ইঞ্জিনিয়ারিং ফিল্ডের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা হল ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং। বিভিন্ন সিম্পল বা কমপ্লেক্স সার্কিট ডিজাইন দিয়ে হাতেখড়ি হয় ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের। ধীরে ধীরে সাব-স্টেশন ডিজাইন, হোম ওয়্যারিং ডিজাইন থেকে শুরু করে এমন কোন কাজ নেই যা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা করেন না। এমিটার, ভোল্টমিটার, ওসসিলোস্কোপ নিয়ে নাড়াচারা শুরু করা প্রথম বর্ষের ইঞ্জিনিয়াররা একসময় আইসি,ইনভার্টার, পিএলসি প্রভৃতি নিয়ে কাজ করেন। কর্মক্ষেত্রে গিয়ে তার পরিচিতি ঘটে বিভিন্ন অটোমেটেড মেশিনের জটিল জটিল কিছু সার্কিট ডায়াগ্রামের সাথে যা বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক্যাল কম্পোনেন্টের সমন্বয়ে তৈরি। এভাবে ধীরে ধীরে জীবনের আষ্টেপৃষ্টে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক্যাল ডায়াগ্রামকে জীবনপথে জড়িয়ে নেন একজন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেড বোর্ড, রেজিস্টেন্স, ক্যাপাসিটর ইত্যাদির সাহায্যে ম্যানুয়েল সার্কিট ডিজাইনের পাশাপাশি অনেকেই সফটওয়্যারে সার্কিট ডিজাইনও শুরু করে দেন। এক্ষেত্রেই সবার প্রথম পছন্দই হল অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যাল।
অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যাল অটোডেস্কের একটি প্রোডাক্ট। অটোক্যাড ২০১৯ সফটওয়্যারটির সাথে অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যাল ২০১৯ সফটওয়্যারটির ট্যাব, রিবন, স্ট্যটাস বার, কুইক এক্সেস টুলবার প্রভৃতির কিছু মিল থাকলেও বেশ কিছু বৈসাদৃশ্যও আছে। অটোক্যাড ২০১৯ এর সফটওয়্যারটির অন্যতম একটি ফিচার হল প্রজেক্ট ম্যানেজার। প্রজেক্ট ম্যানেজারের মাধ্যমে আপনি সব কাজগুলো গুছিয়ে করতে পারবেন ও আপনার কাজগুলো ট্র্যাক করতে ও পারবেন। এছাড়াও ইলেক্ট্রিক্যাল বিভিন্ন সার্কিট ডিজাইনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন কমান্ড যেমনঃ ইনসার্ট ওয়্যার, ইনসার্ট ল্যাডার, ইনসার্ট রাং ইন এ ল্যাডার, এড রাং নাম্বার এন্ড ওয়্যার নাম্বার, সোর্স এরো ও ডেস্টিনেশন এরো, প্যারেন্ট এন্ড চাইল্ড কম্পোন্যান্ট, ড্যাশ লিংক ওয়্যারিং, ইনসার্টিং কেবল মার্কার, ইনসার্ট সেভড সার্কিট, ইমপোর্ট নিউ সার্কিট ব্লক, কপি সার্কিট এন্ড মুভ সার্কিট, সার্কিট বিল্ডার,প্রজেক্ট টাস্ক লিস্ট, স্কুট কমাণ্ড, সার্ফার কমান্ড ইত্যাদি। এসব অত্যাধুনিক কমান্ডগুলো অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের ব্যবহারকে করেছে অনেক সহজ ও মসৃণ। অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের এই ফিচারগুলো সিম্পল বা কমপ্লেক্স সব সার্কিটকেই সফটওয়্যারে নিয়ে এসেছে খুব সহজসাধ্য ব্যপারে। আগে যেসব সার্কিট ম্যানুয়েলি ডিজাইন করা বেশ কষ্টসাধ্য ছিল তাই এখন খুব সহজেই একটি সিংগেল ক্লিকের সাহায্যে ইমপোর্ট করা যাচ্ছে অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের সাহায্যে।
