তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সারাবিশ্বে অনেক নতুন নতুন টেকনোলজির আবিস্কার বেড়েই চলছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে সবারই উচিত এসব নতুন নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হওয়া। হার্ডওয়্যার কিংবা সফটওয়্যার এই দুই সেক্টরেই সারা বিশ্বে ক্রমবর্ধমানশীল উন্নয়ন ঘটেছে। নতুন বের হওয়া কিছু টুলকিটের সাথে পরিচিত হতে পারলে কর্মক্ষেত্রে নিজের সৃজনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই এর সুফল পাওয়া যায়। নিচে কিছু টুলসের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো যা আপনাকে ২০১৮ সালে কর্মক্ষেত্রে বা ব্যক্তিগত সৃজনশীলতা বাড়াতে অনেকাংশেই এগিয়ে রাখবে।
আমরা আজ যে টুলসগুলো নিয়ে আলোচনা করবো সেগুলো হচ্ছেঃ
২০১৪ সালে প্রথম অ্যাফিনিটি ফটো বের হয়। মূলতঃ ইমেজ এডিটিং সফটওয়্যার হিসেবে এটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। এক হিসেবে এটি ফটোশপের অলটারনেটিভ হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। সব ধরণের ইমেজ এডিটিং ফিচার থাকায় এটি অনেক ডিজাইনারেরই পছন্দের তালিকায় আছে। এটি আইপ্যাড কিংবা ডেস্কটপ উভয় মাধ্যমেই চালানো যায়। এছাড়া টাচ অপারেশনের জন্য এর ইন্টারফেসটি চমৎকারভাবে সাজানো হয়েছে। গত বছরের জুন মাসে আইপ্যাডের জন্য এই সফটওয়্যারের সম্পূর্ণ ভার্সন রিলিজ পেয়েছে।
অ্যাডোবের একটি অন্যতম প্রোডাক্ট লাইটরুম সিসি। মূলতঃ ইমেজ ম্যানিপুলেশন ও অর্গানাইজেশনের জন্য এই সফটওয়্যারটি ব্যবহৃত হয়। ম্যাক ও উইন্ডোজ এই দুই অপারেটিং সিস্টেমের জন্যই এই সফটওয়্যারটি রিলিজ পেয়েছে। এর সমৃদ্ধ লাইব্রেরি ডিজিটাল ইমেজ অর্গানাইজ, এডিট, এক্সপোর্ট, ইম্পোর্ট প্রভৃতি অপারেশন করতে বেশ সহায়ক। ফটোগ্রাফারদের ছবি এডিট করার পছন্দের তালিকায় অ্যাডোব লাইটরুম সিসি বেশ ভালো স্থান অধিকার আছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে মাইক্রোসফটের একটি অন্যতম প্রোডাক্ট এই মাইক্রোসফট ভিডিও ইন্ডেক্সার। এই সফটওয়্যারটি মূলতঃ ভিডিও অ্যানালাইজ করতে সাহায্য করে। এছাড়া কোনো ভিডিওতে থাকা স্পিচ ডিটেক্ট করে সেটা টেক্সট এ রুপান্তর অর্থাৎ অডিও ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করা, ভিডিওর দৃশ্য পরিবর্তন ডিটেক্ট করা প্রভৃতি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স সম্পর্কিত কাজ করতে পারে। এছাড়া ভিডিওর কোনো ব্যক্তিত্বের ইমোশন ডিটেক্ট করার কাজও খুব দক্ষতার সাথে করা যায় এই সফটওয়্যারের সাহায্যে।
শিল্পীর নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় একটি চিত্রশিল্প পরিপূর্ণতা লাভ করে। ক্যানভাস, তুলি, রঙ, প্যাস্টেল, কালি কিংবা পেন্সিল এসব ছাড়া যেন একটি ছবির কথা চিন্তাই করা যায় না। কিন্তু এই সব কাজই ডিজিটাল ডিভাইসে করার সুযোগ করে দিয়েছে যে সফটওয়্যারটি সেটি হচ্ছে কোরেল পেইন্টার। শুধু ছবি আঁকাই নয়। অ্যাডোব ফটোশপের সব ধরণের ইমেজ এডিটিং ফিচারও আছে এতে। সঠিক রঙ বাছাইয়ের জন্য রয়েছে মিক্সার প্যালেট নামে একটি টুলস। এতে ফটোশপের মতো লেয়ার ব্যবহারেরও সুযোগ রয়েছে। তবে নরমাল ডেস্কটপে মাউস ব্যবহার করে এই সফটওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ নেই। ট্যাবলেট (প্রেসার সেনসিটিভ ট্যাবলেট) ডিভাইসে এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে এর সত্যিকার সুফল পাওয়া যাবে। বাজারে ২০০-২৫০ ডলারের মধ্যে ওয়াকমের উন্নতমানের ট্যাবলেট পাওয়া যায়।
ওয়েব ডেভেলপারদের কাছে কোডপেন খুব পছন্দের একটি অনলাইন কমিউনিটি। সাধারণত অনলাইনে এইচটিএমএল, সিএসএস ও জাভাস্ক্রিপ্ট কোড শোকেসিং ও টেস্টিং এর জন্য কোডপেন ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ডেভেলপারদের কাছে এটি অনলাইন কোড এডিটর ও ওপেন সোর্স অনলাইন রিসোর্স হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। ২০১২ সালে ফুলস্ট্যাক ডেভেলপার অ্যালেক্স ভ্যাজকুয়েজ, টিম সাব্যাট ও ফ্রন্ট-এন্ড ডেভেলপার ক্রিস কয়ের এটি তৈরি করেন।
