ওয়েব সার্ভারে রাখা ছবি, ভিডিও, অডিও কিংবা অন্যান্য ডিজিটাল সামগ্রীর সমন্বয়ে একটি ওয়েবসাইট গড়ে উঠে। প্রোগ্রামিং এ দক্ষ এবং ওয়েব ডেভেলপিং এ আগ্রহীরাই ওয়েবসাইটের সাথে সম্পর্কিত কাজগুলো করে থাকেন। প্রতিদিন সারাবিশ্বে হাজার হাজার ওয়েবসাইট লঞ্চ হচ্ছে। আর প্রতিটা স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের একটা ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেইজ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি থাকার কারণে এসব ওয়েবসাইটের অনেক সমস্যা থেকে যায়। যা পরবর্তীতে এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের সমস্যায় ফেলে দেয়।
তাছাড়া কোনো সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রতিষ্ঠানের বা ব্যবসার জন্য তৈরি করা ই-কমার্স সাইট যদি এসব ত্রুটিজনিত কারণে গ্রাহকদের সমস্যায় ফেলে দেয় তবে তা ওই প্রতিষ্ঠানের উপর একটা খারাপ প্রভাব ফেলে। আর ওয়েবসাইটের বিভিন্ন বাগ বা ত্রুটি দূর করার দায়িত্ব পরবর্তীতে এসব ওয়েব ডেভেলপারদের ঘাড়েই পড়ে! তাই কোনো ওয়েবসাইট লঞ্চ করার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নজর রাখা উচিত। আপনি যদি একজন ওয়েব ডেভেলপার হন তবে এসব বিষয় মেনে চলার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো থেকে রক্ষা পাবেন।
নতুন ওয়েবসাইট শুরু করার আগে এই বিষয়গুলো আপনাকে অবশ্যই জানতেই হবেঃ
১। ওয়েবসাইট কপি
২। যোগাযোগ
৩। মেটা ডেসক্রিপশন
৪। নিরাপত্তা
৫। লিগ্যাল পেইজ
৬। জাভাস্ক্রিপ্ট ইনডিপেনডেন্স
৭। ক্রস প্ল্যাটফর্ম
৮। ব্যাকআপ
৯। SEO
১০। ভ্যালিডেশন
১১। অ্যানালাইটিক্স
ওয়েবসাইট লঞ্চ করার পূর্বে প্রুফরিডের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত। সিনট্যাক্স বা ডেটাবেজের কোনো সামান্য ভুল পরবর্তীতে ইউজারদের মহা ভোগান্তিতে ফেলতে পারে। ওয়েবসাইটে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের জন্য বিশেষ কোনো পণ্যের উপর অফার দিয়ে থাকলে সেগুলো ভালোভাবে উপস্থাপন করা উচিত। অনেকে “Coming Soon” বা এই জাতীয় অনেক তথ্য পাবলিশিং পেইজে দিয়ে থাকে। কিন্তু লঞ্চ করার পূর্বে পাবলিশিং পেইজগুলোতে মূল কন্টেন্ট ছাড়া অন্য কিছু দেয়া উচিত না। About Us, FAQ এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পেইজগুলো অসম্পূর্ণ থেকে গেলে সেগুলোও আগে পাবলিশ করা উচিত হয়।
আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠানটি যদি কোনো পণ্য বা সার্ভিস সরবরাহ করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে সাইটে ফোন নাম্বার, ইমেইল অ্যাড্রেস, মেইলিং অ্যাড্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালোভাবে হাইলাইট করা উচিত। কারণ এই বিষয়গুলোর অভাবে উক্ত প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে।
মেটা ডেসক্রিপশন SEO এর জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কোনো ভূমিকা রাখে না। কিন্তু এই মেটা ডেসক্রিপশন হচ্ছে সেসব কিওয়ার্ড যা মানুষ ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে। কিন্তু সার্চ রেজাল্টে তারা যদি তাদের পছন্দসই জিনিস খুঁজে না পায় তাহলে সে আর সেই লিঙ্কে ক্লিক করবে না। তাই মেটা ডেসক্রিপশনে আকর্ষণীয় টাইটেল ও বিস্তারিতভাবে সব কিছু বর্ণনা করে দিলে সেটা খুব সহজেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করবে।