এতসব অসাধারণ ফিচারের সমন্বয়ে গঠিত অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যাল এখন হয়ে উঠেছে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য এক ক্রেজ। চাকুরিরত সিনিয়র ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ভাই-বোনদের পরামর্শে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর শিক্ষার্থীরা এখন খুব সহজেই অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের পারদর্শিতা অর্জন শিক্ষাজীবনেই গ্রহন করছেন যাতে চাকুরির বাজারে তারা অন্যদের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকেন। এমনকি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অটোক্যাডের পাশাপাশি অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের কোর্স গ্রহন করছেন সনামধন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। তাদের ভাষ্যমতেও শিক্ষার্থীরা অটোক্যাডের পাশাপাশি অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালেও ব্যপক আগ্রহ দেখাচ্ছে যেহেতু ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অটোক্যাডের চেয়ে অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যাল সফটওয়্যার ব্যবহার করা আসলে অনেক সময় সাশ্রয়ী।
শিক্ষার্থী অবস্থাতেই অনেকে জড়িয়ে পড়েন ফ্রি ল্যান্সিং এ। নিজের হাতখরচ, ভার্সিটির টিউশন ফি চালানোর জন্য আউটসোর্সিং এখন শিক্ষার্থীদের জন্য হয়ে এসেছে আশীর্বাদস্বরূপ। আউটসোর্সিং এর বিভিন্ন ক্যাটাগরির কাজের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ারিং ক্যাটাগরিতে প্রতিযোগিতা তুলনামুলকভাবে কম থাকে। তাই এই ক্যাটাগরির ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইনিং এর বিভিন্ন কাজ জানা থাকলে আসলে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করা অনেক সহজ হয়ে যায়। তাই এ বিষয়টি সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে, অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের পারদর্শিতা আপনার ফ্রিল্যান্সিং জীবনকে করে তুলবে অনেক সমৃদ্ধ। আউটসোর্সিং এ এখন তুমুল প্রতিযোগিতার বাজার। ছোটখাট সাধারণ কাজগুলো করার জন্য প্রচুর লোক থাকায় ক্লায়েন্টরা এখন আর কম দক্ষ লোকদের প্রতি খুব একটা ভরসা করছেন না। দক্ষতার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ইঞ্জিনিয়ারিং সফটওয়্যারে পারদর্শী লোকেরা অন্যদের চেয়ে স্বভাবতই এগিয়ে থাকেন। তাই, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যাল ২০১৯ এ পারদর্শিতা আপনাকে অন্য সবার চেয়ে রাখবে আউটসোর্সিং জগতে অনেকটাই এগিয়ে।
ইলেক্ট্রিক্যালের অনেক শিক্ষার্থীই শিক্ষাজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহন করেন। এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে তারা বিভিন্ন ধরণের স্কিল অর্জন করে থাকেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় সফটওয়্যারের ব্যবহার এখন আসলে চোখে পড়ার মত। তাই, বিভিন্ন সফটওয়্যারে দক্ষতা অর্জনে্র ব্যপারে এসব প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী শিক্ষার্থীরা এখন বেশ সচেতন। আর ইলেক্ট্রিক্যালের শিক্ষার্থীদের ক্ষেতরে তো অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যাল সফটওয়্যারে পারদর্শিতা অর্জন করা ছাড়া প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়াই আসলে কঠিন। তাই, অনেক প্রতিযোগীই এখন অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যাল সফটওয়্যারের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। অনেকে এসব প্রতিযোগিতায় তেমন আগ্রহ না দেখালেও আসলে এইসব কম্পিটিশনে অংশগ্রহন করাটা কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অনেক উপকারী। এই ধরণের প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পরিচিত হন বিভিন্ন কোম্পানীর ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথে। এর মাধ্যমে গড়ে ওঠে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক যা পরবর্তীতে কর্মজীবনের বিভিন্ন সময়ে অনেক সুবিধাজনক অবস্থায় নিয়ে আসে এই প্রতিযোগীদেরকে।একজন সফল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার জন্য নেটওয়ার্কিং এর প্রয়োজনীয়তা বিশ্বব্যপীই সমাদৃত।
