এখনকার দিনে বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান কিংবা সংস্থার একটি অন্যতম উপাদান হচ্ছে তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট। একমাত্র ওয়েবসাইটের মাধ্যমেই কোনো প্রতিষ্ঠান তাদের পণ্য প্রচার প্রচারণা কিংবা প্রসারের জন্য সাহায্য পেতে পারে। এটি তাদের রিমোট গ্রাহক পেতেও বেশ সাহায্য করে। কিন্তু ব্যাপারটি আশংকাজনক হলেও সত্য যে, অনলাইনে পাবলিশ হওয়া যেকোনো কন্টেন্ট সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হতে পারে। সেটা ডেভেলপারদের দ্বারাই হোক কিংবা অন্য কারো দ্বারা! বিভিন্ন কন্টেন্ট, ফিচার বা ডিজাইন আর্টিকেলের ইমেজ বা কল –টু-অ্যাকশনে এসব পরিবর্তন আসতে পারে।
আর এভাবেই অতি প্রয়োজনীয় কোনো তথ্য বা ডিজাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। আর এসব ঝামেলা থেকে দূরে থাকতেই বিভিন্ন স্টাইল গাইডের প্রচলন হয়েছে।
ধরা যাক, আপনি একজন ফ্রিল্যান্সার। আপনি কিছু ছোট ব্যবসায়িক ক্লায়েন্ট ও কিছু মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেশনের হয়ে কাজ করেন। তাদের কাজ করার ধারার উপর ভিত্তি করেই কিন্তু তাদের জন্য আপনার তৈরি করা স্টাইল গাইডটি সফলতা পাবে! ধরা যাক, আপনি যাদের জন্য সাইট তৈরি করছেন তাদের একদল সুদক্ষ নিজস্ব টিম আছে যারা এই সাইট মেইনটেইনের কাজ করবে। আসলে একটা ভালো স্টাইল গাইড আপনার এবং আপনার ক্লায়েন্টের চূড়ান্ত সফলতাকেও নির্দেশ করে অনেক সময়!
আজ আমরা ফ্রিল্যান্সার ডিজাইনাররা যে স্টাইল গাইডগুলো মেনে সফলতা অর্জন করতে পারেন, সে ব্যাপারে কথা বলবো।
স্টাইল গাইড কি? কিছু উদাহরণ………
সহজ কথায় বলতে গেলে, স্টাইল গাইড হচ্ছে কোনো প্রজেক্টের কোডের একটা জীবন্ত খসড়া। যেখানে কোডের বিভিন্ন ইলিমেন্ট এবং সাইটের কোডেড মডিউল প্রদর্শন করে। আসলে এটি ফ্রন্ট-এন্ড কোডকে আরও কমিয়ে আনতে সাহায্য করে! এছাড়া এটি হেডার স্টাইল বা কালার প্যালেটের মতো ভিজ্যুয়াল ল্যাঙ্গুয়েজ ডকুমেন্ট করার কাজেও ব্যবহৃত হয়। আর এই ডকুমেন্ট পরবর্তীতে একটা প্রজেক্টের সাথে সম্পৃক্ত সকল মানুষের(যেমনঃ প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী, ডিজাইনার, ডেভেলপার) একটা সম্মিলিত আলোচনার ক্ষেত্র। সাইটের যেকোনো পরিবর্তন কিংবা ইটারেশনের জন্য আলোচনা এবং রেফারেন্স এই স্টাইল গাইডে নির্দেশ করা থাকে। অনেক কোম্পানি আবার তাদের স্টাইল গাইড নির্ধারণের জন্য অনলাইনের সাহায্য নেয়। আর এর জন্য স্টারবাকসের মতো সাইটগুলো বেশ ভালো সাহায্য করে।
স্টাইল গাইড তৈরি করার জন্য আসলে কোনো আদর্শ নীতিমালা নেই। আর এই স্টাইল গাইডগুলোর ফাংশনগুলো সবক্ষেত্রেই প্রায় একই। অনেক কোম্পানি আছে যারা তাদের নিজস্ব স্টাইল গাইড প্রকাশ করে থাকে। এক্ষেত্রে আপনারা Shopify এর স্টাইল গাইডটি অনুসরণ করতে পারেন। কালার ও লোগো পজিশনিং এর ধারণা এখান থেকে পেতে পারেন। এছাড়া এখানে আরেকটি সেকশন আছে যেখানে language, tone of voice প্রভৃতি বিষয় নিয়ে চমৎকার টিপস দেয়া আছে।
