আপনি আপনার সার্ভিসটি যাদের জন্য প্রস্তুত করছেন তাদেরকে আমরা বলে থাকি ইউজার বা ভোক্তা। আর যেই অ্যাপ বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে আপনি তাদেরকে সার্ভিসটি দিবেন আমরা সেটিকে বলে থাকি প্রডাক্ট।
এবার আসি ইউজার এক্সপেরিএন্স (ইউএক্স) ডিজাইন (User Experience Design) বলতে আমরা কি বুঝি
এটি মূলত একটি প্রডাক্ট ডিজাইন পদ্ধতি যেটি আপনাকে আপনার ভোক্তার জন্য একটি দরকারী, সহজে ব্যবহারযোগ্য এবং ব্যবহার পরবর্তী সময়ে একটি ভাল অনুভূতি তৈরি করে এমন একটি প্রডাক্ট ডেভেলপ করতে সহায়তা করে।
ইউজার এক্সপেরিএন্স (ইউএক্স) রিসার্চ (User Experience Research) বেশ কিছু কারনে দরকার হয়ে থাকে।
উল্লেখযোগ্য কারণগুলো হলঃ
– এমন একটি পণ্য তৈরি করতে সহায়তা করবে যা ব্যবহার করা সহজ এবং আনন্দদায়ক
– আপনার ইনভেস্টমেন্ট রিটার্ন করাতে সহায়তা করবে, কারণ,
– এটি আপনার প্রডাক্টের কর্মক্ষমতা ও ভোক্তাদের মাঝে বিশ্বাসযোগ্যতার উন্নতি ঘটাবে
– আপনার প্রডাক্টের কনভার্সন রেট বাড়াবে
– ইউজার সাইন-আপ বাড়াবে
– গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়াবে
– ক্রয় হার বাড়াবে
– আপনার প্রডাক্টের ব্রান্ড ভ্যালু বাড়াবে
– কাস্টমার সার্ভিস কল কমাতে সাহায্য করবে ইত্যাদি
এটি এমন একটি প্রডাক্ট তৈরি করতে সহায়তা করবে যা আপনার সার্ভিস/প্রডাক্ট ব্যবহারকারীদের জন্য প্রাসঙ্গিক।
মূলত দুই ধরনের ইউজার রিসার্চ মেথড (User Research Method) রয়েছে। যেমনঃ কোয়ান্টিটেটিভ (Quantitative) এবং কোয়ালিটেটিভ (Qualitative)
আপনি যে ধরণের ব্যবহারকারীর গবেষণা করতে পারেন বা করা উচিত তা নির্ভর করে আপনি যে সাইট, সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশন ডেভেলপ করছেন তার ধরণ, প্রডাক্ট ডেভেলপমেন্টের জন্য নির্ধারিত সময়, ডেভেলপমেন্ট বাজেট এবং সামগ্রিক পরিবেশের উপর।
কোয়ান্টিটেটিভ মেথড (Quantitative Method)
যখন সংখ্যা বা নাম্বার আপনার ইউজার রিসার্চ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পরিমাপক হবে সেই পদ্ধতিকে আমরা বলি কোয়ান্টিটেটিভ রিসার্চ মেথড।
যেমনঃ অনলাইন সার্ভে, অনলাইন ভোটিং, গুগল এনালিটিক্স ও ডেটা স্টুডিও ইত্যাদি দিয়ে সংগ্রহিত ডেটা দিয়ে আপনি সিদ্ধান্ত নেবার চেষ্টা করবেন।
অন্যটি হল কোয়ালিটেটিভ মেথড (Qualitative Method)
এটি পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ভোক্তার আচরণের সরাসরি মূল্যায়ন, তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই, তাদের সমস্যাগুলো বের করা, প্রডাক্ট সম্পর্কে তাদের প্রতিক্রিয়া জানা ইত্যাদি কাজে সহায়তা করে।
যেমনঃ ইউজার ইন্টারভিউ, প্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ, গ্রুপ ডিসকাশন, এক্সপার্ট রিভিউ ইত্যাদির মাধ্যমে আপনার প্রডাক্টের সিদ্ধান্ত নেবার চেষ্টা করবেন।
তবে ক্ষেত্রবিশেষে উভয় ধরনের মেথড একত্রে অনুসরন করা যেতে পারে।
প্রায়শই দেখা যায়, কোয়ালিটেটিভ মেথড বেশি ব্যবহার উপযোগী কারন এটি বোঝা সহজ, সামগ্রিকভাবে কম ইনভেস্টমেন্টে ভাল ফলাফল দিয়ে থাকে এবং অনেকক্ষেত্রে শুধু ডেটা ভোক্তার আচরণের সরাসরি মূল্যায়ন করতে পারে না।
এবার বেশ কিছু প্রচলিত ইউজার রিসার্চ পদ্ধতি দেখা যাক,
০১. কার্ড সর্টিং (Card Sorting) এটি আপনার তথ্যগুলোকে একটি কাঠামোয় শ্রেণীবদ্ধভাবে সাজানোর জন্য সাহায্য করে এবং এটি নিশ্চিত করতে সহায়তা করে যে আপনার প্রডাক্টের কাঠামো ব্যবহারকারীদের ভাবনার সাথে মিলে।
০২. ব্যবহারকারীদের ইন্টারভিউ
০৩. ব্যবহারকারীদের সাথে গ্রুপ ইন্টারভিউ
০৪. ইন্ডাস্ট্রি এক্সপার্টদের মতামত নেয়া
০৫. একই ডিজাইনে একের অধিক ডিজাইন এক্সপার্টদের মতামত নেয়া
০৬. আপনার প্রডাক্টটি কিরকম হবে সেটির একটি ডেমো বানানো
০৭. ব্যবহারকারীদের মতামতগুলো সংগ্রহ করার জন্য অনলাইন/অফলাইন জরিপ চালানো
০৮. প্রডাক্টের ইউজঅ্যাবিলিটি টেস্ট
০৯. প্রডাক্ট সেলস এবং সাপোর্ট টিমের ইন্টারভিউ
১০. কাস্টমার সাপোর্ট কল মনিটরিং
১১. প্রতিদ্বন্দ্বীদের সম্পর্কে এনালাইসিস
১২. ব্যবহারকারীদের প্রডাক্ট ব্যবহারের গতিবিধি পর্যবেক্ষন
১৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলো পর্যবেক্ষন
১৪. এনালিটিক্স ডেটার বিশ্লেষণ
১৫. সার্চ লগ এনালাইসিস ইত্যাদি
পরিশেষে একটি ভাল ইউজার রিসার্চ আপনার প্রডাক্টের ডেভেলপমেন্ট ও প্রডাকশন ব্যয় কমানো, ব্যবহারকারীদের সমস্যা ও চাহিদাগুলো বের করা, সেলস বৃদ্ধি, ব্যবহারকারীদের সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি উন্মুক্ত করা সহ প্রডাক্ট ডিজাইনার ও ডেভেলপারদেরকে অনেক ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকে।
Written By,
Anupam
UX/Product Designer
http://anupam.pro
মন্তব্য করুন
ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য