প্রযুক্তির উৎকর্ষের সাথে সাথে মানুষের হাতে হাতে এখন ক্যামেরা পৌঁছে গেছে। আজকাল বিভিন্ন জন্মদিন কিংবা বিয়ের অনুষ্ঠানে একজন ফটোগ্রাফার ছাড়া যেন চলেই না। সফটওয়্যার ও হার্ডওয়্যারের উন্নতির সাপেক্ষে এখন বিভিন্ন উন্নতমানের ক্যামেরা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ও চমৎকার ছবি তোলা সম্ভব। আর এখনকার প্রজন্মের অনেকেই ডিএসএলআর দিয়ে শখের বশে কিংবা পড়াশোনার পাশাপাশি ছবি তুলে অর্থ উপার্জন করছে। আবার অনেকে ফ্রিল্যান্সার ফটোগ্রাফার হিসেবে কাজ করে প্রফেশনাল লেভেলে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।
ছবি তোলার ক্ষেত্রে সবাই কিছু খুঁটিনাটি সমস্যায় পড়েন। আজ আমি ফটোগ্রাফির কিছু অদ্ভুত ও চমৎকার কৌশল নিয়ে কথা বলবো।
ধরা যাক, কোনো গ্রুপ ফটো তুলতে চাচ্ছেন। কিন্তু ক্যামেরা সেট করার জন্য কোনো ট্রাইপড নেই! এক্ষেত্রে আপনি ট্রাইপডের বদলে ল্যাম্প শেড ব্যবহার করে ট্রাইপডের কাজটি সেরে ফেলতে পারেন! ল্যাপ শেড থেকে ল্যাম্প খুলে ক্যামেরাটি ল্যাম্প শেডের হোল্ডারে সেট করে ফেলুন। আপনি জেনে অবাক হবেন যে, ল্যাম্প শেডের বোল্টের থ্রেড সাইজ এবং ট্রাইপডের ফিল্টার থ্রেড ঠিক একই সাইজের। তাই এতে আপনি খুব সহজেই আপনার ক্যামেরাটিকে সেট করে ফেলতে পারবেন। এই সমাধান হয়তো প্রতিদিন কাজে লাগবে না, কিন্তু সমস্যায় পড়লে এই বুদ্ধিই আপনাকে বেশ সাহায্য করবে।
ছবি তোলার সময় সবাই আপনাকে শুধু একজন ফটোগ্রাফার না বরং একজন বাংলাদেশি ভার্সনের ম্যাকগাইভার হিসেবে দেখবে!
বাচ্চাদের ছবি তোলা বরাবরই একটি ঝামেলাপূর্ণ কাজ। তারা এদিক সেদিক তাকাবে কিন্তু ক্যামেরার দিকে তাকানোতেই যেন তাদের যত আপত্তি! এক্ষেত্রে আপনি আপনার ক্যামেরার hot-shoe তে একটি PEZ dispenser সেট করতে পারেন। অনেকেই হয়তো PEZ dispenser এর কথা প্রথম শুনে থাকবেন। এই নামে অস্ট্রিয়ান ক্যান্ডি আছে, যার আদলে ক্যামেরার hot-shoe তে সেট করার জন্য প্লাস্টিক দিয়ে এই খেলনাবিশেষ বানানো হয়। এর বেইজ সাইজ এবং hot-shoe এর সাইজ সাধারণত এক হয় না। এক্ষেত্রে আপনি ঐ PEZ dispenser এর বেইজ কেটে সাইজ করে ক্যামেরার hot-shoe তে সেট করতে পারেন। বাচ্চাদের ছবি তোলা এখন আর কোনো ঝামেলার বিষয় না। এই PEZ dispenser এর আকর্ষণে তারা অবশ্যই ক্যামেরার দিকে তাকাবেই! আর সে সময় আপনি তুলে ফেলতে পারবেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ছবি!
মাঝেমধ্যেই আপনাকে প্রখর সূর্যালোকে পোর্ট্রেটের শুট করতে হয়। এসময় আলোও বেশ চমৎকার পাওয়া যায়। এই ধরণের আলোর কম্বিনেশন বিভিন্ন বিয়েশাদীর অনুষ্ঠানে কিংবা বিভিন্ন আউটডোর লোকেশনও পাওয়া যায়। কিন্তু সব স্থানে এই একই ধরণের আলোর কম্বিনেশনে কাজ করতে গিয়ে অনেকেই বিরক্তবোধ করেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সহজ বুদ্ধি হলো ফ্ল্যাশকে ম্যাক্সিমাম লেভেলে ব্যবহার করা। এটা সাবজেক্টকে আরও বেশি আলোকিত করবে। ক্যামেরার সেটিংস থেকে সাবজেক্টের জন্য expose অপশন সিলেক্ট করলে ব্যাকগ্রাউন্ড বেশি ডার্ক দেখা যাবে যেহেতু ফ্ল্যাশ কাজ করছে না। তাই এটি দুপুরের দৃশ্যতেও মধ্যরাতের ফ্লেভার দিবে!
