কোনো একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পণ্যের প্রচার কিংবা প্রসারে গ্রাফিক ডিজাইনাররা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাই এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য লোগো, ব্রশিউর, বিজনেস কার্ড কিংবা ওয়েবসাইট ডিজাইনের সময় ডিজাইনারদের যথেষ্ট সতর্ক থাকতে হয়। ডিজাইনারকে প্রথমেই কোম্পানি বা ব্র্যান্ডের পণ্য ও প্রচারণার মূল বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝে নিতে হবে। তারপর সেই ধারণার উপর ভিত্তি করে ডিজাইনের কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কারণ এই বিষয়টি মেনে না চললে ডিজাইনারদের ডিজাইনে থাকা কিছু ত্রুটি সেই ব্র্যান্ড বা কোম্পানির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা শেষ করে দেয়ার সক্ষমতা রাখে।
বিশ্বের বিভিন্ন জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের লোগোর ডিজাইনের দিকে খেয়াল করলে দেখা যায়, এগুলো প্রথম দর্শনেই অডিয়েন্স দ্বারা সমাদৃত হয়েছে। কারণ এসব লোগো ডিজাইনের পেছনে ডিজাইনাররা সুপরিকল্পিত কৌশল, ডিজাইনের নীতি, ব্র্যান্ডকে জনপ্রিয় করার মূলনীতি প্রভৃতি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়েছেন। যেমনঃ জনপ্রিয় কুরিয়ার সার্ভিস FedEx এর লোগোতে একটা লুকায়িত তীর চিহ্ন আছে যা এই কোম্পানির দ্রুত ডেলিভারির বিষয়টি নিশ্চিত করে। অর্থাৎ কোনো একটি লোগো ডিজাইনের জন্য নেয়া পূর্বপরিকল্পনা সেই লোগোর মাধ্যমে কোম্পানিকে জনপ্রিয় করতে পারে, কিংবা সাধারণ কোনো ভুল ঠিক বিপরীত কিছু করারও সম্ভাবনা রাখে। ডিজাইনের পাশাপাশি লোগোর কালার, টাইপফেস, ইমেজ, সিম্বল প্রভৃতি বিষয়গুলো সতর্কতার সাথে নির্বাচন করতে হয়।
আবার অনেক স্টার্টআপ কোম্পানিগুলো তাদের প্রচারণার সাথে সম্পৃক্ত ডিজাইন ম্যাটেরিয়ালসগুলোর ডিজাইনে খুব একটা মাথা ঘামায় না। এতে তারা প্রতিযোগীদের সাথে সমানতালে এগিয়ে যেতে না পেরে অনেক মূল্যবান গ্রাহক হারায়।
তাই একজন দক্ষ ডিজাইনারের সুপরিকল্পিত ও ত্রুটিবিহীন কাজ ব্র্যান্ডের সাফল্য অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আজ গ্রাফিক ডিজাইনারদের যে ৯টি ভুল তাদের কাজকে পিছিয়ে দেয় – সেই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো।
ক্লায়েন্ট ও ডিজাইনারের ভেতর ভালো যোগাযোগ ও আলোচনার ব্যাপারটি অনেকক্ষেত্রেই জটিলতায় রুপ নেয়। আর ফলাফলস্বরূপ ডিজাইনারও তার ক্লায়েন্টের মনমতো ডিজাইন দিতে ব্যর্থ হন। তাই প্রত্যেক ডিজাইনারের উচিত যতক্ষণ পর্যন্ত তিনি ক্লায়েন্টের ইন্সট্রাকশন বুঝতে পারছেন ততক্ষণ পর্যন্ত তার সাথে আলোচনা করে, শর্ট নোটস ও ব্রেইনস্টর্মিং এর মাধ্যমে ডিজাইন বুঝে নেয়া।
অনেক ডিজাইনার আছেন যারা সাধারণত তাদের সব ডিজাইনের ভেতরই একটা কমন আবহ তৈরি করেন। আউট-অফ-দ্যা-বক্স চিন্তা না করে এরা শুধু এদের চেনাজানা ডিজাইন দিয়েই কাজ করতে অভ্যস্ত। এরকম অভ্যাস আসলে ডিজাইনারদের ক্যারিয়ারে একটা খারাপ প্রভাব ফেলে। গ্রাফিক ডিজাইন সেক্টরের পুরোটাই একটা সৃজনশীল কাজের জায়গা। এখানে থেকে কেউ যদি গৎবাঁধা নিয়মে ডিজাইন করেন তাতে তার কাজে খুব একটা রুপান্তর আসবে না। তাই প্রত্যেক ডিজাইনারের উচিত বিভিন্ন ডিজাইন নিয়ে অনুশীলনের মাধ্যমে এক্সপেরিমেন্ট করে দেখা। এতে তার কাজের জায়গায় ভিন্নমাত্রা আসবে এটা নিশ্চিত।
