গ্রাফিক ডিজাইনার না হয়েও যে ১০ টি টুলস ব্যবহার করে খুব সহজেই ডিজাইন করতে পারবেন!

প্রকাশিতঃ 4 November, 2020, দেখা হয়েছেঃ 3,744 বার

কিছু মানুষ আছে যারা জন্মগতভাবেই শিল্পী। তারা তাদের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে কেউ চিত্রশিল্পী কেউ বা জনপ্রিয় ডিজাইনার! অনেকে তো মজা করে বলেই থাকেন, জগতে দুইধরণের মানুষ আছে। ডিজাইনার আর নন-ডিজাইনার। নন-ডিজাইনাররা ডিজাইনারদের দক্ষতা দেখে কিছুটা মন খারাপ করবে, আর এটাই স্বাভাবিক! তার মানে এই না যে নন-ডিজাইনাররা তাদের নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে সফল না! আসলে যেকোনো রুচিশীল শিল্পের প্রতি সবারই কমবেশি আকর্ষণ থাকে।

অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যারা কাজের প্রেক্ষিতে ফ্রিল্যান্সার ডিজাইনার রিক্রুট করে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠান আছে যাদের এই সক্ষমতা নেই। কিন্তু কাজ তো থেমে থাকে না। প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং থেকে শুরু করে বিভিন্ন কাজে একজন ডিজাইনার সত্যিই খুব প্রয়োজনীয়। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো বুদ্ধি হচ্ছে অনলাইনে ডিজাইনের জন্য যে ফ্রি টুলসগুলো আছে সেগুলো যথাযথভাবে ব্যবহার করা। আপনি যদি ফটোশপ, ইলাস্ট্রেটর কিংবা কালার থিউরি শেখাকে কষ্টকর মনে করেন, মন জুড়িয়ে দেয়া কালার প্যালেট বাছাই করতে না পারেন, টাইপফেসগুলোকে একে অপরের সাথে মেলাতে না পারেন তাহলে আপনাকে অবশ্যই অনলাইনের এসব ফ্রি টুলসের উপর নির্ভরশীল হতে হবে।

আজ আমি এরকম কিছু ফ্রি টুলস এবং ট্রিকস নিয়ে আলোচনা করবো।

  • Canva
  • Logo Garden
  • PicMonkey
  • PICCOLLAGE (DESKTOP, IOS, ANDROID)
  • BeFunky
  • Snappa
  • Stencil
  • Pixlr
  • Enthusem
  • Tailor Brands

 

১। Canva:

হাজার হাজার টেম্পলেট সমৃদ্ধ এই সাইটটি ডিজাইনের কাজের জন্য এককথায় অসাধারণ। প্রফেশনাল অনেক ডিজাইনারও তাদের কাজের সুবিধার জন্য এই সাইটের সাহায্য নিয়ে থাকেন। এই টুলসের ওয়েব এবং মোবাইল অ্যাপস ভার্সনে থাকার কারণে এই সাইটের বিভিন্ন ফিল্টার দিয়ে ইমেজ এডিট করা এখন অনেক সহজ হয়ে গেছে। এছাড়াও Canva থেকে আপনি যেসব সুবিধা পাবেন সেগুলো হচ্ছেঃ

  • প্রচুর পরিমাণের স্টক ইমেজ, ইলাস্ট্রেশন ও গ্রাফিক ভেক্টর
  • প্রচুর ফন্ট
  • আইকন ও শেইপ
  • ফটো এডিট করার জন্য এডিটিং টুলস এবং ফিল্টার

প্রফেশনাল ফ্লেয়ার, পোস্টকার্ড, সামাজিক মাধ্যম ও ব্যানারের জন্য অ্যাড তৈরির জন্যও Canva হতে পারে আপনার নিত্যসঙ্গী! Canva সম্পূর্ণ ফ্রি তে ব্যবহার করা যাবে কিন্তু বাড়তি কিছু সুবিধা পাওয়ার জন্য আপনাকে মাস শেষে প্রায় ১১০০ টাকা গুণতে হবে। কারণ কথায় আছে, “জিনিস যেইটা ভালো, দাম তার একটু বেশি!”

