ডিজাইনার হিসেবে প্রফেশনাল জীবনে সবার প্রথমে যে প্রশ্নটি শুনতে হয় তা হচ্ছেঃ “আপনার পোর্টফোলিও কই?” অর্থাৎ আপনি ডিজাইনার তা শুধুমাত্র কথা দিয়ে কিংবা ডিগ্রি দিয়ে প্রকাশ করলে হবে না। অবশ্যই আপনার সেরা কাজগুলোর সমন্বয়ে তৈরি পোর্টফোলিও থাকতে হবে। যা দেখে অনায়াসেই আপনাকে ক্লায়েন্ট হায়ার করবে অথবা চাকরীতে নিবে।
ডিজিটাল এই যুগের পূর্বে আর্টিস্টদের প্রিন্টেড পোর্টফোলিও নিয়ে ঘুরতে হতো। কিন্তু বর্তমানে ওয়েবসাইট, ভিডিও ডেমোরিল কিংবা অ্যাপ দিয়ে পোর্টফোলিও তৈরি করা হয়। বেশি গভিরে যাওয়ার আগে…
প্রথম কথা হচ্ছে পোর্টফোলিও কি? পোর্টফোলিও হচ্ছে আপনার বিশ্বাস, স্কিলস, গুণ, শিক্ষা , ট্রেইনিং এবং অভিজ্ঞতার সমষ্টি। আপনার বৈশিষ্ট্য এবং কাজের কোয়ালিটি পোর্টফোলিও দিয়েই মাপা সম্ভব। এত এত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় পোর্টফোলিও তৈরিতে অবশ্যই বেশ কিছু দিক লক্ষ্য রেখে করতে হয়। তো চলুন দেখে নেয়া যাক কি কি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে।
অনেক ভেবে চিন্তে ডিজাইন সিলেক্ট করুন
আপনি সারা জীবনে যত ডিজাইন করেছেন সব কাজ এক সাথে করে পোর্টফোলিও তৈরি করা দরকার নেই। আপনার সব কাজ থেকে সেরা কাজগুলো এক সাথে করুন এবং বার বার দেখে সিদ্ধান্ত নিন কোন কাজগুলো পোর্টফোলিওতে রাখবেন।
ওয়েবে যারা থাকে সাধারণত খুব বেশি সময় নিয়ে দেখে না। তাই আপনার সেরা কাজগুলো শুরুর দিকে রাখুন এবং যে কাজগুলো ভবিষ্যতে আর করতে চান না তা অবশ্যই পোর্টফোলিও থেকে সরিয়ে ফেলুন। আপনাকে কিংবা আপনার কোম্পানীকে যেভাবে সবার সামনে ব্র্যান্ডিং করতে চান সেভাবেই নিজের পোর্টফোলিও তৈরি করুন।
আপনার সেরা কাজগুলো সিলেক্ট করুন
একই ধরণের কাজ বার বার না দিয়ে ভিন্ন ধর্মী সেরা কাজগুলো দিয়ে সাজাতে পারেন আপনার পোর্টফোলিও। ধরুন আপনি লোগো ডিজাইন করেছেন ১০টি, বিজনেস কার্ড ডিজাইন করেছেন ১৫টি, পোস্টার ডিজাইন করেছেন ৭টি এভাবে অনেক ধরণের বিভিন্ন ফরম্যাটে একাধিক কাজ করেছেন। এখন সবগুলো কাজ পোর্টফোলিও তে রাখবেন? না। আপনি প্রত্যেক ক্যাটাগরি থেকে সেরা কাজগুলো বাছাই করে পোর্টফোলিও তৈরি করুন। তাহলে আপনার ভিন্নতা দেখে ক্লায়েন্ট অনায়াসেই আকর্ষিত হবে।
তবে এই টিপসগুলো তাদের জন্যই বিশেষ কাজে আসবে যাদের কাজ করার অভিজ্ঞতা বহুদিনের।
Stefan Lucut / portfolio
আপনার কাজগুলো ইউনিক পদ্ধতিতে প্রকাশ করুন
সবাই যে কাজগুলো করছে আপনাকেও সেই কাজই করতে হবে কিংবা সেভাবেই পোর্টফোলিও ডিজাইন করতে হবে এমন নয়। মানুষ যেন আপনার পোর্টফোলিও সাইট দেখে বলতে পারে “ওয়াও চমৎকার কালেকশন” কিংবা আপনার পোর্টফোলিও যেন সবার মাথায় একটু হলেও নাড়া দিতে পারে। উপরের Duoh! পোর্টফোলিও সাইট দেখুন কত ইউনিক পদ্ধতিতে কাজগুলো দেখানো হয়েছে।
আপনার ডিজাইন ব্র্যান্ড তৈরি করুন
আপনার কাজে যদি আপনার ব্র্যান্ডিংটা নিয়ে আসতে পারেন তাহলে সেটা অবশ্যই চমৎকার হবে। অর্থাৎ ভিন্ন ভিন্ন কাজ কিন্তু দেখলে যদি টের পাওয়া যায় যে একজন আর্টিস্টের কাজ তাহলে ধরে নিতে পারেন আপনার ব্র্যান্ডিং আপনি ধরে রাখতে পারছেন। যেমন নিচের এই পোর্টফোলিওতে ধারাবাহিক সলিড ব্যাকগ্রাউন্ড ব্যবহার করা হয়েছে যা দেখে অনায়াসেই বুঝা যাচ্ছে একই আর্টিস্টদের কাজ।
কতগুলো ডিজাইন দিয়ে কালেকশন তৈরি করবেন ভাবুন
কোয়ালিটি নাকি কোয়ানটিটি তে জোর দিবেন সেটা অনেক কিছুর উপরেই নির্ভর করে। সব সময় যেমন কোয়ালিটি দিয়ে হয় না তেমনি অনেক কাজ দিয়েও হয় না। তাই মাঝা মাঝি পদ্ধতিই অনুসরণ করা ভাল। আপনার সেরা কাজগুলো থেকে ১৫ থেকে ২৫টি ডিজাইন সিলেক্ট করে আপনার পোর্টফোলিও সাজাতে পারেন।
ক্লায়েন্ট কিংবা ভিজিটর কখনোই সব ডিজাইন ওপেন করে দেখবে না। তাই খুব বেশি ডিজাইন কালেকশন দরকার নেই। আবার খুব কম সংখ্যক ডিজাইন দেখলে ক্লায়েন্ট চিন্তা করবে অভিজ্ঞতা কম। তাই বুঝে শুনে গুছিয়ে পোর্টফোলিও তৈরি করুন।
অনলাইন এবং প্রিন্টেড দুই পোর্টফোলিও কি দরকার?