সারাবিশ্বে প্রতিদিন হাজার হাজার ওয়েবসাইট হ্যাক হচ্ছে। হ্যাকাররা সাধারণত ওঁত পেতেই থাকে এসব ওয়েবসাইট হ্যাক করার জন্য। এর মাধ্যমে তারা ওয়েবসাইটের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিনষ্ট করে দেয় কিংবা নিজেদের কাছে রেখে অর্থ আদায় করে নেয়। আর একারণে ব্যক্তিগত কিংবা অর্থ সংক্রান্ত তথ্য হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তাই ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা রক্ষার্থে একজন সিকিউরিটি এক্সপার্টকে দিয়ে ওয়েবসাইটের পটেনশিয়াল সিকিউরিটি ফ্ল, সোর্স কোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। ক্র্যাক, SQL ইনজেকশন, XSS ভালনারেবল নিরীক্ষা করে দেখা উচিত।
তবে আপনারা কেউ যদি WordPress দিয়ে সাইট ডেভেলপ করেন তবে সেক্ষেত্রে WordFence Security ব্যবহার করতে পারেন। এটি আপনার ওয়েবসাইটের যেকোনো সূক্ষ্ম পরিবর্তন সম্পর্কে আপনাকে জানিয়ে দেবে। এছাড়া এটি অবৈধ লগইন, কোন জিনিসগুলো আপডেট করতে হবে এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য জানিয়ে দেবে।
টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস, টার্মস অফ ইউজ, রিফান্ড পলিসি, প্রাইভেসি পলিসি প্রভৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সাইটে ভালোভাবে উল্লেখ করা উচিত। কারণ এগুলো আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠানের লিগ্যালিটিস সংক্রান্ত তথ্য নির্দেশ করে। এছাড়া ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের সুবিধার্তে কপিরাইট, কুকিজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো হাইলাইট করা উচিত।
তবে ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারীরা Auto Terms of Service and Privacy Policy নামের প্লাগইনটি ব্যবহার করতে পারেন।
জাভাস্ক্রিপ্ট প্রত্যেকটা ওয়েবসাইটের জন্য প্রচুর পরিমাণের ক্লায়েন্ট সাইড ফাংশনালিটির সুবিধা দেয়। তাই জাভাস্ক্রিপ্ট ইনডিপেনডেন্স থাকলে যেকোনো ব্রাউজারে আপনার সাইটটিকে আরও প্রাণবন্ত দেখাবে। তাই কোনো ব্রাউজারের জাভাস্ক্রিপ্ট টার্নঅফ করা থাকলে সেটা অন করে নিন।
অন্যান্য ডিভাইস ও বিভিন্ন সাইজের স্ক্রিনে ওয়েবসাইটটি ব্রাউজ করে দেখা উচিত। অন্যান্য ডিভাইসে সাইটের আউটলুক কেমন দেখাচ্ছে তার উপর অন্যান্য ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে। তবে কাজের সুবিধার জন্য আপনি BrowserShot ব্যবহার করে নিজেই এই বিষয়টি নিরীক্ষা করে দেখতে পারেন!
ওয়েবহোস্ট আপনার সাইটের ব্যাকআপ রাখে। কিন্তু সব ওয়েবহোস্ট ব্যাকআপ রাখার ক্ষেত্রে সমান সেবা প্রদান করে না। এককালীন না রেখে প্যাকেজ হিসেবে ব্যাকআপ রাখা যেতে পারে। আপনার হোস্ট থেকে আলাদা কোনো লোকেশনেও ব্যাকআপের ব্যবস্থা করতে পারে।
তবে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস ব্যবহারকারী হলে DropBox ব্যবহার করতে পারেন।
ভালো কন্টেন্ট সবসময়ই SEO এর দিক থেকে উপরের দিকে অবস্থান করে। তাই সাইটে ব্যবহার করা হেডলাইন, বডি, কিওয়ার্ডগুলো খুব যত্নের সাথে বাছাই করা উচিত। এছাড়া মেটা ডেসক্রিপশনও গুরুত্বের সাথে অ্যাড করা উচিত।
আপনার সাইটের HTML ও CSS ভ্যালিডেশনে সম্পূর্ণতা না থাকলে SEO এর দিকে যতই উপরে থাকুক না কেন কাজ হবে না। আর এভাবে ক্রমবনতি হলে পরবর্তীতে SEO খারাপ থাকায় সেটা টপ লিস্টেড সার্চ রেজাল্ট হিসেবে নাও আসতে পারে। তাই ভ্যালিডেশনের দিকে বিশেষ গুরুত্ব রাখা উচিত।
অ্যানালাইটিক্স অ্যাড করার মাধ্যমে আপনার সাইটে দর্শকের পরিমাণ কেমন সেই ব্যাপারটি জানতে পারবেন। দিনেদিনে আপনার ওয়েবসাইট কতটা জনপ্রিয় হচ্ছে সে ব্যাপারটি জানিয়ে দিবে অ্যানালাইটিক্স। তাই ওয়েবসাইট লঞ্চ করার আগে এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
কোনো নতুন ওয়েবসাইট শুরুর আগে উপরের বিসয়গুলো খেয়াল রাখলে একদিক থেকে গ্রাহকরাও যেমন কোনো ভোগান্তির সম্মুখীন হবেন না তেমন ডেভেলপারও থাকবেন নিশ্চিত!
তথ্যসূত্রঃ
https://onextrapixel.com
মন্তব্য করুন
ফেইসবুক দিয়ে মন্তব্য