অনেকেই হয়ত ফাইভারে ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় ভুগছেন। অনেক চেষ্টা করছেন কিন্তু আশানরূপ ফল পাচ্ছেন না? একের পর এক গিগ বানিয়ে যাচ্ছেন, মার্কেটিং করে যাচ্ছেন কিন্তু হচ্ছে না? ইনশা আল্লাহ এবার অবশই কাজ হবে। ফাইভার এ সফল হওয়ার জন্য আজ আমি আপনাদের কাছে ১০ টি টিপস্ এন্ড ট্রিকস্ নিয়ে আসলাম। ভালভাবে বুঝুন, সিদ্ধান্ত নিন আর অধ্যবসায়ের সাথে কাজে নেমে যান। টিপস্ গুলো কাজে লাগানোর আগে অবশ্যই আপনাকে একটি বিষয় নিশ্চিত হবে যে আপনি যে বিষয়ে কাজ করতে যাচ্ছেন সে বিষয়ে কতটা যোগ্যতা রয়েছে আপনার। আপনি যদি গ্রাফিক্স ডিজাইন/ওয়েব ডেভেলপ/এসইউ/ প্রফেশনাল ভিডিও এডিট/এনিমেশন বা যে ট্রেক ই কাজ করতে চান না কেন, সে বিষয়ে আপনাকে অবশ্যই পেশাদার হতে হবে। আর প্রযুক্তি টিম সব সময় আপনাদের পাশে আছে পেশাদারিত্ব কে আর এক ধাপ এগিয়ে নিতে। চলুন যেনে নেই কি আছে সেই ১০ টিপস্ এন্ড ট্রিকস্ এ?
ফাইভারে আছে প্রচুর গিগ, এবং কনসেপ্টের অনেক রকম ভেরিয়েশন। যেমন, আপনি যদি ইউটিউব ভিডিওর ইন্ট্রো তৈরি করতে চান, ফাইভারে খুঁজুন, এমন কাজ ডজন ডজন পাবেন। বেশিরভাগই কিছু বেসিক টেমপ্লেটের মাধ্যমে ভিডিওতে লোগো সংযোজন করতে হবে। আপনি যদি দ্বিতীয় লেভেলের কাজ করতে চান সেক্ষেত্রে আপনাকে স্বতন্ত্র কিছু করতে হবে। আপনি নিজস্ব টেমপ্লেট তৈরি করতে পারেন অথবা, ইন্ট্রো ভিডিওতে বাড়তি কাস্টমাইজেশন সুবিধা যোগ করতে পারেন।
(গিগ সম্পর্কে একটু বলে নিচ্ছি, গিগ হলো আপনার অফার করা কোন সার্ভিসের নাম। প্রাথমিক ভাবে ফাইবার আপনার গিগটি $৫ ডলারে বিক্রি করবে বায়ারের কাছে এবং তাদের দেওয়া শর্ত অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে আপনাকে গিগটি সম্পন্ন করতে হবে।)
ফাইভারে মূলত ৫ ডলার থেকে গিগ শুরু হয়, বাড়তি সার্ভিস অফারের মাধ্যমে বা অপসেলের অফারের মাধ্যমে অতিরিক্ত আয় করতে পারেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রের এই আপসেল গুলো আপনার বিনিয়োগকে লাভ রূপে ফিরিয়ে দিবে। যাই হোক, আপনার আপসেল গুলোর কোয়ালিটি টপ ক্লাস না হলেও চলবে। কাস্টমারকে ইমপ্রেস করার জন্য আপনাকে বেইস গিগের উপর বেশি গুরুত্ব দিতে হবে যাতে করে কাস্টমাররা আপনার আপসেলের পিছনে টাকা খরচ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
গিগে যথাসম্ভব বেশি কন্টেন্ট রাখুন যাতে এক নজর দেখে এর দাম ৫ ডলারের চেয়ে বেশি মনে হয়। অনেকেই গিগের সাথে আপসেল কিনতে আগ্রহী হবে, কেননা তাদের মনে হবে তারা তুলনা মূলক কম দামে ভাল কিছু পাচ্ছেন। অবশ্যই এই কাজের পিছনে আপনি যে সময় ব্যয় করবেন তার মূল্য যেন ৫ ডলারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ থাকে।
ফাইভারের আপসেল থেকে লোকজন প্রচুর আয় করে থাকেন। যদিও সাইটটি ৫ ডলার মূল্যের কার্যসম্পাদনার উপর ভিত্তিকরে নির্মিত। কিন্তু মূল কাজের সাথে আপসেল সংযুক্ত করে আপনি আয়ের এই সংখ্যাটিকে ৩০ বা ৫০ ডলারে উন্নীত করতে পারেন। আপসেল মূলত একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর গ্রাহকের চাহিদার উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়। এটি সচরাচর ব্যবহৃত কোন এড-অনস নয়।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, ফাইভার আপনার অপসেলকে যে কোন মুহূর্তে কাস্টমাইজ করার সুবিধা দিবে। আপনি চাইলেই এটিকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারেন সেই সাথে এর মূল্যও। তাই আপনি যদি এমন একটি আপসেল খুঁজে পান যেটি কিনা খুবই কার্যকরী কিন্তু মূল্য অনেক বেশি, আপনি সেটিকে পরিবর্তন করতে পারেন অথবা অপ্রয়োজনী আপসেল বাদ দিয়ে অন্যগুলি টেস্ট করে দেখতে পারেন। এটিই এখানকার মূল মন্ত্র; পরখ করে দেখার অফুরন্ত সুযোগ, নতুন আইডিয়া বাস্তবায়ন করে দেখুন, সেই সাথে যাচাই করুন সেগুলি এড-অনস হিসাবে কত ভালভাবে সেল হয়, যদি ভাল বলে প্রমাণিত হয়, তাহলে সেগুলিকে নতুন আরেকটি গিগে রূপান্তর করুন।