বর্তমানে বেশিরভাগ ডিজাইনারই অনলাইন পোর্টফোলিও তৈরি করে থাকে। তবে আপনার অনলাইন এবং পাশাপাশি প্রিন্টেড পোর্টফোলিও ডিজাইনও করে রাখা উচিত। অনেক সময় ক্লায়েন্টের সাথে সরাসরি বসে কাজ নিতে হয় তখন এই প্রিন্টেড পোর্টফোলিও সাথে থাকলে দেখাতে সুবিধা হয়। এছাড়া আপনার কাজ যদি প্রিন্ট রিলেটেড হয় তাহলে অবশ্যই প্রিন্টেড পোর্টফোলিও সুন্দর প্রেজেন্টেশন সহ তৈরি করে রাখুন।
হাই রেজুলেশন ইমেজ/ভিডিও সিলেক্ট করুন
আপনার পোর্টফোলিও যদি ১০০% অনলাইন ভার্শনও হয় তারপরও ইমেজগুলো হাইরেজুলেশন সহ পোর্টফোলিও তৈরি করুন। কারণ অনেক সময় প্রয়োজনে ইন্সট্যান্ট ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে প্রিন্ট করা প্রয়োজন হতে পারে। তখন রেজুলেশন যদি বেশি হয় ভাল প্রিন্ট হবে। আর আপনার পোর্টফোলিও/ডেমোরিল যদি ভিডিও হয় তাহলে তাহলেও অবশ্যই HD কোয়ালিটি ভিডিও আপলোড করুন।
নাহলে আপনার সেরা কাজটাও লো রেজুলেশনের জন্য খারাপ দেখাবে। এমনকি আপনার কাজ সোস্যাল মিডিয়াতেও শেয়ার করা হলে সেটা যদি হাই রেজুলেশন হয় তাহলে খুব সহজেই সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবেন। তাই ইমেজ/ভিডিও সাইজ একটু বেশি হলেও হাই রেজুলেশনে পোর্টফোলিও তৈরি করুন।
আপডেটেড থাকুন সব সময়
প্রতি নিয়ত আপনার পোর্টফোলিও আপডেট করুন। কারণ সব কিছুর মত ডিজাইন সেক্টরেও ট্রেন্ড থাকে এবং নতুন ট্রেন্ড আসে। তাই আপনার পোর্টফোলিওতে ৩ বছরের অধিক আগের কাজগুলো যুক্ত করবেন না। বেশি পুরাতন কাজগুলো আপনার পোর্টফোলিও তে থাকলে মনে হবে আপনি আপডেটেড ডিজাইনার নন। প্রতি বছর নতুন সফটওয়্যার ভার্শন যেমন বের হয় তেমনি প্রতি বছর নতুন নতুন ডিজাইন ট্রেন্ড চালু হয়। তাই চারিদিকে চোখ কান খোলা রেখে ট্রেন্ড সম্পর্কে জানুন এবং নিজের পোর্টফোলিওতে ট্রেন্ডি কাজ রাখুন।
ডিজাইনে যেন ধারাবাহিক ফ্লো থাকে
আপনার সব লোগো ডিজাইন একসাথে কিংবা ওয়েব পেজ ডিজাইন এক সাথে রেখে পোর্টফোলিও সাজাতে হবে এমন নয়। বিভিন্নভাবে রঙ এবং কাজের ধরণ অনুযায়ী সাজাতে পারেন যেন ডিজাইনে ছন্দ থাকে। অনেক সময় পোর্টফোলিও এর জন্য কোন কোন ডিজাইনে অল্প বিস্তর এডিট করে ধারাবাহিকতা তৈরি করতে পারেন। এতে করে ভিজিটর কিংবা ক্লায়েন্টের চোখে অন্য রকম আরাম দিবে।
(এখানে আমাদের দেশের বিভিন্ন স্টুডিও এবং ডিজাইনারের পোর্টফোলিও শেয়ার করা হয়েছে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ডিজাইনারের কাজও শেয়ার করা হয়েছে। ক্যানভা.কম থেকে বিভিন্ন সোর্স এবং ব্লগ অনুসরণ করা হয়েছে)
শেষপর্ব পড়ুন এখানে…
Alin
20 ফেব্রুয়ারি, 2018 at11:45:32 অপরাহ্ন,
Thanks for this helpful tips.
হাসান যোবায়ের
21 ফেব্রুয়ারি, 2018 at02:11:03 পূর্বাহ্ন,
Most Welcome brother
Sheikh Shohag
29 অক্টোবর, 2022 at05:34:40 অপরাহ্ন,
Cleared many doubt and confusion.
Thanks a lot brother ❤️
হাসান যোবায়ের
29 অক্টোবর, 2022 at06:40:13 অপরাহ্ন,
Most welcome.