এই কৌশলটি বেশ চমকপ্রদ! আপনি যদি ক্যামেরার লেন্স খুলে সেটাকে ক্যামেরার সামনে রাখেন তবে আপনি ম্যাক্রো লেন্সের সুবিধা পাবেন! এক্ষেত্রে কিছু ধাপ অনুসরণ করতে হবে।
ধাপ ১ঃ লেন্স ছাড়া ছবি তোলা যাবে না যদি না আপনি ক্যামেরাকে ম্যানুয়াল মুডে রাখেন
ধাপ ২ঃ সবচেয়ে ভালো ফোকাল পয়েন্ট 50mm। তাই 50mm prime অথবা 18-55mm kit লেন্স এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি কাজে দিবে
ধাপ ৩ঃ লেন্স ছাড়া আউটফোকাস রাখা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। তাই অবশ্যই সাবজেক্টকে ফোকাস করতে হবে কাছের থেকে দূরে সরিয়ে
ধাপ ৪ঃ লেন্সের পেছনে থাকা ছোট প্লাস্টিকের স্লাইডারটি সতর্কতার সাথে ঘুরাতে হবে
এটা বিভিন্ন ট্র্যাভেল ফটোগ্রাফারদের জন্য একটি চমৎকার কৌশল। ধরা যাক, আপনি কোনো অপূর্ব স্পটের একটা ভিউ নিতে চাচ্ছেন কিন্তু সেখানে প্রচুর মানুষ চলে আসছে। এক্ষেত্রে আপনি নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করে সহজেই তুলে ফেলতে পারেন আপনার কাঙ্ক্ষিত ছবিটি।
ধাপ ১ঃ ক্যামেরাটি ট্রাইপডে সেট করুন
ধাপ ২ঃ যতক্ষণ না পর্যন্ত ১৫ টি শট হচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রতি ১০ সেকেন্ড অন্তর একটি করে ছবি তুলুন। এটা নির্ভর করে সেখানে থাকা মানুষজন কত দ্রুত চলাচল করছে
ধাপ ৩ঃ সবগুলো ছবি ফটোশপে ওপেন করে File > Scripts > Statistics অপশনে গিয়ে “median” অপশন থেকে আপনার তোলা ছবিগুলো সিলেক্ট করুন
ধাপ ৪ঃ ব্যাস আপনার কাজ শেষ। ফটোশপ সহজেই আপনার তোলা ছবিগুলোর মধ্যে পার্থক্য খুঁজে বের করে সেগুলো রিমুভ করে দিবে
বি.দ্রঃ এখানে উল্লেখিত “statistics” অপশনটি শুধু Photoshop Extended বা ফটোশপের Creative Cloud ভার্সনে পাওয়া যাবে। এছাড়াও এখনকার ভার্সনের ফটোশপ ইলিমেন্টের Enhance > Photomerge > Scene Cleaner অপশন থেকে এই একই সুবিধা পাওয়া যাবে।
সাধারণত ওয়েডিং ফটোগ্রাফিতে বরকনের ছবির পেছনে যে আলোকচ্ছটার ইফেক্ট দেখা যায় তাকে Bokeh বলে। ছবিকে চমৎকার ও আকর্ষণীয় করতে এই ইফেক্টের জুড়ি নেই। কিন্তু আপনি চাইলেই এই Bokeh এর শেইপ পরিবর্তন করতে পারেন। এজন্ন একটি কালো কাগজকে আপনার লেন্সের ফ্রন্ট ইলিমেন্টের সাইজ অনুযায়ী কাটুন। এরপর একটি ব্লেড দিয়ে পেপারের মাঝে একটি শেইপ কাটুন। তবে এই শেইপটি অবশ্যই থাম্বনেইলের চেয়ে সামান্য বড় হতে হবে। সাধারণত 50mm f/1.8 এর ক্যামেরায় এই ইফেক্ট ভালো কাজ করবে।
এটি ল্যান্ডস্কেপ ফটোগ্রাফির জন্য একটি জনপ্রিয় কৌশল। ল্যান্ডস্কেপ শুটিং এর ক্ষেত্রে ছবির অন্যান্য সকল অংশের তুলনায় আকাশের অংশটি বেশ উজ্জ্বল থাকে। তাই ছবির সকল অংশের মধ্যে সামঞ্জস্যতা রক্ষা করার জন্য ছবির উপরের অংশটুকু কিছুটা ডার্ক করার দরকার পড়ে। এক্ষেত্রে Graduated Neutral Density(GND) ফিল্টারটি এই কাজ করে দেয়। এই GND filter হচ্ছে এক টুকরা গ্লাস যার উপরের অংশ ডার্ক যা ধীরে ধীরে নিচের স্বচ্ছ হয়েছে। এই ফিল্টার ব্যবহার করাও বেশ সহজ। শুধু ছবি তোলার আগে এই ফিল্টারটি লেন্সের সামনে ধরে আকাশের অংশটুকু কাভার করতে হবে।
এভাবে চমকপ্রদ ও অসাধারণ কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনার তোলা ছবিটিকে করে তুলুন আরও আকর্ষণীয়! আপনাদের এরকম আরও কোনো অদ্ভুত কৌশল জানা থাকলে কমেন্ট করে জানাতে পারেন!
তথ্যসূত্রঃ
https://improvephotography.com
Roy
26 জুলাই, 2019 at06:20:41 অপরাহ্ন,
আপনার টিউটোরিয়াল টা দেখে অনেক সুন্দর লাগলো এবং এখান থেকে আমি কিছু ধারনা পেলাম ধন্যবাদ ভাই এগুলো পোস্ট করার জন্য আশা করি ভবিষ্যতে এরকম আরো অনেক সুন্দর সুন্দর পোস্ট পাব
হাসান যোবায়ের
26 জুলাই, 2019 at08:36:17 অপরাহ্ন,
আমাদের সাথেই থাকুন সব সময়।