চাকুরিজীবনে প্রবেশের সাথে সাথেই ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন ধরণের অটোম্যাটিক অথবা সেমি অটোম্যাটিক মেশিনের ইলেক্ট্রিক্যাল ডায়াগ্রামের সাথে পরিচিত হতে থাকেন। এসব ক্ষেত্রে যারা আগে থেকেই অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের বিভিন্ন সিম্পল বা কমপ্লেক্স সার্কিট ডিজাইনের সাথে পরিচিত থাকেন তারা আসলেই অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে থাকেন। কারণ, অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের বিভিন্ন ফিচারের সাথে ইলেক্ট্রিক্যাল কমপ্লেক্স সার্কিট ডিজাইন আসলে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত।এর ফলে, ম্যানেজমেন্টের কাছে খুব শিঘ্রই তারা হয়ে ওঠেন কোম্পানীর অপরিহার্য অংগরূপে। ফ্যক্টরির বিভিন্ন মেশিনের কমপ্লেক্স সার্কিট ডায়াগ্রাম সলভ করে মেশিনের বিভিন্ন প্রবলেম সলভ করার ক্ষেত্রে তারাই হয়ে ওঠেন নির্ভরতার প্রতীক।এরকম একটি ইমেজ তৈরি করতে পারা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আসলেই ভাগ্যের ব্যপার।
চাকুরি করতে করতে অনেকেরই ইচ্ছা জাগে যে, নিজের এই ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞান ব্যবহার করে একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করিয়ে ফেলি। এমন উদ্যোক্তাদের জন্যও কিন্তু এই সফটওয়্যারে পারদর্শিতা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যপার হয়ে দাঁড়ায়। কারণ ক্লায়েন্টদের সাথে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্ট্রিক্যাল ডিজাইনের ডিল করার সময় তাদেরকে বিভিন্ন ধরণের নকশা দেখাতে হয়। এসব নকশা বিভিন্ন সময় যথোপযুক্ত পরিমান পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে হয় ক্লাইন্টের ডিমান্ড অনুযায়ী। তখন স্বল্প সময়ে ডিজাইনের এই পরিবর্তনের জন্য সফটওয়্যার হয়ে আসে মুশকিল আহসান বাবার ভূমিকায় ।
সরকার দেশে এখন প্রচুর ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার বিভিন্ন পাওয়ার প্লান্টে নিয়োগ দিচ্ছে। এসব নিয়োগের ক্ষেত্রে ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের দেশের বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং দেয়া হয়। এরপর তাদেরকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ের উপর ট্রেইনিং দেয়া হয়। যেহেতু, দেশে এখন সব সেক্টরের মত পাওয়ার সেক্টরও ডিজিটালাইজেশন হচ্ছে, তাই ট্রেইনিং এর বড় অংশ জুড়ে এসব সফটওয়্যারের ট্রেইনিং ও এখন ব্যপক গুরুত্ব পাচ্ছে। তাই, এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, সরকারী চাকুরিজীবিদের ক্ষেত্রেও অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের পারদর্শিতা যে সুফল বয়ে আনবে তা বলাই বাহুল্য।
পরিশেষে, এটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারদের জন্য অটোক্যাড ইলেক্ট্রিক্যালের এই প্যাকেজটি আসলে এক বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। তাই একে তাড়াতাড়ি আলিংগন করে নেয়াই যেকোন ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারের দায়িত্ব বলে আমি মনে করি।
Mahedi Hassan
21 মার্চ, 2019 at10:49:17 অপরাহ্ন,
ব্লগটি পড়ে খুবই ভালো লেগেছে।
Ali Kaiser
22 মার্চ, 2019 at02:16:42 অপরাহ্ন,
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।