প্রাথমিকভাবে অ্যাডোব ডাইমেনশনের বেটা ভার্সন “প্রজেক্ট ফেলিক্স” নামে রিলিজ পায়। এই টুলটি মূলতঃ টু-ডি ও থ্রি-ডি অবজেক্ট কম্পোজিটিং এর জন্য সকল ডিজাইনারদের কাছে বহুল ব্যবহৃত সফটওয়্যার। এছাড়াও টু-ডি ও থ্রি-ডি মডেল ও টু-ডি ও থ্রি-ডি কম্পস তৈরিতেও অ্যাডোব ডাইমেনশন ব্যাপক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অ্যাডোব স্ট্যান্ডার্ড ম্যাটেরিয়ালস দিয়ে ভিজুয়াল ডিকশনারি, থ্রি-ডি দৃশ্যে রিয়েলিস্টিক লাইটিং ও রিফ্লেকশন তৈরিতে, টু-ডি ইমেজে থ্রি-ডি সিন রেন্ডার ও এক্সপোর্ট করতেও এই সফটওয়্যারটি ব্যবহৃত হয়।
অনেকে এই টুলসটিকে “পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী স্ক্রিন ডিজাইন টুলস” হিসেবেও অভিহিত করে থাকেন। গত এক বছর যাবত এই সফটওয়্যারটি ওয়েব ও অ্যাপ প্রোটোটাইপিং টুলস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ইনভিশন স্টুডিওর ডেভেলপাররা সামনে আরেকটি নতুন ভার্সন আনতে যাচ্ছেন যেখানে ইউআই ডিজাইন ইম্পোর্ট করার জন্য একের অধিক অ্যাপ ব্যবহার করার দরকার পড়বে না।
এই টুলসটি ২০১৭ সালে প্রথম রিলিজ পায়। অপেক্ষাকৃত কম মূল্যের এই ম্যাক ইমেজ এডিটরটি দিনে দিনে ডিজাইনারদের কাছে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে। গত বছর নভেম্বরে এর একটি নতুন ভার্সন রিলিজ পেয়েছে। এতে রয়েছে সিঙ্গেল উইন্ডো ইন্টারফেস, জিপিইউ পাওয়ার্ড ইমেজ এডিটিং টুল ও কিছু মেশিন লার্নিং ফিচার। এটি মূলতঃ পেইড ভার্সন। তবে কেউ চাইলে এর ৩০ দিনের ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার করে দেখতে পারেন।
এটি অকুলাস রিফট ও এইচটিসি ভাইভ হেডসেট ব্যবহারকারীদের জন্য গুগলের একটি নতুন ফ্রি প্রোডাক্ট। এটি দিয়ে মূলতঃ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এনভায়রনমেন্টে লো-পলি আর্ট তৈরি করা যায়। এছাড়াও এই টুলস দিয়ে ইউনিটির মতো বিখ্যাত গেমস সফটওয়্যারে লো পলি আর্টওয়ার্ক এক্সপোর্ট করতে ব্যবহৃত হয়।
থ্রি-ডি ড্রয়িং টুলস হিসেবে গ্যাভিটি স্কেচ ভিআর ডিজাইনারদের কাছে বহুল পরিচিত এবং ব্যবহৃত সফটওয়্যার। এটিও আপাততঃ অকুলাস রিফট ও এইচটিসি ভাইভ হেডসেট ব্যবহারকারীদের জন্য রিলিজ করা হয়েছে। সম্প্রতি এর স্পিন-অফ ভার্চুয়াল রিয়েলিটি টুলসটি রিলিজ পেয়েছে। এছাড়াও এটি ফ্রি-হ্যান্ড ড্রয়িং ও কন্ট্রোল পয়েন্ট এডিটিং এর কাজেও ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কাজ শেষে রিফাইনিং এর জন্য ড্রয়িং এর মডেলগুলো ক্যাড সফটওয়্যারে ট্রান্সফার করারও সুযোগ আছে এতে।
আইটি সেক্টরে কাজের দক্ষতা বাড়াতে চিরায়িত সফটওয়্যারগুলোর পাশাপাশি উপর্যুক্ত টুলসগুলোর কাজ জানা থাকলে যে কেউই তার নিজ কর্মক্ষেত্রে সফলতা পেতে পারেন। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে এই টুলসগুলোর পাশাপাশি আরও অনেক টুলস আছে যেগুলো জব সেক্টরে প্রফেশনালদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে দেখা দিতে পারে!
তথ্যসূত্রঃ
https://www.creativebloq.com/features/top-20-new-creative-tools-of-2017-so-far
https://www.adobe.com/products/dimension/features.html
https://www.painterartist.com/en/product/painter/
https://vr.google.com/blocks/
http://www.pixelmator.com/pro/
osman
20 মার্চ, 2018 at09:25:58 পূর্বাহ্ন,
i am very glad to visiting this site.
Proshanta Shil
20 মার্চ, 2018 at09:35:41 পূর্বাহ্ন,
ধন্যবাদ আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য! প্রযুক্তিটিমের সাথেই থাকুন! <3
ATIK
8 জানুয়ারি, 2023 at07:19:34 অপরাহ্ন,
আপনার মূল্যবান মন্তব্যের জন্য! প্রযুক্তিটিমের সাথেই থাকুন! <3
মন্তব্য করুন