২। Logo Garden:

Canva এর মতো Logo Garden ও ডিজাইনের জন্য একটি অত্যন্ত চমৎকার টুলস। তবে Canva এর থেকে এর পার্থক্যটি হচ্ছে এটি শুধু লোগো নিয়ে কাজ করে। এর মানে হচ্ছে যারা কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই শুধু ডিজাইনের ব্যাসিক জেনে কাজের জন্য লোগো ডিজাইন করতে চাচ্ছেন তারা Logo Garden কে ভরসা করতে পারেন! নতুন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা স্টার্টআপ কোম্পানি তাদের ব্র্যান্ডিং ও লোগো ডিজাইনের জন্য এই টুলসটি ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও আপনি Logo Garden থেকে যে সুবিধাগুলো পাবেন সেগুলো হচ্ছেঃ

  • লোগো ডিজাইনের জন্য রেডিমেড সিম্বল
  • ধাপে ধাপে লোগো ডিজাইনের সকল সুবিধা
  • ডিজাইন ও ব্র্যান্ডিং এর জন্য পর্যাপ্ত রিসোর্স

৩। PicMonkey:

ছবি এডিট থেকে শুরু করে কোলাজ তৈরি ও স্ক্র্যাচ থেকে ডিজাইন তৈরির জন্য PicMonkey একটি চমৎকার টুলস। ডিজাইন বুঝে কিন্তু ফটোশপ সম্পর্কে তেমন কোনো জ্ঞান না থাকা মানুষ এই সাইট থেকে ডিজাইন সম্পর্কিত এই কাজগুলো করতে পারবেন। তাছাড়াও এখানে ছবি এডিট করার জন্য বিভিন্ন অ্যাফেক্ট ব্যবহারের সুবিধা পাওয়া যাবে যা সত্যিই অসাধারণ। প্রচুর ফন্ট, ফিল্টার, ওভার লে এবং টেক্সট টুলস দিয়ে তাই এখন কোনো ডিজাইন করা কোনো সমস্যাই না। PicMonkey কেমন সার্ভিস দেয় তা বোঝার জন্য এটি ব্যবহার করার ফ্রি ট্রায়ালের সুবিধা আছে। যদি একবার ভালো লেগে যায় তবে প্রতিমাসে মাত্র ৭০০ টাকা দিয়ে এই চমৎকার সার্ভিসগুলো পেতে কেউ কার্পণ্যবোধ করবে না!

৪। PICCOLLAGE (DESKTOP, IOS, ANDROID):

অনেক সময় ডিজাইনের জন্য কোলাজ তৈরি দরকার পড়ে। এক্ষেত্রে PicCollage বেশ চমৎকার একটি টুলস এবং সাইট কোলাজ তৈরির জন্য। বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম যেমন iOS কিংবা Desktop ভার্সনের জন্য এই কোলাজগুলো তৈরি করা যাবে। এই সাইটে প্রচুর পরিমাণে বর্ডার, স্টিকার এবং কোলাজ তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস পাওয়া যাবে। এছাড়া বিভিন্ন পোর্ট্রেট ইমেজ এডিট করারও সুবিধা আছে এখানে, যা কোনো অ্যাপের সাহায্য ছাড়াই করা সম্ভব। যার মানে দাঁড়াচ্ছে, PicCollage টুলস আপনাকে কোলাজ তৈরির আগে পোর্ট্রেট এডিট করার সকল সুবিধা দিবে।

৫। BeFunky:

 

নন ডিজাইনারদের জন্য BeFunky একটি চমৎকার টুলস। এর মধ্যে বিভিন্ন চমৎকার ইমেজ এডিটের টুলস পাওয়া যাবে। তাই এখন ফটোশপ কিংবা ইলাস্ট্রেটর না জানা মানুষও BeFunky দিয়ে অসাধারণভাবে  তাদের ছবি এডিট করতে পারবে। এছাড়াও BeFunky তে যেসকল সুবিধা পাওয়া যাবেঃ

  • ওয়েব অ্যাড ও সামাজিক মাধ্যমের জন্য ব্যনার ও টেমপ্লেট
  • ব্রোশিউর
  • ইনফোগ্রাফিক্স
  • পোস্টার
  • গ্রাফিক্স এবং ওভার লে

৬। Snappa:

 