ভয়েস অফ টোন বিষয়টি নিয়ে অনেকের দ্বিধা থাকতে পারে। সহজ করে বলতে গেলে এটি মূলত, আপনি যে সাইট নিয়ে কাজ করছেন তার গ্রাহকদের প্রতি সাইটের রেসপন্স কেমন হবে তা নির্ধারণ করে। Dropbox এবং Buzzfeed এর মতো নামকরা সাইটগুলোরও আলাদা আলাদা স্টাইল গাইড আছে। এই স্টাইল গাইডগুলোতে CSS এবং লোগো ডকুমেন্টের জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশাবলী দেয়া আছে। কাজের প্রয়োজনে এগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। এছাড়াও আপনারা স্টাইল গাইডের এক বিশাল জগতে প্রবেশ করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুনঃ
স্টাইল গাইড যেভাবে সময় বাঁচায়
একটা নির্দিষ্ট মুহূর্তে একটি প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করা স্বাভাবিক। কিন্তু ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ারে এরকম ঘটনা ঘটা খুব দুর্লভ। কারণ এই সেক্টরে একই সময়ে একের অধিক প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করাটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা, যা ফ্রিল্যান্সারদের প্রচুর চাপের ভেতর রাখে। আর একারণে একটা নির্দিষ্ট নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে না চললে সেটা বিভিন্ন প্রজেক্টকে একে অপরের সাথে গুলিয়ে দিতে যথেষ্ট! আপনার ক্লায়েন্টের টিমের সবাই কিন্তু একই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, কিন্তু সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য আলাদা আলাদা কাজে নিযুক্ত থাকে।
স্টাইল গাইড তৈরি করার মাধ্যমে আপনি আপনার প্রজেক্ট সম্পর্কে একটা সহজবোধ্য ডকুমেন্ট তৈরি করেন যা আপনার প্রজেক্ট সম্পর্কে অবগত না এমন কাউকে বুঝিয়ে দিতে সাহায্য করে। কাজেই যে কোড বুঝে না, সেও আপনার প্রজেক্ট সম্পর্কে ভালো একটা ধারণা পেতে পারে! আর এভাবে একটা সুসংহত স্টাইল গাইড তৈরি করে আপনি দীর্ঘদিন পরেও অন্য যেকোনো প্রজেক্টে ব্যবহার করতে পারেন। আর এভাবেই আপনি যেকোনো প্রজেক্টের জন্য সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস “সময়” বাঁচাতে পারবেন। এই কাজগুলো সম্পন্ন হতে হয়তো কিছুটা সময় নিবে কিন্তু এর ফলাফল হবে বেশ ফলপ্রসূ। আর এভাবে, একটা প্রজেক্টে বিভিন্ন ডিজাইনার ও ডেভেলপারের একই সুতোয় বাঁধতে সাহায্য করে।
অর্থাৎ বোঝা যাচ্ছে, যোগাযোগ এই টুলসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। আর এভাবেই স্টাইল গাইড আপনার সময় বাঁচাবে।
কিভাবে আপনার ফ্রিল্যান্স স্টাইল গাইড তৈরি শুরু করবেন
স্টাইল গাইড তৈরির পূর্বে অনেকেই চিন্তায় পড়ে যান কিভাবে এবং কোথা থেকে শুরু করতে হবে এটা ঠিক করতে না পেরে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ বুদ্ধি হচ্ছে, যে সাইট নিয়ে কাজ করছেন তার মূল বিষয়গুলো মানে ভিত্তিগুলো বের করে ফেলা। এই ভিত্তিগুলো হতে পারে আপনার সাইটের কালার প্যালেট, গ্রিড লেআউট সিস্টেম, বিভিন্ন টেক্সটের ফন্ট স্টাইল। আর এর মধ্যে স্পেসিং, কালার স্কিম, ইমেজ সাইজ আর টাইপোগ্রাফির গাইডলাইনের প্রতি বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। এই ইলিমেন্টগুলোর ভেতর কোনগুলো ব্র্যান্ডের জন্য প্রয়োজনীয় সেগুলো বের করতে হবে। যেমন ইয়েল্পের করা এই লিঙ্কের স্টাইল গাইডে ফন্ট, গ্রিড সিস্টেম, কালার, লিঙ্ক, বাটন, ফর্ম, নেভিগেশন প্রভৃতি বিষয়গুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে।
