লোগো ডিজাইন স্কেচের উপায়

প্রকাশিতঃ 2 এপ্রিল, 2018, দেখা হয়েছেঃ

লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে স্কেচিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। সাধারণত দ্রুততার সাথে ইউনিক ডিজাইন পাওয়ার জন্য গ্রাফিক এবং UI ডিজাইনাররা কোনো লোগো ডিজাইনের কাজে হাত দেয়ার আগে কাগজে স্কেচিং করে লোগোর মোটামুটি একটা মডেল দাঁড় করিয়ে ফেলেন। এতে করে ডিজাইনাররা যেকোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে তাদের কল্পনাকে ভিজুয়ালাইজেশন করতে সক্ষম হন। অনেক সৃজনশীল লোগোর ডিজাইন প্রাথমিক রুপ লাভ করে।

আসলে এখনকার দিনে আমরা যে জনপ্রিয় লোগোগুলো দেখি তার সবগুলোই প্রথমদিকে স্কেচিং এর ধাপ অতিক্রম করে এসেছে। এর পরে এসব স্কেচ করা লোগো ক্লায়েন্টের চাওয়া অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়েছে।

একেক ডিজাইনারের কাজের পদ্ধতি একেকরকম। কিন্তু স্কেচিং এর ব্যাপারটি সব ডিজাইনারকে একত্রিত করেছে। কারণ সবাই-ই লোগো ডিজাইনের আগে স্কেচ করে নেন। কেউ হয়তো কাগজে করে, কেউবা কম্পিউটারে। কিন্তু সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি হচ্ছে স্কেচিং এর প্রথম ডিজাইনটা কাগজেই এঁকে ফেলা। এতে আপনার কল্পনার রাজ্যে যে ডিজাইনগুলো ঘুরপাক খাচ্ছিলো সেগুলোর বাস্তব রুপ পাবে।

অনেকেই হয়তো বলতে পারেন আমি ভালো আঁকতে পারি না। আসলে ভালো আঁকতে না পারাটা স্কেচ না করার কোনো অজুহাত হতে পারে না। স্কেচ করার সময় অনেক ভুল হতেই পারে। আর এটাই স্বাভাবিক। সময় ও ধৈর্য নিয়ে এই ব্যাপারটি সামলাতে পারলে প্রাথমিক পর্যায়ে যে স্কেচটি আপনার মন খারাপ করে দিয়েছিলো, সেটিই একসময় করে তুলবে আত্মবিশ্বাসী। অবাক হয়ে যাবেন নিজের স্কেচ দেখে!

 

আজ আমি স্কেচিং এর কিছু ধাপসমূহ নিয়ে আলোচনা করবো।

  • ব্র্যান্ডের খোঁজখবর নিন
  • ব্র্যান্ডিং এর মূল উপাদানটি খুঁজে বের করুন
  • সফটওয়্যারের সাহায্য নিন
  • নিজের স্বকীয়তাকে প্রকাশ করুন
  • স্কেচ ডেভেলপ করতে থাকুন
  • কিছু রঙ দিয়ে পরীক্ষা করুন
  • ফিনিশিং টাচ 

 

logo sketch

 

১। ব্র্যান্ডের খোঁজখবর নিনঃ 

স্কেচিং করার প্রথম ধাপই হচ্ছে ক্লায়েন্টের ব্র্যান্ড সম্পর্কে ভালভাবে ধারণা নেয়া। কাগজে পেন্সিলের প্রথম আঁচড় দেয়ার আগেই জেনে নিন আপনার ক্লায়েন্ট ব্র্যান্ড কোন কোন পণ্য নিয়ে কাজ করে, এই পণ্যের কনজিউমার কারা এবং আপনার ক্লায়েন্ট এর টার্গেট মার্কেট কোনটি। পণ্যের কনজিউমাররা কোন শ্রেণীগোষ্ঠীর এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। ব্র্যান্ডের পণ্য থেকে তাদের চাওয়াপাওয়া কি সেটাও বিবেচনায় রাখতে হবে।

 

logo sketch

২। ব্র্যান্ডিং এর মূল উপাদানটি খুঁজে বের করুনঃ

স্কেচিং এর সময় ব্র্যান্ডিং এর মূল উপাদানগুলো মাথায় কাজ করতে হবে। এতে করে লোগোর সাথে ব্র্যান্ডের সাদৃশ্য পেতে সহজ হবে। লোগোর মধ্যে পণ্য বা প্রোডাক্টের মূল উপাদানগুলো ফুটে উঠবে। যেমনঃ বিভিন্ন রেস্টুরেন্টের লোগোতে চামচ, গ্লাস, ডিশ কিংবা বিভিন্ন লোভনীয় খাদ্যদ্রব্যের ছবি থাকে। এতে করে ঐ নির্দিষ্ট লোগো দিয়ে রেস্টুরেন্টের মূল উদ্দেশ্য বোঝা যাচ্ছে। কনজিউমাররা ঐ লোগোর সাথে পরিচিত হয়ে উঠেন। কিংবা বিভিন্ন পোস্টার বা ব্যানারে ঐ লোগো দেখে সহজেই ঐ নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে চিনে ফেলেন।

logo sketch

 