যে কোন সাইটে যেখানে বায়ারদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য সেলাররা একে অপরের সাথে প্রতিযোগিতা করেন, সেখানে ফিডব্যাক হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। একই সার্ভিসের দুইজন সেলার, একজনের পজেটিভ ফিডব্যাক ৭০% এবং অন্যজনের ৯৫%, তাহলে সেলের দিক থেকে দ্বিতীয় জনই এগিয়ে থাকবে। এর মধ্যে স্নোবল এফেক্ট বিদ্যমান, কারণ সেলের পরিমান যত বাড়াতে পারবেন, পজিটিভ ফিডব্যাকও তত বেশি পাবেন।
পজিটিভ ফিডব্যাক চাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর জোর করবেন না। ফাইভার ফিডব্যাক শুধু আঙ্গুল চেপে পছন্দ বা অপছন্দ করার বিষয়। আপনি চাইলেও সুন্দর রিভিউ পাবেন না, কারণ সেই সুবিধাটি এখন আর চালু নেই।
মানি-ব্যাক গ্যারেন্টি প্রদানের মানে হল, ব্যবহারকারী সন্তুষ্ট না হলে আপনি তাকে লেনদেন বাতিলের সুযোগ প্রদান করছেন। ব্যবহারকারীকে তখন আর মূল্য পরিশোধ করতে হবে না। যখনই লেনদেন বাতিল করা হবে, সঙ্গে সঙ্গে তাদের নেগেটিভ ফিডব্যাকও মুছে যাবে।
এর ফলে দুইটি সমস্যা তৈরি হতে পারে। প্রথমত, কিছু ইন্ডাস্ট্রির কাছে আপনার প্রিভিউ করা নমুনা প্রোডাক্টটিই যথেষ্ট। কেউ হয়ত প্রিভিউটি নিয়ে এর অপব্যবহার করে নিজের বলে চালিয়ে দিয়ে লেনদেন বাতিল করতে পারে। এটি হল চুরি যা সম্পূর্ণ অবৈধ, কেবল পাঁচ ডলারের জন্য আপনি হয়ত আইনত ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।
আরেকটি সমস্যা হল এই বাতিলের রেকর্ড আপনার একাউন্টে থেকে যাবে। ১০০% পজেটিভ ফিডব্যাকও পর্যাপ্ত হবে না যদি একই সাথে আপনার একাউন্টে ৭৫% লেনদেন বাতিলের রেকর্ড থাকে। যার মনে দাঁড়ায় হয় আপনি কাজ করতে পারেন না অথবা কাস্টমারেরা আপনার কাজে সন্তুষ্ট নয় এবং উচ্চ রেটিংয়ের জন্য লেনদেন বাতিলের ঘটনা ঘটেছে। কাস্টমারদের বোকা বানাতে যাবেন না, তাহলে নিজেই ধরা খাবেন।
গিগের টাইটেল যত ছোট হবে সেটা বুঝতে তত সহজ হবে, যার দরুন বিক্রিও হবে তত দ্রুত। এই কাজটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ফাইভার সাজানো গোছানোর গুছানো ব্যাপারে ভীষণ সচেতন একটি সাইট। গিগ সাধারণত মূল পাতায় প্রদর্শিত হয়। আপনি চাইলেই বিস্তারিত গিগ প্রদর্শনের জন্য ইচ্ছে মত জায়গা পাবেন না। আপনাকে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্যারেক্টারের ভিতরে লিখে শেষ করতে হবে। দুইটি উপায়ে আপনি আপনার টাইটেলটিকে ছোট করতে পারেন। প্রথমত, এসইও-র কিওয়ার্ড গুলির দিকে মনোযোগ দিন। মানুষ কোন ওয়ার্ডগুলি দিয়ে সার্চ করে? আপনার টাইটেলটি যদি ততভাগ সঠিক নাও হয়, জনপ্রিয় কিওয়ার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার ট্রাফিক বাড়াতে পারেন।
দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন ভেরিয়েশন নিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন। যেমনটি বলেছি, আপনার গিগের খুঁটিনাটি সব বিষয় পরিবর্তন করতে পারেন, যত খুশি ইচ্ছামত আপনার গিগের টাইটেল পরিবর্তন করে টেস্ট করতে পারবেন। কেবল মাথায় রাখুন যে শব্দ সমূহ আপনি নির্বাচন করছেন সেগুলি যেন মানুষ প্রায়ই সার্চ করে। যার মানে হল আপনি সম্পূর্ণ ভিন্ন কিছুর মাধ্যমে মানুষকে আকৃষ্ট করছেন।
দুর্ভাগ্যবশত, ফাইভার আপনার বর্ণনাকে ১২০০ ক্যারেক্টারের ভিতরে সীমিত করে দিয়েছে। সত্যি বলতে, এটা অনেক কম জায়গা। বিষয়টা নির্ভর করে আপনি শব্দ চয়নে কতটা সচেতন। আপনি সর্বোচ্চ ২০০-২৫০টি শব্দ লিখতে পারবেন। এর ভিতরেই আপনাকে প্রয়োজনীয় সব কিছু লিখে শেষ করতে হবে। বলতে গেলে, এটি অন্যান্য ওয়েব লেখার প্রায় বিপরীত। আঙ্গিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য আপনি চাইলে আপনার বিষয়গুলোকে বিভিন্ন ফরম্যাটে ভাগ করে লিখতে পারেন।
The comments are closed.
সকল মন্তব্য (0)