১৯৮৮ সালে যাত্রা শুরু হওয়া ফটোশপ আজ অনেক ডিজাইনারদের জন্য শুধুমাত্র এক ও অনন্য প্রোগ্রামে পরিণত হয়েছে। এটা মূলত নির্মিত হয়েছিল ফটোগ্রাফারদের ফটো এডিট, ফটো রিটাচ এর একটি হাতিয়ার হিসাবে এবং অনেক মানুষের জন্য এই সফ্টওয়ারটির প্রাথমিক ব্যবহার পর্যন্ত সীমাব্ধ রয়ে যায়। তবে টুলস্ এর সুবিশাল সমন্বয়ে ফটোশপের ব্যবহার আজ সুবৃস্তিত।
ইলাস্ট্রেটর এর যাত্রা শুরু হয় ফটোশপের চেয়ে একটু আগে ১৯৮৭ সালে এবং প্রাথমিকভাবে গ্রাফিক্স ডিজাইন, ছাপাখানার অক্ষরস্থাপন এবং লোগো ডিজাইন করার জন্য তৈরি করা হয় প্রোগ্রামটি। ইলাস্ট্রেটর এখন গ্রাফিক ডিজাইনার এবং ডিজিটাল আর্টিষ্ট উভয়ের বিভিন্ন ধরনের ডিজিটাল কাজ সম্পাদন করার জন্য একটি হাতিয়ার হিসেবে দেখা হয়। উভয় এখন অ্যাডোবির শক্তিশালী ক্রিয়েটিভ ক্লাউড স্যুট অংশ।
কিন্তু কোন নির্দিষ্ট কাজের জন্য কোনটি ভাল এবং সামগ্রিক কাজের জন্য কোনটি? একথাও ঠিক যে, উত্তর নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর নির্ভর করবে| কিন্তু এখানে আমি একটি বৃস্তিত কার্য পরিধি নিয়ে আলোচনা করব।যা আমি মনে করি, যে টুলস্টি যত সম্ভব যে কাজের জন্য পারফেক্ট হবে। যদি আপনার অভিজ্ঞতা আমার সাথে পার্থক্য তাহলে নিবন্ধটির শেষে আপনার মতামত, মন্তব্য করুন!
ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে তৈরী করা লোগো একটি ভেক্টর এর মানে হল আপনার লগোটি বিটম্যাপ। যখন উভয় প্রোগ্রামেই আপনি একটি লোগো তৈরি করতে পারবেন, তবে আপনাকে অবশ্যই লগোর ব্যবহার এবং মেইনটেইন এ্যাবিলিটি নিয়ে ভাবতে হবে। একটি লগোকে প্রয়োজন ভেদে বিভিন্ন সাইজে পরিবর্তন করতে হয় এবং বিভিন্ন ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করতে হয়।
দেখতে পারেন আমাদের লোগো ডিজাইন টিউটোরিয়াল ডিভিডি
ফটোশপে তৈরি করা গ্রাফিক একটি বিটম্যাপ যা পিক্সেল ক্ষয় ছাড়া মাপ পরিবর্তন করা যাবে না. অর্থাৎ এক্ষেত্রে ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে তৈরী করা লগোটি একটি ভেক্টর যা যত ইচ্ছা আপনি বড় করতে পারছেন কোন প্রকার পিক্সেল ক্ষয় ছাড়া। ফটোপশ লগো ডিজাইনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্লাটফর্ম, তবে বেশিভাগ ক্ষেত্রে ইলাস্ট্রেরই হবে আপনার প্রথম পছন্দ।
বিজয়ী: ইলাস্ট্রেটর
ওয়েব ডিজাইনের জন্য অনেক ডিজাইনারদের (আমি সহ) প্রথম পছন্দ ফটোশপ। ফটোশপ গ্রাফিক্স পিক্সেল ভিত্তিক বিটম্যাপ যা স্ক্রিণ মিডিয়ার ডিজাইনারদের একমাত্র পছন্দ।