এছাড়া স্টাইল গাইডের ভেতরেও কিছু সীমাবদ্ধতা তৈরি করে ফেলা উচিত। যেখানে নির্ধারণ করা থাকবে কোন জিনিসগুলো আপনার স্টাইল গাইড কাভার করবে আর কোনগুলোকে করবে না। যদিও ইয়েল্পের নিজেদের জন্য তৈরি করা আলাদা আরেকটি স্টাইল গাইড রয়েছে। এটি সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন। এখানে তারা তাদের UI/UX এর বিষয়গুলোর প্রতি বেশি গুরুত্ব দিয়েছে। আর এভবেই প্রত্যেকটি সাইট আলাদাভাবে বিভিন্ন বিষয়ের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করে একে অন্যের থেকে স্বতন্ত্র হয়েছে। আপনি আপনার সাইটের জন্য প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, ভিজ্যুয়াল ডিজাইন, কপিরাইট প্রভৃতি বিষয়গুলো রাখতে পারেন।
সহজ কিছু নিয়ম মেনে স্টাইল গাইড রক্ষণাবেক্ষণ করুন
InDesign ওপেন করে এখানে যেকোনো একটি নাম দিয়ে PDF ফাইল পাবলিশ করে স্টাইল গাইড আপডেট করা বুদ্ধিমানের কাজ না। খুব সহজে রক্ষণাবেক্ষণ করার উপযুক্ত একটি স্টাইল গাইড তৈরি করতে Frontify কিংবা Huge’s free Styleguide tool – এই লিঙ্ক দুটির যেকোনো একটিতে প্রবেশ করে এদের ফ্রি ট্রায়াল ব্যবহার করতে পারেন। সাইট আপডেটের মাধ্যমে এই স্টাইল গাইডগুলো আপডেটের মাধ্যমে আপনি একেবারেই নিশ্চিত থাকতে পারেন। তবে জোম্বি স্টাইল গাইড থেকে একটু সতর্ক থাকুন। এটি আপনার প্রজেক্টকে সেকেলে বানিয়ে দিতে যথেষ্ট। জোম্বি স্টাইল গাইড সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন।
স্টাইল গাইড সময়ের সাথে সাথে সবসময়ই পরিবর্তিত হয়, তবে এগুলো যেন নতুন ভার্সনে সবসময়ই আপডেট করা থাকে। আর এভাবেই সহজ কিছু নিয়ম মেনে স্টাইল গাইড রক্ষণাবেক্ষণ করা সম্ভব, তবে এক্ষেত্রে ক্লায়েন্টকে অবশ্যই আপনার তৈরি করা গাইডটি কিভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে সে সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত করতে হবে।
শেষের কথা
একটা যথাযথ স্টাইল গাইড তৈরি করার পরই আপনার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না! কারণ স্টাইল গাইড তৈরি পর সেটা ক্লায়েন্টের কাছে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেয়াও আপনার একটি অন্যতম দায়িত্বের ভেতর পড়ে! এই গাইডটি কিভাবে ব্যবহার করতে হবে এবং কোনো কোন বিষয়গুলোর প্রতি অধিক নজর রাখতে হবে সে ব্যাপারগুলো সম্পর্কে ক্লায়েন্টকে সম্যক ধারণা দিতে হবে।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.pagecloud.com
https://www.yelp.com
মন্তব্য করুন
ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য