৩। সফটওয়্যারের সাহায্য নিনঃ

কিছু সফটওয়্যার আছে যেগুলো আপনাকে স্কেচিং এর জন্য অনেক সাহায্য করে থাকবে। এতে করে আপনি আপনার টার্গেট পণ্যের আদলে অনেক ধরণের আইকনিক লোগো পাবেন। যেমনঃ Noun Project এ আপনি হাজার হাজার আইকন পাবেন। ধরা যাক আপনি ফুড সংক্রান্ত কোনো পণ্যের লোগোর স্কেচ করবেন। এখানে ফুড লিখে সার্চ দিলে ফুডের সাথে জড়িত কিছু ভিজুয়াল আইকন পাবেন। আর আই আইকনের কন্সেপ্ট ধরে স্কেচের আইডিয়া ধরে ফেলতে পারবেন। এরপর নিজের কল্পনাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সেই আইকনিক ইমেজকে মডারেট করে স্কেচ করে ফেলতে পারবেন আপনার উদ্দিষ্ট লোগোকে।

noun-project11-1024x634

৪। নিজের স্বকীয়তাকে প্রকাশ করুনঃ

ব্র্যান্ড সম্পর্কে আইডিয়া, ব্র্যান্ডের মূল উপাদান খুঁজে পাওয়া ও প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার – এই সবকিছুর ব্যবস্থা করে ফেলতে পারলে আপনি এখন নিশ্চিন্তে স্কেচ করার জন্য বসে পড়ুন। একটা জিনিস খেয়াল রাখা জরুরি যে স্কেচিং এর কোয়ালিটি নিয়ে চিন্তা না করে যতগুলো ইচ্ছা স্কেচ করা উচিত যত দ্রুত পারা সম্ভব! কারণ আপনার ব্রেইন খুব তাড়াতাড়ি কাজ করে। এজন্য হঠাৎ করে কোনো ডিজাইন মাথায় আসা মাত্রই সেই ডিজাইনের ভিজুয়ালাইজেশনের ব্যবস্থা করে ফেলা উচিত। এভাবে হয়তো পাঁচ থেকে ছয়টি স্কেচ এঁকে ফেললেন। এরপর এই পাঁচ ছয়টি স্কেচ থেকে সবচেয়ে ভালো স্কেচটি লোগোর জন্য বেছে নিন। এরপরেও যদি মনে হয় পাঁচ কিংবা ছয়টি স্কেচের কোনোটি মনঃপুত হচ্ছে না সেক্ষেত্রে আরও কিছু স্কেচ এঁকে ফেলুন। এভবে ধীরে ধীরে স্কেচ করে নিজের স্বকীয়তাকে প্রকাশ করতে করতে একসময় আপনার স্কেচিং এর ভালো দক্ষতা চলে আসবে।

logo sketch

৫। স্কেচ ডেভেলপ করতে থাকুনঃ

স্কেচ থেকে পছন্দসই একটা স্কেচ বাছাই করে ফেলুন যা আপনার ক্লায়েন্টের বা প্রোডাক্টের মূল লক্ষ্য প্রকাশ করতে সহায়তা করবে। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ডিজাইনটা যাতে বেশ সুস্পষ্ট, আকর্ষণীয় ও মার্জিত হয়। স্কেচকে ধীরে ধীরে প্রফেশনাল লোগোর আকার দিতে থাকুন। তবে কম্পিউটারের মাধ্যমে এখনই নয়। স্কেচের উপরই ডিজাইনটিকে আরও প্রকট ও সুস্পষ্ট করে তুলুন। আরও বাড়তি কি কি বৈশিষ্ট্যযুক্ত করা যায় সেই ব্যাপারগুলোর দিকে নজর দিন।

logo sketch

৬। কিছু রঙ দিয়ে পরীক্ষা করুনঃ

ব্যস, স্কেচের কাজ শেষ তো? সাদাকালো স্কেচ দেখতে ভালো লাগছে না? তো স্কেচের উপর কিছু রংতুলির ছোঁয়া দিতে থাকুন। আসলে লোগোর উপর সঠিক রঙটি দেয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন ধরণের কালার স্কিম আছে। এই সবগুলো দিয়েই স্কেচের উপর পরীক্ষা করে দেখতে পারেন। যেটা সবচেয়ে ভালো ও আকর্ষণীয় মনে হবে সেটাকে বাছাই করে নিন। একেক রঙ একেক ধরণের অর্থ প্রকাশ করে। ধরা যাক, আপনি ট্যুরিজম সম্পর্কিত কোনো কোম্পানির লোগো ডিজাইন করছেন। তাই এক্ষেত্রে, সবুজসহ প্রকৃতির সাথে সম্পর্কিত রঙগুলোকে বাছাই করে নিন।

logo sketch

 

৭। ফিনিশিং টাচঃ

এখন লোগোটিকে পূর্ণতা দেয়ার পালা। খেয়াল করে লোগোর কোন অংশটুকু সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ এবং কোন অংশটুকু কম গুরুত্বপূর্ণ। বেশি গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো ভালোভাবে হাইলাইট করার চেষ্টা করুন। আর এভাবেই একটা সাধারণ কাগজে আঁকা স্কেচ একটি পরিপূর্ণ লোগোতে পরিপূর্ণতা পাবে।

logo sketch

 

লোগো স্কেচ করা কোনো লোগো ডিজাইনের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। মূলতঃ এই ধাপের উপর নির্ভর করেই একটা ভালোমানের লোগো পরিপূর্ণতা পায়। তাই লোগো ডিজাইনের আগে স্কেচ করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দিন।

 

তথ্যসূত্রঃ

https://www.designhill.com/design-blog/proceed-sketching-logo-design/

https://logojoy.com/blog/5-famous-logos-that-were-sketched-on-napkins/

 

 

 

সকল মন্তব্য (0)

মন্তব্য করুন

ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য