যাইহোক, ইউজার ইন্টারফেস ডিজাইন করার সময় ইলাস্ট্রেটের এ অনেক ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যা ফটোশপে হয় না। প্রথমত, এখানে ইলাস্ট্রেটর ব্যবহারে কাজ অনেক দ্রুত হয় – যেহেতু রিসাইজিং একটি পয়েন্ট। ইলাস্ট্রেটর রিইউজেবল কম্পোনেন্ট এর জন্যও জয়প্রিয়। ইলাস্ট্রেটর সিম্বল প্যানেল ব্যবহার করে, আপনি আইকন এবং ফর্ম ইলিমেন্টস্ এর একটি লাইব্রেরি তৈরী করতে পারেন যা যে কোন কাজে যতবার ইচ্ছে ব্যবহার করতে পারেন। শুধুমাত্র তাই নয় এটি আপনার ওয়ার্কফ্লোকে করবে গতিশীল আর ডিজাইনকে করবে আরো সামঞ্জস্যপূর্ণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রে, ফটোশপই এখানে বিজয়ী, কিন্তু, আমি সম্পূর্ণরূপে ইলাস্ট্রেটরকে এক্ষেত্রে বাদ দিব না. অধিকাংশ সময়ই ইলাস্ট্রেটর UI ডিজাইন গুলির মধ্যে আমার ওয়ার্কফ্লোকে গতির সঞ্চার করে যদিও এটি একটি অংশ কিন্তু বেশিরভাগ কাজই ফটোশপে সম্পন্ন করা হয়।
বিজয়ী: ফটোশপ।
ইলাস্ট্রেটর পরিষ্কার, গ্রাফিক্যাল কনটেন্ট ইলাস্ট্রেশনের জন্য ভাল আর ফটোশপ ভাল ফটো বেইজড্ ইলাস্ট্রেশনের জন্য।এখানে ইলাস্ট্রেটর অনেক ডিজাইনারের কাছে অন্যতম পছন্দের আর তা নির্ভর করে ইলাস্ট্রেশনের ভিন্নতার উপর। ইলাস্ট্রেশনের শুরুটা হয় মূলত কাগজে। পরে স্ক্যান করে ডিজাইনার তার পছন্দের গ্রাফিক্স সফ্টওয়্যারে নিয়ে আসেন রং করার জন্য। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, ইলাস্ট্রেটর দিয়ে আমরা পরিষ্কার, এক্সটেন্ডেবল গ্রাফিক্স তৈরী করতে পারি, যা অনেক সহজে পুনঃব্যবহৃত ইলিমেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করা যেতে পারে। ইলাস্ট্রেটর আমার রিকমেন্ডেশন হবে পরিস্কার গ্রাফিক্যাল ইলাস্ট্রেশন সফ্টওয়্যার হিসেবে।
বিজয়ী: ড্র
ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে দ্রুত ওয়্যারফ্রেম তৈরি করা অনেক সহজ। এটা অনেকটাই প্রায় কঙ্কালের মত যা কোন ডিজাইনের অভ্যন্তরীণ কাঠামো। ঠিক এই কাঠামো থেকেই ডিজাইনের বাকি স্তর গুলো ধাপে ধাপে সম্পন্ন হয়। সাধারণত, একটি কলম ও কাগজ সবার কাজের আদ্যস্থল, কিন্তু বর্তমানের আধুনিক ক্রিয়েটিভ ডিজানাররা কাজের সূচনা বা ওয়্যারফ্রেম শুরু করেন ইলাস্ট্রেটরে। হয়ত আপনি অন্য কোন প্রোগ্রামে খুব ভাল ভাবেই এ কাজটি করতে পারেন। কিন্তু এই কাজের জন্য ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করা অনেক দ্রুততর এবং সহজ। সহজে নিপূণভাবে দ্রুত মাপ পরিবর্তন এবং পুনরায় ব্যবহার উপযোগী ইলিমেন্টস্ তৈরী করার ক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যখন ওয়্যারফ্রেমস্ তৈরি করা হয়।
