বর্তমান যুগ বিশ্বায়নের যুগ। এই বিশ্বায়নের যুগে অনেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। আর প্রতিটা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি লাভের সবচেয়ে মোক্ষম অস্ত্র হচ্ছে একটি সুন্দর বিজনেস ফ্লায়ার। মূলতঃ একটি আকর্ষণীয় বিজনেস ফ্লায়ারের মাধ্যমে অতি সহজেই পণ্য গ্রাহকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব। আর সেজন্য একজন গ্রাফিক ডিজাইনারকে খুব সতর্কতার সাথে গ্রাহকের চাহিদা, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মূল লক্ষ্য সকল কিছু খেয়াল রাখা খুব জরুরি।
সাধারণত কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের ইভেন্ট বা পণ্যের প্রচারণার লক্ষ্যে ফ্লায়ার তৈরি করা হয়। এক্ষেত্রে ডিজাইনারকে কিছু বিষয় খুব সতর্কতার সাথে গুরুত্ব দেয়া উচিত। যদিও সেজন্য তাকে খুব আহামরি সৌন্দর্যবোধ ও রুচিসম্পন্ন ব্যক্তি হতে হবে না! শুধু পণ্যের গ্রাহকের চাহিদা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে মেলবন্ধন ঘটাতে পারলেই একটি আকর্ষণীয় বিজনেস ফ্লায়ার তৈরি করা সম্ভব।
১। মূল তথ্য উপস্থাপনঃ
একটি ফ্লায়ার ডিজাইনের শুরুতেই ডিজাইনারকে খেয়াল রাখতে হবে তিনি কোন ধরণের প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছেন। ধরা যাক তিনি একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানির একটি বাৎসরিক ইভেন্টের জন্য ফ্লায়ার তৈরি করবেন। এজন্য তাকে অবশ্যই সেই ইভেন্টের মূল বিষয়গুলো অতি সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে। কেউই কখনো ফ্লায়ারের পুরো লেখা পড়ে দেখে না। এজন্য মূল বিষয়গুলো খুব সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হয় যাতে সেটা গ্রাহকের সহজেই দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়। স্থান ও সময়সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বোল্ড করে আকর্ষণীয় ফন্টে উপস্থাপন করতে হবে। আর্জেন্ট, পন্টিয়াক, ভেনিস সেরিফ, র্যাভেনসারা, ফুল সানস, ফিলসন সফট, হিলটন সেরিফ প্রভৃতি ফ্লেয়ার ও ব্রসিউর ডিজাইনের জন্য খুব জনপ্রিয় ফন্ট।
২। সাধারণের মধ্যে অসাধারণঃ
জটিল এবং দুর্বোধ্য ডিজাইন কখনোই কারো দৃষ্টি কাড়ে না। বরং অতি সাধারণ ডিজাইন করেও অসংখ্য গ্রাহকের আকর্ষণ লাভ করা সম্ভব। তাই দক্ষতা, মননশীলতা, সৌন্দর্যবোধ দিয়ে অতি সাধারণ কিন্তু অপূর্ব সব ডিজাইন করা যায়। কালার কম্বিনেশন, ব্যাকগ্রাউন্ড ইমেজ ও টেক্সটের ভেতর নতুনত্ব রাখলে সেই ফ্লায়ার আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠে। পিক্সাবে, পিক্সেলস, আনস্প্ল্যাস প্রভৃতি সাইট ফ্রি স্টক ইমেজের জন্য বিখ্যাত।
৩। কালার সেন্সঃ
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের লোগোর কালারের সাথে সামঞ্জস্যতা রেখে ফ্লায়ারের ডিজাইন করাটা সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ। এক্ষেত্রে একটি যথাযথ কালার স্কিম বজায় রেখে পুরো ফ্লায়ারের ডিজাইন করা উচিত। এতে করে প্রতিষ্ঠানের স্বকীয়তা বজায় থাকে এবং পাশাপাশি ইভেন্টের প্রচারণাতেও বেশ কাজে দেয়।
৪। ছবি নির্বাচনঃ
নতুন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোর মূল উদ্দেশ্যই থাকে তাদের পণ্য প্রচারণার স্বার্থে নতুন গ্রাহকদের সাথে একটি নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করা। এজন্য ফ্লায়ারে একটি হাস্যজ্জ্বল বন্ধুসুলভ মুখ অনেক গ্রাহক টানতে সক্ষম। কোনো গ্রাহক প্রথম দৃষ্টিতেই সেই ফ্লায়ারে থাকা হাস্যজ্জ্বল মুখের সাথে সেই প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সকল কর্মীদের তুলনা করবে। কারণ যেকোনো ফ্লায়ারে থাকা ব্যক্তিত্ত্বটি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের অন্যান্য সকল কর্মীদের প্রতিনিধিত্ব করে। তাই এধরণের ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি।
৫। বিভিন্ন শেপ ব্যবহার করাঃ
একটি ফ্লায়ারে অসংখ্য ছবি থাকতে পারে। আর সাথে থাকতে পারে সেই তথ্যও। এই সকল তথ্য ও ছবি আলাদা আলাদা করে উপস্থাপন করতে বিভিন্ন ধরণের শেপ ব্যবহার করা যেতে পারে। এই বিভিন্ন ধরণের শেপ ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্যগুলো সুচারুভাবে আলাদা আলাদা করে উপস্থাপন করা সহজতর হয়ে উঠে। আর ফ্লায়ারও হয়ে উঠে আকর্ষণীয়।
