • কম্পাইলার
  • আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স(এআই)
  • ডাটাবেস

 

প্রোগ্রামিং শেখার জন্য প্রচুর পরিমাণে অনলাইন রিসোর্স আছে। এছাড়া আমাদের দেশেও বাংলায় বেশ ভালো কিছু রিসোর্স আছে যা থেকে শিক্ষার্থীরা সহজেই প্রোগ্রামিং এর প্রাথমিক ধারণা পেতে পারে। তামিম শাহরিয়ার সুবিন রচিত এই বইটি এক্ষেত্রে বেশ ভালো সহায়ক হতে পারে। এটি বাংলা ভাষায় রচিত কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শেখার জন্য একটি চমৎকার বই। বইটিতে প্রোগ্রামিং ভাষা হিসেবে সি (C) ব্যবহার করা হয়েছে। নতুন কম্পিউটার সায়েন্সে ভর্তি হবে এমন শিক্ষার্থীদের জন্য বইটি বেশ সহায়ক।

cse

এছাড়া প্রচুর অনলাইন জাজ আছে যেখানে শিক্ষার্থীরা প্রোগ্রামিং এ প্রাথমিক ধারণা অর্জন করে অনুশীলন করতে পারে। যারা অনলাইন জাজের সাথে পরিচিত নয় তাদের জন্য বলে রাখা ভালো এটি একটি অনলাইনভিত্তিক সফটওয়্যার। যেখানে কোড রান করার পাশাপাশি কোডের কোনো সিনট্যাক্সে ভুল আছে কিনা সেগুলো জানা যাবে। এভাবে অনলাইন জাজের কন্টেস্টে অংশগ্রহণ, অনুশীলন ও ভুল ধরার মাধ্যমে প্রোগ্রামিং এ নিজেকে বেশ ভালোভাবে ঝালিয়ে নেয়ার সুযোগ রয়েছে। প্রচুর অনলাইন জাজ রয়েছে যেখানে কোড প্র্যাক্টিস করা যায়। এর ভেতর একজন বাংলাদেশির করা অনলাইন জাজ হচ্ছে Lightoj। এই জাজটির প্রতিষ্ঠাতা জানে আলম জান। এখানে খুব সহজে একটি অ্যাকাউন্ট খুলে কোড প্র্যাকটিস করা যায়। এছাড়াও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ুয়াদের কাছে UVa online জাজটি খুব জনপ্রিয়। এছাড়া অন্যান্য অনলাইন জাজগুলোর মধ্যে রয়েছেঃ

অনেকে আবার প্রোগ্রামিং এ ভালো না করতে পেরে হতাশায় ভুগতে থাকে। কম্পিউটার সায়েন্সে পড়া অনেক শিক্ষার্থীকেই এরকম হতাশাপূর্ণ হয়ে অন্য কোনো বিষয়ে মাইগ্রেট করতে দেখা যায়। আসলে সঠিক গাইডলাইন ও অনুশীলনের অভাবে এমনটা হয়ে থাকে। তারা ভেবেই বসে যে, কম্পিউটার সায়েন্সে প্রোগ্রামিং ছাড়া বুঝি আর কিছু নেই! কিন্তু তারা জেনে অবাক হবে যে, কোডিং এ দক্ষতা না থাকলে কম্পিউটার সায়েন্সে আরও অনেক সম্ভাবনা আছে যা দিয়ে সে নিশ্চিত কর্মজীবন অতিবাহিত করতে পারে। সাধারণত যারা কোডিং এ ভালো তারা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত ফার্ম বা প্রতিষ্ঠানে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার কিংবা ডেভেলপার হিসেবে যোগদান করেন। সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার বা ডেভেলপার ছাড়াও অন্যান্য যে চাকুরিগুলো সে পেতে পারেঃ

  • Quality Assurance Engineer
  • Operation Executive
  • IT Support Executive
  • Graphic Designer
  • UI/UX Designer
  • Network Engineer
  • Tech Writer

cse

অগাধ সম্ভাবনার এই বিষয়টিতে অধ্যয়ন করে দেশবিদেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করার এক সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে। সকল নতুন কম্পিউটার সায়েন্সে পড়ুয়াদের জন্য রইলো শুভকামনা!

 

 

সকল মন্তব্য (0)

মন্তব্য করুন

ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য