বিজয়ী: ইলাস্ট্রেটর
প্রকৃতপক্ষে এখানে কেও বিজয়ী নয়! যদিও আমি রূপক অর্থে দুই প্রোগ্রামের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতামূলক যুদ্ধ তৈরি করতে চেষ্টা করেছি মাত্র, সত্যিকার অর্থে বিজয় নির্ভর করছে আপনি কি ধরণের কাজ করতে চাচ্ছেন, আর কাজটি কিভাবে করতে চাচ্ছেন তার উপর। ফটোশপ এবং ইলাস্ট্রেটর উভয় এর অভ্যন্তরীণ মর্ম বোঝাই হচ্ছে ডিজাইনারদের জন্য সবচেয়ে অপরিহার্য, যদিও কিনা আপনি একজন ওয়েব ডিজাইনার, গ্রাফিক ডিজাইনার, ফ্যাশন ডিজাইনার, অঙ্কনশিল্পী বা ডিজিটাল ক্রিয়েটিভ বা অন্য কোনো ধরনের ডিজাইনার হোন। এসব প্রোগ্রাম গুলো যদি আপনার ভালোভাবে জানা থাকে, তবে আপনি নিশ্চিত হতে পারেন যে কোন কাজের জন্য কোন প্রোগ্রামটি সবচেয়ে ভাল হবে এবং কিভাবে একটি কাজের সর্বোচ্চ ভালো আউটপোট পাওয়া যাবে তা আপনি চিহ্নিত করতে পারবেন পেশাদারিত্বের সাথে। অনেক ডিজাইনারদের অনেক প্রোগ্রামের প্রেফারেন্স থাকে যা নিয়ে তার কাজ করতে পছন্দ করে। কিন্তু তা দিয়ে হয়ত কাজের সর্বোচ্চ আউটপুট সম্ভব হয় না। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবে আপনাকে অবশ্যই উভয় প্রোগ্রাম ভালভাবে জানতে হবে। আজ এ পর্যন্তই, আমি সুলতান মাহমুদ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। অবশ্যই আপনার পরামর্শ /মতামত জানাবেন। হয়ত আবার হাজির হব অন্য আরেক টপিক নিয়ে, ভাল থাকুন, প্রযুক্তি টিমের সাথে থাকুন। শুভ কামনা রইল।
কী ইনফুঃ
গ্রাফিক্স: রেস্টার
বর্তমান ভার্সনঃ ফটোশপ সিসি ২০১৭
জনপ্রিয় টুলস্ঃ ব্রাশ, হিলিং, টাইপ, ক্লোন ষ্ট্যাম্প, ব্লার, ইমেজ এডজাস্টমেন্ট এবং ফিল্টারর্স।
ব্যবহারকারীঃ ডিজাইনার, আর্টিষ্ট, ফটোগ্রাফার, ফিল্ম এন্ড ভিডিও প্রফেশনালস্, শিল্পি।
বর্তমান ভার্সনঃ ইলাস্ট্রেটর সিসি ২০১৭
জনপ্রিয় টুলস্ঃ পেন, ব্লেন্ড, ওয়ার্প, মেশ, টাইপ, পাথ ফাইন্ডার এবং মাস্ক।
ব্যবহারকারীঃ ডিজাইনার, আর্টিষ্ট, শিল্পি, এ্যানিমেটর, প্রকাশক, ফিল্ম এন্ড ভিডিও প্রফেশনালস্।
foyez
1 ফেব্রুয়ারি, 2017 at05:47:07 অপরাহ্ন,
বেশ পুরনো এই লেখাটার সোর্স লিংক যোগ করে দিতে পারতেন
sirazul islam
9 সেপ্টেম্বর, 2017 at04:55:15 অপরাহ্ন,
দেখে দেখে যে কোন কাজ হুবুহু করতে পারি, নিজে থেকে খুব সুন্দর করে ডিজাইন করতে পারিনা। যদিও করি নিজের কাছেই পছন্দ হইনা। তাই আপনাদের সাহায্য চাইছি।