ইমেজ ডাইমেনশন নিয়ে অনেকেই বেশ ঝামেলায় পড়ে যায়। অনেক ডিজাইনার তো বিভিন্ন প্রজেক্টে ডিজাইনের সময় কোনো নির্দিষ্ট ছবির সঠিক মাপ নির্ধারণ করতে গিয়ে ঝামেলায় পড়ে যান। সামাজিক মাধ্যমের জন্য পোস্ট, ইনফোগ্রাফিক্স, ফিচার ইমেজ, হেডার কাভার ফটো প্রভৃতির জন্য সঠিক মাপের ছবি বাছাই করতে Snappa নামের টুলসটির জুড়ি নেই। এই গ্রাফিক্স টুলসটি দিয়ে আপনি কোনো পোস্টের জন্য সঠিক মাপের ছবিটি বাছাই করেছেন কিনা সেই ব্যাপারটি বুঝতে সাহায্য করে। এখানে প্রচুর পরিমাণে ফ্রি হাই রেজুলেশনের স্টক ইমেজ থাকায় তা ডিজাইনের জন্য বেশ ভালো সাহায্য করবে।

৭। Stencil:

Stencil সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট, গ্রাফিক্স অ্যাড, কনটেন্ট মার্কেটিং ইমেজ প্রভৃতি ডিজাইনের সুবিধা দিয়ে ডিজাইন ব্যাকগ্রাউন্ডের নয় এমন মানুষদের জন্য একটি অত্যন্ত চমৎকার টুলস। প্রায় প্রতিদিনই এই সাইটে নতুন নতুন রয়্যালিটি ফ্রি ইমেজ আপলোড করা হয় যেখানে ডিজাইন এবং ইলাস্ট্রেশনের এক অপূর্ব সমন্বয় ঘটেছে! বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের জন্য Stencil দিয়ে ইমেজ রিসাইজ ও পোস্ট দেয়ার জন্য শিডিউলিং এরও সুবিধা পাওয়া যাবে।

৮। Pixlr:

প্রফেশনাল ডিজাইনারদের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম Pixlr। সত্যি কথা বলতে গেলে এটি  Adobe Photoshop এরই একটা অনলাইন ভার্সন, যা বিনামূল্যে এবং সহজে ব্যবহার করা যাবে! ফটো এডিট থেকে শুরু করে যেকোনো সাইজের ডিজাইন করার সুবিধা রয়েছে এই টুলস দিয়ে। Pixlr এডিটর দিয়ে এক মিনিটেরও কম সময়ে অত্যন্ত চমতকারভাবে ছবি এডিট করা সম্ভব। এজন্য আপনাকে অবশ্যই ফটোশপের জ্ঞান থাকতে হবে না! এছাড়াও Pixlr এ আপনি অন্য যেসকল সুবিধা পাবেনঃ

  • নিজের তৈরি ফন্ট আপলোড করার সুবিধা
  • কাস্টম ইমেজ সাইজ বাছাইের সুযোগ
  • মোবাইল এবং ডেস্কটপ ভার্সন
  • প্রচুর ব্লগ এবং এবং টিউটোরিয়াল

৯। Enthusem:

প্রিন্টিং সেক্টরের সাথে ব্লিড লাইন, কালির বেশকম প্রভৃতি বিষয় বেশ ভালোভাবে জড়িয়ে আছে। প্রফেশনালি ডিজাইন করতে না পারলে প্রিন্টিং এর পরেই এসব ডিজাইনকালীন অসংগতিগুলো ধরা পড়ে। Enthusem নামের এই টুলসটি আপনাকে ব্লিড পয়েন্ট থেকে শুরু করে প্রিন্টিং ম্যাটেরিয়ালসের ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো জড়িয়ে আছে, সেগুলো থেকে নিস্তার দিবে। কারণ এই টুলস দিয়েই আপনি এখন প্রফেশনাল মানের ডিজাইন করতে পারবেন। লোগো, সামাজিক মাধ্যমের প্রোফাইল ইমেজ, স্ট্রিটভিউ ইমেজ প্রভৃতি এখন শুধু ড্র্যাগ অ্যান্ড ড্রপ অপশন ব্যবহার করেই বানাতে পারবেন আপনি।

১০। Tailor Brands:

এই টুলসটি অন্যান্য সকল টুলসের মতো ফ্রি সার্ভিস দেয় না। তবে মাসিক চার্জ যা আসে সেটাও কিন্তু খুব আহামরি না! মাত্র ৩০০ টাকা খরচ করে আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য চমৎকার লোগো ডিজাইন করতে পারবেন কোনো পরিশ্রম ছাড়াই! এখানে আপনি যে সুবিধাগুলো পাবেনঃ

  • সেরা ৬ ডিজাইনের লোগো এডিট করার সুবিধা
  • প্রিন্ট ম্যাটেরিয়াল, ব্র্যান্ড বুকস এবং প্রেজেন্টেশন

 

সকল মন্তব্য (0)

মন্তব্য করুন

ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য