একের অধিক ফন্টের ব্যবহারে অডিয়েন্স বিরক্ত হবে এটাই স্বাভাবিক। আর এটা যদি বড় কোনো আর্টিকেল হয় তবে তো কথাই নেই। কোনো একটি একটি আর্টিকেলে একের অধিক ফন্ট পাঠকের দৃষ্টিগ্রাহ্যতায় ব্যাঘাত ঘটায়। সাধারণত কোনো ডিজাইনের জন্য তিনটি ফন্ট উপযুক্ত। দুইটি ফন্ট ডিজাইনের জন্য আরও ভালো। আর একটি ফন্ট কোনো ডিজাইনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। বিজনেস কার্ড ডিজাইনের সময় ফন্ট বাছাইয়ের ব্যাপারটিকে বেশ গুরুত্ব দিতে হয় কারণ সেখানে জায়গা এমনিতেই অনেক স্বল্প।
ডিজাইনকে মাত্রাতিরিক্ত জটিল করে ফেলা ডিজাইনারদের কোনো ভুল নয়, কিন্তু এর কারণে যে জটিলতাগুলো তৈরি হয় তা ব্র্যান্ডের ফোকাস পয়েন্ট থেকে অডিয়েন্সকে অনেক দূরে সরিয়ে দেয়। তাই এক্ষেত্রে ফটোশপ ফিল্টারগুলো ব্যবহারের দিকে অধিক যত্নশীল হতে হবে। ব্রশিউর ডিজাইনের বেলাতে ফন্ট, কালার, ইমেজ প্রভৃতি সহনশীল মাত্রায় ব্যবহার করতে হবে। মনে রাখতে হবে, জটিল না বরং সাধারণমানের ডিজাইনেই কোম্পনির মূল ফোকাস পয়েন্টগুলো বেশি ফুটে উঠে।
অনেক ডিজাইনার আছেন যারা ক্লায়েন্টদের ডেডলাইনের অনেক আগে কাজ শেষ করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। অথবা খুব স্বল্প সময় হাতে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন। আসলে ডিজাইনের ব্যাপারটি “ধর তক্তা, মার পেরেক” টাইপের নয়। আপনি যত সময় নিয়ে কাজটি করবেন কাজটি তত আকর্ষণীয় হবে। ডিজাইনার হিসেবে আপনি ক্লায়েন্টকে আগেই বলে দিতে পারেন যে আপনি পর্যাপ্ত সময় হাতে নিয়ে কাজ করেন। এতে করে ক্লায়েন্টের মনে কোনো ধোঁয়াশা থাকে না কিংবা ডিজাইনারকেও শিডিউলড কাজে ব্যাঘাত ঘটিয়ে চাপে থেকে কাজ করতে হয় না।
অনেকেই হয়তো কারনিং শব্দটির সাথে পরিচিত নন। কারনিং হচ্ছে টাইপোগ্রাফির এমন একটি প্রসেস যার মাধ্যমে ডিজাইনের টেক্সটগুলোর প্রত্যেকটা লেটারের মধ্যবর্তী স্পেসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে ব্যবহৃত হয়। অনেক ডিজাইনার কারনিং এর এই ব্যাপারটি মেনে চলেন না। আর একারণে কোনো ডিজাইনের দৃষ্টিগ্রাহ্যতা হারাতে পারে। তাই প্রত্যেক ডিজাইনারের উচিত কারনিং প্রসেসের মাধ্যমে প্রত্যেকটা লেটারের ভেতর সামঞ্জস্যতা বজায় রাখা।
অতিরিক্ত মাত্রায় স্টক ইমেজ ব্যবহার কোনো ডিজাইনকে সস্তা ও অপেশাদারি করে তুলে। কোনো ডিজাইনে এই স্টক ইমেজ থাকার কারণে অডিয়েন্সও বিরক্ত হতে পারে যেহেতু এসব ইমেজে কোনো নতুনত্ব নেই, কিংবা এটা তারা আগেও দেখে ফেলতে পারেন। তাই কোনো ডিজাইনে স্বকীয়তা ও নতুনত্ব বজায় রাখতে স্টক ইমেজ পরিহার করে পেইড ইমেজ ব্যবহার করা উচিত।
ডিজাইনে ভুল বানান ও ব্যাকরণ ব্যবহারের পর অনেক ডিজাইনরই এটা চেক করে দেখেন না। আবার কেউ এসব ভুল ধরতে গেলে তারা অজুহাত দেখান যে, “আমরা লেখক বা ব্যাকরণবিদ নই”! আসলে ডিজাইনের ভেতর ভুল বানান ও ব্যাকরণের কারণে এটা অডিয়েন্সের কাছেও বিরক্তির সৃষ্টি করে। তাই ভুল বানান ও ব্যাকরণ পরিহার করা উচিত।
ডিজাইনের বেলায় নিজের পছন্দকে প্রাধান্য দেয়া ডিজাইনারদের একটি অন্যতম ভুল। একজন ডিজাইনারকে সবসময়ই ডিজাইনের সময় সবার কথা চিন্তা করতে হবে। তাকে মনে রাখতে হবে তার করা ডিজাইন হাজার হাজার মানুষের কাছেও আকর্ষণীয় ও পছন্দের হতে হবে। ডিজাইন শেষে তাই তাকে একজন থার্ড পারসন হিসেবে ডিজাইনটিকে নিরীক্ষা করে দেখা উচিত। যেকোনো ত্রুটি তৎক্ষণাৎ সংশোধন করে ফেলা উচিত।
একজন গ্রাফিক ডিজাইনার খুব সহজেই উপরের ভুলগুলো সংশোধন করে একজন দক্ষ ও প্রফেশনাল লেভেলের ডিজাইনার হয়ে উঠতে পারেন।
তথ্যসূত্রঃ
https://www.designhill.com
মন্তব্য করুন
ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য