৬। যোগাযোগ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হাইলাইট রাখাঃ
ফ্লায়ারে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ নম্বার, ওয়েবসাইটের ঠিকানা, মেইল অ্যাড্রেস, ইভেন্টের স্থান, সময় প্রভৃতি বিষয়গুলো হাইলাইটেড রাখা উচিত। এতে করে একদিক থেকে গ্রাহক যেমন তার কাঙ্খিত সকল তথ্য পেতে সক্ষম হয় তেমন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানও তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে পারে। ডিজাইনারকে তাই এসব বিষয় বোল্ড কালার ও পর্যাপ্ত পরিসর জুড়ে রাখতে হয়।
৭। বিভিন্ন প্যাটার্ন নিয়ে কাজ করাঃ
বিভিন্ন ধরণের প্যাটার্ন সহজেই যেকোনো বিষয়কে বেশি ফুটিয়ে তুলে। কোনো একটি ফ্লায়ার ডিজাইনের ক্ষেত্রে ডিজাইনারকে এই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হয়। বিভিন্ন ধরণের প্যাটার্ন ব্যবহারের মাধ্যমে একই ফ্লায়ারে বিভিন্ন বিষয় ফুটিয়ে তোলা সম্ভব।
৮। প্রাসঙ্গিক ডিজাইন অনুযায়ী কাজ করাঃ
ফ্লায়ার ডিজাইনের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো খেয়াল রাখা উচিত। এজন্য ইভেন্টের ধরণ, প্রতিষ্ঠানের অবস্থান, মানুষের চাহিদা প্রভৃতি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ। ধরা যাক কোনো ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্টের কোনো ইভেন্টের ফ্লেয়ার তৈরির ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক রঙ কিংবা বিষয়বস্তুগুলোকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। যেমনঃ কর্পোরেট লেভেলের কোনো পণ্যের প্রচারণার কাজে ব্যবহৃত ফ্লায়ারের ডিজাইন অনুসরণ করা ঠিক হবে না।
৯। প্রাইমারি কালারের যথাযথ ব্যবহারঃ
তিনটি প্রাইমারি কালার লাল, হলুদ ও নীলের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি অনন্যসাধারণ ডিজাইন করা সম্ভব। অন্যান্য কমপ্লেক্স কালার ব্যবহারের তুলনায় এই প্রাইমারি কালারগুলো বিভিন্ন ডিজাইনকে বেশি ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম।
১০। সৃজনশীল চিন্তাচেতনা ও দক্ষতা বাড়ানোঃ
বর্তমান সময়ে অসংখ্য ডিজাইন প্যাটার্ন ফলো করা হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রফেশনাল ডিজাইনাররা গতানুগতিক ডিজাইনগুলো অনুসরণ করেন অথবা আগের বিখ্যাত ডিজাইনগুলো থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আরেকটি ডিজাইন দাঁড় করান। কিন্তু কেউ যদি এই গতানুগতিক চিন্তাভাবনা পেছনে ফেলে সম্পূর্ণ তার নিজের সৃজনশীলতাকে কাজে লাগান তবে নিশ্চয়ই তা ভালো কোনো ট্রেন্ডের জন্ম দিবে।
১১। ফ্রেম ব্যবহার করাঃ
ফ্লায়ারে ফ্রেম ব্যবহারের মাধ্যমে মূল বিষয়গুলো সহজেই গ্রাহকের দৃষ্টি আকর্ষণ করা সম্ভব। গোলাকার, চারকোণা বা ত্রিকোণাকার ফ্রেম ব্যবহার করে মূল বিষয়গুলো আবদ্ধ করে ফ্লায়ারকে আরও আকর্ষণীয় করা সম্ভব।
১২। হাই রেজুলেশনের ইমেজ ব্যবহার করাঃ
ফ্লায়ার ডিজাইনে অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ধরণের ইমেজ ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে সবসময় খেয়াল রাখতে হবে সেই ইমেজ যেন হাই রেজুলেশনের হয়। কেননা ফ্লায়ার প্রিন্টআউট করার পর সেই ফ্লেয়ারে ব্যবহৃত ইমেজটি যদি কম রেজুলেশন সম্পন্ন হয় তবে তা ঘোলাটে দেখা যাবে। এজন্য প্রতিবার ইমেজ সিলেকশনের সময় সেটা যাতে হাই রেজুলেশনসম্পন্ন হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, একটি ফ্লায়ার একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি অন্যতম অংশ। কাজ শেষে একটি ফ্লায়ারের ঠিকানা হয়তো ট্র্যাশ হতে পারে। কিন্তু একটি সুন্দর ও মানসম্পন্ন নকশার ফ্লায়ার ক্লায়েন্টের ঘরে বা অফিসের ডেস্কে শোভাবর্ধক হিসেবেও থাকতে পারে!
তথ্যসূত্রঃ
https://design.tutsplus.com/categories/flyers
https://www.canva.com/learn/50-brilliant-flyer-designs/
Shakil
16 মার্চ, 2018 at09:16:34 অপরাহ্ন,
Can you Provide those Font Download link that you have mention in your Post
tahsin
25 সেপ্টেম্বর, 2018 at09:31:37 অপরাহ্ন,
অসাধারণ ভাই।
অনেক অনেক ধন্য়বাদ